সামরিক কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন ছিল সিহাবের
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহিদ হয়েছেন পরিবারের বড় সন্তান মো. সিহাব আহমেদ। কোনো সান্তনাতেই কষ্ট দমাতে পারছেন না পরিবারের বড় সন্তান মো. সিহাব আহমেদের মা। বুক ভরা আশা ছিল পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের দায়িত্ব নিবে সিহাব। কিন্তু স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার গণহত্যার বলি হয়ে সেই আশা ভরসার প্রদীপ একেবারেই নিভে গেছে। তাই চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে তার পরিবার।
অষ্টম শ্রেণিতেই যোগ দেন ‘আপন আলো মানবকল্যাণ ফাউন্ডেশন’ নামের এক রক্তদাতা সংগঠনে। চার বছরের সাংগঠনিক জীবনে ৩৫০ জনেরও বেশি রোগীকে রক্তদানে সহযোগিতা করেছে। নবম শ্রেণি থেকেই সে নিজে রক্তদান শুরু করেন।
এইচএসসি পরীক্ষার্থী সিহাব সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনের একজন সংগঠক। ৪ আগস্ট দেশের অন্যান্য স্থানের মতোই এক দফা দাবি নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে অংশ নেন সিহাব। স্বপ্ন ছিল পরীক্ষার পর সামরিক বাহিনীর একজন কর্মকর্তা হবেন। পুলিশের গুলিতে সেদিন মৃত্যু হয়েছিল স্বপ্নদ্রষ্টা সিহাবের, আর ফেরা হয়নি পরীক্ষার হলে।
আরও পড়ুন: ঢাকায় শহীদি মার্চ করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
শহিদ সিহাব আহমেদ ছিলেন এক সম্ভাবনাময় তরুণ। তিন ভাইয়ের মধ্যে সিহাব ছিল সবার বড়। বাবা শফি মিয়া মালয়েশিয়া প্রবাসী। মা মোছা. শাহনাজ খাতুন গৃহিণী। পরিবার থেকে জানা যায়, সামাজিক কর্মকাণ্ডে সিহাবের উপস্থিতি ছিল সর্বোচ্চ। রক্তের প্রয়োজনে মানুষকে রক্ত খুঁজে দেওয়া, শীতার্তদের বস্ত্র উপহার দেওয়া, বন্যার্তদের ত্রাণ দেওয়ার মতো অসংখ্য উদাহরণ তৈরি করে গেছেন সিহাব। অষ্টম শ্রেণিতেই যোগ দেন ‘আপন আলো মানবকল্যাণ ফাউন্ডেশন’ নামের এক রক্তদাতা সংগঠনে। চার বছরের সাংগঠনিক জীবনে ৩৫০ জনেরও বেশি রোগীকে রক্তদানে সহযোগিতা করেছে। নবম শ্রেণি থেকেই সে নিজে রক্তদান শুরু করেন। যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরেও (বিএনসিসি)। সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় সে বিএনসিসির সেরা ট্রেইনি ক্যাডেট হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
আন্দোলনের সময়ের কথা উল্লেখ করে সিহাবের চাচা আহমেদ জাকারিয়া বলেন, ‘সিহাব সব সময়ই ন্যায়ের পক্ষে ছিল এবং যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব ছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সে শুরুতেই আন্দোলনে যুক্ত হয়। প্রথম পর্যায়ে সে নিজ বিদ্যাপীঠ সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলন করছিল। বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালনে প্রত্যক্ষ ভূমিকাও পালন করে। একপর্যায়ে দেশের সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করলে সে নিজ গ্রাম এনায়েতপুরের মাধবপুরে চলে আসে। এনায়েতপুর থানায় অবস্থিত খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তাদের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেয়।’
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীর মৃত্যু নিশ্চিতে দ্বিতীয় দফায় ‘মুখে টিয়ারশেল নিক্ষেপ’ পুলিশের
তিনি আরও বলেন, ‘৪ আগস্ট খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কদের ডাকে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী এনায়েতপুর থানার সামনে বিক্ষোভ করছিল। সকাল ৯টায় আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য সিহাব বাড়ি থেকে বের হয়। এনায়েতপুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নেয়ার একপর্যায়ে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। শিক্ষার্থীরা এসব উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে গেলে পুলিশ তাদের ওপর কয়েক রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। একটি গুলি এসে সিহাবের কোমর বরাবর আঘাত করলে সে সেখানেই লুটিয়ে পড়ে। বেশকিছু শিক্ষার্থী তাকে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়। পরে সেখানকার চিকিৎসকরা সিহাবকে মৃত ঘোষণা করেন।’
সমাজসেবক এই তরুণকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ পুরো গ্রামবাসী। শোক সামলে উঠতে না পারা মা চান সন্তান হত্যার সঠিক বিচার আর ছোট সন্তানদের জন্য সহায়তা।