০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১৬:৩৫

চাকরি-পরিবার সামলে ঢাবির আইন বিভাগে পড়ার স্বপ্ন পোশাককর্মী পারভীনের

পারভীন আক্তার  © সংগৃহীত

বাবা মারা যাওয়ার পর মা জয়নব বেগমের হাত ধরে জীবিকার সন্ধানে শেরপুর থেকে মাত্র ৮ বছর বয়সে গাজীপুর আসেন পারভীন আক্তার। পরিবারে আর্থিক অনটনের জন্য ক্লাস ফাইভের পর তার মা পড়াশোনা ছেড়ে কাজ করতে বলেন। তবে বাবা ইলিয়াস উদ্দিনের ইচ্ছা ছিল তাকে পড়াশোনা করানোর। তিনি মারা যাওয়ার পর স্বপ্নটা মেয়ে পারভিনের মাঝেও চলে আসে।

কোনো কিছুই যেন দমাতে পারেনি তাকে। গাজীপুরে একটি গার্মেন্টসে চাকরি করে নিজের ও পরিবারের হাল ধরার পাশাপাশি করে যাচ্ছেন পড়াশোনা। একটি নৈশ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং পরবর্তীতে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছেন উচ্চমাধ্যমিক পাশ। বর্তমানে কাজের পাশাপাশি ঢাকাসহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। 

পারভিনকে নিয়ে তার নৈশ বিদ্যালয়ের শিক্ষক জুবরাজ শামিম নিজের ফেসবুকে লিখেন, ‘আমাদের নৈশ বিদ্যালয়ে পারভীন সর্বপ্রথম ওর মায়ের সঙ্গে আসছিলো। তখন বোধহয় আনোয়ার স্পিনিং এ কাজ করতো সে, এখন কোথায় কাজ করে জানিনা। তো আমি প্রাথমিক যাচাই করে পারভীনকে ক্লাস সিক্সে ভর্তি করিয়ে দেই। ও নিয়মিত আসতে থাকে, খেয়াল করলাম লেখাপড়াতেও বেশ ভালো। যেহেতু চাকরির জন্য অনেকটা গ্যাপ হয়ে গেছে, আবার পড়াশোনাতেও ভালো তাই আমি পারভীনকে কিছুদিনের মাথায় ক্লাস এইটে ভর্তি করিয়ে দেই। 

“এরপর পারভীন আমাদের নৈশ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শেষ করে একটা স্থানীয় কলেজে ভর্তি হয়। কিন্তু এরপরই পারিবারিক এবং অর্থনৈতিক জটিলতায় উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা থেকে নিজেকে ইস্তফা দেয়। মাঝে আমার সঙ্গে দেখা হইলে পারভীন মন খারাপ নিয়া জানায় সবকিছু ঠিক হলে সে পুনরায় পড়াশোনা শুরু করবো।”

তিনি আরও লেখেন, কিছুদিন আগে ঘরে ফিরা দেখি মিষ্টি! শুনলাম পারভীন এবছর উন্মুক্ত থেকে এইচএসসি পাশ করছে। আমার ফোন বন্ধ থাকায় ফোন দিয়া সে জানাতে পারেনি! পরে পারভীনের সঙ্গে স্কুলে আমার দেখা হয়। চোখে-মুখে তার গভীর ফুর্তি! আপ্লুত হইয়া বলে ভাইয়া আমি সবগুলো পাবলিক ভার্সিটিতে ট্রাই করবো।

“আহা! জগতে অনেক বড় বড় উদাহরণ আছে। পারভীন এমন উদাহরণ হবে কিনা আমি জানি না। তবে ওর ভেতরে যে শক্তি, যে স্বপ্নের জন্ম হয়েছে তা আমাকে ভেতরেও শক্তি দেয়, বাঁচার আনন্দ দেয়।”

পারভীনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানায়, আমার ইচ্ছা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়ার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও আমি অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করেছি। আইন বিষয় যদি না পাই তাহলে আমার শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছা আছে।

তিনি আরও জানায়, আমার স্বপ্ন আমি একজন মানুষ হবো। মানবিক গুণে গুণান্বিত হওয়া এবং মানুষের জন্য কাজ করা।