তরুণদের বেকারত্ব ঘোচাবে ‘ওয়ান আওয়ার স্টাডি’

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সাত তরুণ মিলে প্রতিষ্ঠা করেছে ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ‘ওয়ান আওয়ার স্টাডি’
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সাত তরুণ মিলে প্রতিষ্ঠা করেছে ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ‘ওয়ান আওয়ার স্টাডি’  © টিডিসি ফটো

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তরুণদের কাছে এখন বেশ পরিচিত নাম ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ‘ওয়ান আওয়ার স্টাডি’। প্রতিযোগিতার বর্তমান যুগে পছন্দের ক্যারিয়ার পেতে যোগ্যপ্রার্থী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। তবে সেই কাজটি সহজ করার জন্যই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সাত তরুণ মিলে প্রতিষ্ঠা করেছে ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ‘ওয়ান আওয়ার স্টাডি’।

পছন্দের ক্যারিয়ারের পথকে আরো সমৃদ্ধ করতে এই প্ল্যাটফর্মে প্রতিদিন হাজার হাজার তরুণ বিনামূল্যে শিখছে স্কিল ডেভেলপমেন্টের কাজ৷ প্ল্যাটফর্মটি প্রতিষ্ঠার পেছনের গল্পটাও একটু ভিন্নধর্মী।

চা খেতে খেতে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সাত তরুণের আড্ডা, অতঃপর চিন্তা– 'কিভাবে আমরা তরুণদের বেকার সমস্যা রোধে অবদান রাখতে পারি? করোনা মহামারি ও লকডাউনের ফলে হাজার মানুষ যখন চাকরি হারিয়ে বিপাকে, সেইসাথে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধে তরুণরা যখন চরম হতাশা ও বিপথগামীতার পথে তখন অনেকেই ঘরে বসে কিছু করার চেষ্টা করে। জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ফ্রিল্যান্সিং। করোনাকালে ফ্রিল্যান্সিংয়ে বেশ আগ্রহী হয়ে ওঠে তরুণরা। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান কোর্স বিক্রি করে প্রতারণা শুরু করে।

করোনার এই দুঃসময়ে নিরুপায় মানুষজন নিজের জমানো টাকা বা বাবার কষ্টের টাকা প্রতারকদের হাতে তুলে দিচ্ছে ঠিকই কিন্তু বিনিময়ে ভাল কিছুই শিখতে পারে না। এমন চিন্তা থেকেই তরুণদের স্বপ্নের ক্যারিয়ারকে আরো মজবুত করতে স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেবা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠা হয় 'ওয়ান আওয়ার স্টাডি' নামক ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম।

প্ল্যাটফর্মটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নাজমুল হোসেন শান্ত বলেন, আমাদের টিমের সাতজনই একসময় বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করেছি। দেখলাম, আমাদের সবার মাঝেই ভিন্ন ভিন্ন দক্ষতা রয়েছে। আর এই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে যে কেউ তাদের ক্যারিয়ারের জন্য ভালো কিছু করতে পারবে। আমাদের মধ্যে যেমন অভিজ্ঞ গ্রাফিক্স ডিজাইনার আছে, আবার ওয়েব ডেভেলোপারও আছে, ভিডিও এডিটর এবং ডিজিটাল মার্কেটার ও রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে একটা কোর্স শুরু করি। অবিশ্বাস্যভাবে প্রথম কোর্স থেকেই আমরা অনেক কিছু অর্জন করি। তরুণদের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া মেলে। আমরা অনন্য মাত্রায় অনুপ্রাণিত হয়। এর পর থেকে আর থেমে যায়নি আমাদের যাত্রা। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে ১০টি কোর্স সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করেছে (1hourstudy.com) প্ল্যাটফর্মটি।

প্রতিদিনই বাড়ছে লার্নারের সংখ্যা। প্রতিষ্ঠার মাত্র কয়েকমাসের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার লার্নার প্ল্যাটফর্মের বিভিন্ন কোর্সের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। বিনামূল্যে দেওয়া এসব কোর্স করে শিক্ষার্থীরাও পাচ্ছে অদম্য সহযোগিতা ও অভাবনীয় সাফল্য। শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন বিভিন্ন কোর্স নিয়ে আসছে প্ল্যাটফর্মটি। প্রতিটি কোর্স শেষে বিশেষ আগ্রহীরা লাইভ প্রোজেক্টে কাজ করারও সুযোগ পায়।

ইতোমধ্যে প্রায় ২০ হাজার মানুষকে লাইভ ক্লাসের মাধ্যমে বিভিন্ন কোর্স করিয়েছে প্ল্যাটফর্মটি। বর্তমানে এদের মধ্যে অনেকেই ভাল করছে বিদেশি মার্কেটপ্লেস এবং দেশের মার্কেটে। আধুনিকায়নের যুগে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে আয় করতে আরো বেশি তরুণদের স্কিল ডেভেলপমেন্টের আওতায় আনতে দেশের ৬৪ জেলা ও সাতটি দেশের এম্বাসেডর নিয়ে কাজ করছে প্ল্যাটফর্মটি।

এছাড়া প্ল্যাটফর্মটির ওয়েবাসাইট, ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ, ইউটিউব চ্যানেল সহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রতিনিয়ত শিখছে তরুণরা। বেকার তরুণদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে বেকারমুক্ত যুবসমাজ গড়তে আগামী ছয় মাসের মধ্যে একহাজার মানুষকে অনলাইনে আয় করতে দক্ষ করে গড়ে তোলার লক্ষ্য ও দেশের উন্নয়নের জন্য রেমিটেন্স আনতে কাজ করে যাচ্ছে প্ল্যাটফর্মটি।


সর্বশেষ সংবাদ