শিক্ষার্থীদের চোখে আগামীর শিক্ষাভাবনা

অনলাইন আলোচনায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাভাবনা
অনলাইন আলোচনায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাভাবনা  © টিডিসি ফটো

প্রতিনিয়তই বদলাচ্ছে প্রযুক্তি। সময়ের সাথে সাথেই বদলে যাচ্ছে শিক্ষা-ভাবনাও। শিক্ষাকে সুন্দর করে সাজাতে ভাবতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ভাবনাগুলো নিয়েও। আগামীতে শ্রেণিকক্ষে কিংবা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কেমন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা দেখতে চায়? শিক্ষানীতি কেমন হওয়া উচিত? এই ভাবনাগুলো নিয়েই গতকাল অনলাইনে একটি আন্তর্জাতিক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ইংল্যান্ডের সেন্ডস স্কুল ও বাংলাদেশের আলোকিত টিচার্স এর যৌথ আয়োজনে আলোচনার বিষয় ছিলো ‘শিক্ষার্থীদের চোখে আগামীর শিক্ষাভাবনা’। এতে উঠে এসেছে শিক্ষা-শিক্ষক-শিক্ষার্থী নিয়ে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা।

শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে কেমন শিক্ষক দেখতে চায়? এই প্রশ্নটি নিয়েই আলোচনা পর্বটি শুরু হয়। আলোচনায় অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের দেয়া মতামতগুলোকে সন্নিবেশ করা হয়েছে এখানে।

শিক্ষকের ধৈর্য ও উৎসাহ: আলোচনায় অংশ নিয়ে চট্রগ্রাম গ্রামার স্কুলের গ্রেট-১১ এর শিক্ষার্থী সুমাইয়া বিনতে ইমাদ বলেন, ‘আমরা শিক্ষকদের মাঝে প্রচুর ধৈর্য্য দেখতে চাই। শিক্ষকরা নিজেরা উৎসাহী থাকবেন এবং এই পেশায় আসার জন্য সবাইকে উৎসাহ দিবেন। এটাই প্রতাশা।’

আন্তরিক ও পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবেশ: শ্রেণিকক্ষ হবে খুবই আন্তরিক ও পারস্পরিক সহযোগিতার। শিক্ষাদান-শিখন পরিবেশ হবে খুবই আন্তঃসক্রিয় যোগাযোগমূলক। এখানে সবাই সমান। শিক্ষার্থীরা ও শিক্ষক উভয়ই থাকবেন শেখার জন্য উদগ্রিব।

গবেষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহ দেওয়া: শিক্ষকরা শিক্ষার্থী, শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে সার্বক্ষণিক গবেষণা করবেন। গবেষণার ফলাফল নিয়ে আলোচনা করবেন। আলোচনায় অংশ নিবেন শিক্ষার্থী অভিভাবক ও শিক্ষাভাবনার মানুষ। আরো কিভাবে ভালো করা যায় সেই নিয়েও গবেষণা করা যায়। শুধু নিজেরা না শিক্ষার্থীদেরও গবেষণা করার জন্য উৎসাহ দিবেন শিক্ষকেরা।

এডিএইচডি এর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া: এটেনশন ডিফিস্যান্সি/হাইপারেক্টিভ ডিসর্ডার (এডিএইচডি) বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছু শিক্ষার্থী সব বিষয়ে সমানভাবে মনোযোগ দেয় না। আবার কিছু শিক্ষার্থী কিছু কিছু বিষয়ে অতি মনোযোগী থাকে। এই ধরনের শিক্ষার্থীদের কিভাবে সেরা শিক্ষা দেওয়া যায় সেই বিষয় নিয়ে জানতে হবে সব শিক্ষকদের। এই বিষয়টি আলোচনায় তুলে ধরেন উচ্চ মাধ্যমিকে শেষ করা শিক্ষার্থী রাইসা খান।

উচ্চশিক্ষার আবেদনে গাইডলাইন দেওয়া: সাধারণত মাধ্যমিক শেষ করার পর অথবা উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার পর আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছে পরবর্তী শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সঠিক দিক-নির্দেশনা পান না । তাই শিক্ষকেরা এই বিষয়ে আরো বেশি জানতে হবে।

শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি হোক সার্বজনীন: শ্রেণিতে সবাই সমানভাবে ভালো করেন না। কারো কারো কাছে হয়তো পড়াশোনা আনন্দদায়ক মনে হয় না। ফলে শিক্ষককেরা সবার প্রতিই সমান দৃষ্টি দিলে শিক্ষার পরিবেশ সার্বজনীন হয়।

পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়- যদি শিক্ষার্থীদের শিক্ষানীতি পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া হয়, তাঁরা কি কি নতুন বিষয় যুক্ত করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সকল শিক্ষার্থীরাই যে বিষয়গুলো খুব গুরুত্ব দিয়ে তোলে ধরেছেন তা হল: সেক্স এডুকেশন, সকল বিষয়ই সমান গুরুত্ব দেওয়া, জেন্ডার সেনসিটিভ এডুকেশন তৈরি, শিক্ষক নিয়োগে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি সহমর্মিতার দক্ষতা দেখা, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের পরিবর্তন যেমন যে যাই করুন না কেন সঠিক ও যথাযথভাবে ফিডব্যাক দেওয়ার ব্যবস্থা, শিক্ষকের মানসিক স্বাস্থ্য ভাবনায় গুরুত্ব দেওয়া এবং সর্বশেষে শিক্ষককদের আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করা ও বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন শিক্ষার্থীরা।

নেক্সটজেন এডু, আলোকিত হৃদয় ফাউন্ডেশন ও সেন্ডস স্কুলের সহযোগিতায় জুম মিটিং-এ আলোচনায় দেশ বিদেশের বিশজন শিক্ষার্থী অংশ নেন। আলোচনা পর্বের স্বাগত বক্তব্য দেন আলোকিত হৃদয় ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন আজওয়া নাঈম। পুরো আলোচনা পর্বটি সঞ্চালনা করেন সেন্ডস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা শন ভ্যালি ও নেক্সটজেন এডুর ফেলো সদস্য শাকিল আহমেদ। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিলো সেন্ডস স্কুল ইউকের সারাহ কার ও দিপ্রো এবং বাংলাদেশের সিটি কলেজের মেহরিন মোরশেদ, নটরডেম কলেজের নাবিল মাহমুদ ও আবির মাহমুদ।


সর্বশেষ সংবাদ