‘এক বিসিএসের জন্য সব হারিয়েছি, তবুও গেজেট পেলাম না’
শুভজিৎ সাহা। কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের ফলে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন ৪৩তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারে। পরবর্তীতে গেজেটভুক্ত হওয়ায় ভাইভা দেননি বাংলাদেশ ব্যাংকে। ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিতে উত্তীর্ণ হয়েও রিটেনে অংশ নেননি। এমনকি পরবর্তীতে আর কোনো বিসিএস পরীক্ষা দেননি তিনি। তবে ৪৩তম বিসিএসের প্রথম গেজেটে নাম থাকলেও তিনি বাদ পড়েছেন দ্বিতীয় ও তৃতীয় গেজেট থেকে।
শুভজিৎ সাহার বাড়ি বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলায়। তার বাবা অসীম কুমার সাহা একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আর মা একজন গৃহিণী। তিনি ২০১৮ সালে কুয়েট থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে মিউজিক নিয়ে পড়াশোনার জন্য শান্তিনিকেতন যান। সেখান থেকে ফিরে এসে বিসিএসের প্রস্তুতি নেন শুভজিৎ। ৪১তম বিসিএসে নন-ক্যাডারে চাকরি পেলেও ৪৩তম বিসিএসে কাঙ্ক্ষিত প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে গেজেটভুক্ত হন তিনি। তবে গত ৩০ ডিসেম্বর ও ২৪মে প্রকাশিত গেজেট তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
গেজেট তালিকা থেকে বাদ পড়া প্রসঙ্গে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, সম্ভবত একটা গোয়েন্দা সংস্থা আমাকে ইসকন, ভারত সংশ্লিষ্টতা বা আওয়ামী ট্যাগ দিয়েছে। আমি নিজেও জানি না, ঠিক কী কারণে আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে এই কারণগুলোর জন্যই সবার গেজেট আটকে আছে। ইতোমধ্যে পুলিশ, প্রশাসন ও একটি গোয়েন্দা সংস্থা আমার রিপোর্ট পজিটিভ দিয়েছে। কিন্তু আরেকটা সংস্থা আমার বিষয়ে নেগেটিভ রিপোর্ট দেওয়ায় আমি গত ৬ মাস ধরে অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করছি।
তিনি আরও বলেন, আমার বিয়ে হয় গত ২৫ নভেম্বর। আমার স্ত্রী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইক্রোবায়োলজি থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছে। সে স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য দেশের বাহিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আমার বিসিএস হয়ে যাওয়ায় সেও সেই সুযোগ বাদ দিয়ে দেশে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। বিয়ের পর একটা মেয়ের কত স্বপ্ন থাকে। কিন্তু আমার স্ত্রীকে বিয়ের কয়েক দিনের মাথায় আমার সাথে দাঁড়াতে হয়েছে সচিবালয়ের রাস্তায়, কখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির প্রাঙ্গনে আবার কখনো রাজু ভাস্কর্যে।
শুভজিৎ বলেন, আমার পরিবারের কারও কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। ব্যক্তিগতভাবে আমিও কখনো কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত ছিলাম না। পড়াশোনার পাশাপাশি একমাত্র কাজ ছিল গান-বাজনা করা। গেজেটভুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসার (জেনারেল) পদে ভাইভা দিইনি। ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিতে উত্তীর্ণ হয়েছিলাম, সেটার রিটেন দিইনি। ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিতেও অংশ নিইনি। এক বিসিএসের জন্য সব হারালাম, তবু ৪৩ বিসিএসের গেজেট আটকে দিল।
তিনি বলেন, সবাই আমাকে জিজ্ঞাসা করে আপনার জয়েনিং কবে, কী কারণে নিয়োগ আটকে আছে? কিন্তু এর উত্তর আমার জানা নেই। ব্যাচের সকলে বিপিএটিসিতে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং করবে একসাথে। অথচ আমরা আমাদের ব্যাচ থেকে আলাদা হয়ে গেলাম। এটা সারাজীবন আমাদের হৃদয়ে দাগ কেটে থাকবে। শারীরিক ও মানসিকভাবে আমি প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছি। জানি না এই পরিস্থিতি মেনে নিয়ে কতদিন সুস্থ থাকতে পারব। মাঝে-মধ্যে আত্মহত্যা করার চিন্তা মাথায় আসে, কিন্তু পরিবারের দিকে তাকিয়ে সেটাও করতে পারি না।