বাবার কাঁধে ভর করে জাবি ভর্তি পরীক্ষায় আদনান, পড়তে চান রসায়নে
- জোবায়ের আহমেদ, জাবি
- প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:১৯ PM , আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:১৯ PM
হাঁটতে পারছেন না, হাঁটতে গেলেই হোঁচট খেয়ে পড়ে যান। চলাফেরা করতে হয় মা অথবা বাবার কাঁধে ভর করে। তবুও চোখভরা স্বপ্ন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটিয়ে কুষ্টিয়ার কুমারখালি থেকে ছুটে এসেছেন আদনান উজ জামান। স্বপ্ন দেখেন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে পড়ার।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। পড়তে চান বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে।
আদনানের বাবার নাম আজগর আলী ও মা সাবিনা সুলতানা। তাদের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার দক্ষিণ ভবানীপুর গ্রামে। তার মা স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। আর বাবা বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছেন। দুই ভাই-বোনের পরিবারে আদনান বড়।
কুমারখালির দিনমনি মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে ও উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করে আদনান। শৈশব থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বড় হয়েছেন তিনি। তবে জীবনে পরনির্ভরশীলতা তার কখনোই পছন্দ না। অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে দাঁড়াতে চান নিজের পায়েই। প্রবল ইচ্ছা শক্তিতে অংশগ্রহণ করেছেন স্কুল ও কলেজ জীবনের সকল প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানে। পেয়েছেন সাফল্যও।
এখন তার চোখে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন। ‘‘আমি পড়াশোনা করতে চাই, চাকরি করতে চাই, দশজন স্বাভাবিক মানুষের মত বাঁচতে চাই’’, সাবলীলভাবেই বলছিলেন আদনান উজ জামান।
আদনান জানান, এই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে এ পর্যন্ত আসতে হয়েছে তার। তবুও কখনো হাল ছাড়েননি তিনি।
আদনান উজ জামান বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল উচ্চশিক্ষা নেওয়ার। ইচ্ছে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে পড়ার। জাহাঙ্গীরনগর ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর গুচ্ছতে পরীক্ষা দেবো। আমার আত্মবিশ্বাস আছে, আমি আমার কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করতে পারবো। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।’’
এদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’ ইউনিটের মধ্য দিয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। যা চলবে আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
প্রতিবন্ধী ছেলেকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে নিয়ে এসেছে তার বাবা আজগর আলী। তিনি জানান, অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের মধ্য দিয়েই আদনান ছোটবেলা থেকে এ পর্যন্ত এসেছে। জন্মগতভাবেই তার এমন শারীরিক সমস্যা। তবে শারীরিকভাবে সমস্যা থাকলেও সে অত্যন্ত চৌকস এবং মেধাবী। সে সব সময় নিজের উপরে নির্ভরশীল হতে চায়। সে তার মনের দুই পা দিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায়।
তিনি বলেন, তাকে নিয়ে একসময় সমাজের মানুষের কাছে হীনমন্যতায় ভুগেছি। তবে আদনানের হাল না ছাড়ায় দীর্ঘ যাত্রা এবং আত্মবিশ্বাস সমাজের মানুষদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সকল বাঁধা পেরিয়ে আদনান তার লক্ষ্যে পৌঁছাবেই।