পথশিশুদের শিক্ষায় পুলিশের বিট স্কুল

চলছে বিট স্কুলের পাঠদান
চলছে বিট স্কুলের পাঠদান   © টিডিসি ফটো

সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের স্বপ্নপূরণে এগিয়ে এসেছেন কয়েকজন উদ্যমী পুলিশ সদস্য। সুবিধাবঞ্চিত এ শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে তারা চালু করেছেন বিট স্কুল। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ডবলমুরিং থানার কয়েকজন সদস্য নিয়েছেন এমন প্রসংশনীয় উদ্যোগ। তাদের কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেক সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান।

ডবলমুরিং থানাধীন আগ্রাবাদ পুলিশ ফাঁড়ি ও ৭২ নম্বর বিটের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) অর্নব বড়ুয়া, সহকারী বিট ইনচার্জ সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মিটু দাশ মিলে প্রসাশনের সহায়তায় পথশিশুদের জন্য চালু করেছেন বিট স্কুল।

গত ২১ নভেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আগ্রাবাদ শিশুপার্কের সামনে খোলা জায়গায় চালু করা হয়েছে এ স্কুল। সপ্তাহের শুক্রবার ও শনিবার বিকেলে এ শিশুদের শেখানো হয় নানান বিষয়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি তাদের দেওয়া হয় নৈতিক শিক্ষাও।

পুলিশের নেওয়া উদ্যোগে শামিল হয়েছে নগরফুল নামে একটি সংগঠন। মূলত এ সংগঠনের সদস্যরাই পথশিশুদের পড়ানোর কাজটি করে থাকে। নগরফুলের সদস্যরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এছাড়া এসব পথশিশুর পাশে দাঁড়িয়েছে এসএসসি-এইচএসসি ০২-০৪ নামে একটি সংগঠন। তারা শিশুদের উপহার দিয়েছে শীতের কাপড় ও শিক্ষাসামগ্রী।

আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালও এসব শিশুদের পাশে দাঁড়িয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নুরুল হক ঘোষণা দিয়েছেন, বিট স্কুলের শিক্ষার্থীদের সব ধরনের চিকিৎসা সেবা তারা দেবেন। লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগাং সিটির সদস্যরা বিট স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাগ উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে চালু হওয়া বিট স্কুলে বর্তমান শিক্ষার্থী ৫০ এর অধিক। শুক্রবার ও শনিবার ক্লাসে এসব শিশুদের খাবার ও চকোলেট দেয় পুলিশ সদস্যরা।

বিট স্কুলের উদ্যোক্তা এসআই অর্নব বড়ুয়া বলেন, পুলিশ কমিশনার স্যারের নির্দেশে বিট পুলিশিং এর বিভিন্ন কাজ করতে গিয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করার বিষয়টি অনুধাবন করি। আমরা দেখতে পাই, যারা পথশিশু তারা ছোট ছোট অপরাধ করে, কেউ কেউ চুরির সঙ্গে জড়িত। একসময় গিয়ে বড় অপরাধের দিকে পা বাড়ায়।

তিনি বলেন, সমাজে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এসব বাই ন্যাচারাল অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। আমরা চিন্তা করেছি, ছোট ছোট পথশিশু যারা রয়েছে তাদের যদি আমরা সঠিক শিক্ষা দিতে পারি তাহলে তারা অপরাধের সঙ্গে জড়াবে না। তাদের নানা অভাববোধ রয়েছে, আমরা যদি সেসব পূর্ণ করতে পারি তারাও সমাজের ভালো একটি অংশ হতে পারে।

এসআই অর্নব বড়ুয়া বলেন, সম্প্রতি আগ্রাবাদ জাম্বুরি পার্কে গিয়ে এরকম বেশকিছু শিশুকে দেখতে পাই যারা বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা চেয়ে বেড়াচ্ছে। আবার কেউ কেউ ফুল, মাস্ক বা পেপার বিক্রেতা। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে পড়ালেখা করবে কী না জানতে চাইলে তাদের আগ্রহ দেখতে পাই। মূলত এসব শিশুদের আগ্রহ থেকে বিট স্কুলটি চালু করেছি।

বিট স্কুলের সঙ্গে সম্পৃক্ত সংগঠন নগরফুলের সাবেক সভাপতি জাহিদ তানছির বলেন, পড়াশোনার প্রতি এ শিশুদের প্রবল আগ্রহ। আমরা চেষ্টা করছি তাদের প্রাথমিক শিক্ষাটুকু দিতে। পাশাপাশি নৈতিক বিভিন্ন বিষয় তাদের শিখাই।

সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পশ্চিম) এএএম হুমায়ুন কবীর বলেন, সম্প্রতি আগ্রাবাদে আমরা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে একটি বিট স্কুল চালু করেছি। আমরা যদি এসব শিশুদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে পারি তাহলে তারা মাদকের সঙ্গে জড়াবে না, চুরি-ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়াবে না।

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য রয়েছে- এখান থেকে যারা ভালো করবে তাদের আমরা নিয়মিত স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়ে পড়ালেখার ব্যবস্থা করবো। আমাদের এ স্কুলটি কন্টিনিউ করতে সমাজের অন্যরাও যদি এগিয়ে আসে তাহলে আশা করি আমরা যে লক্ষ্যে এটি চালু করেছি তাতে সফল হবো।


সর্বশেষ সংবাদ