স্পেশাল: বিশে ষত্ব বিধান
জগতের এই রূপ-রস ও জীবনের স্পন্দমান প্রবহমান ধুকপুকানি তারাও অনুভব করে। শরীর ও মনের অপরিণত দশা তাদের যত পিছনে টানতে চায়, তারা তত যেন এগিয়ে যায় সামনে, নিজেদের বেছে নেওয়া পথে। ‘ স্পেশাল’দের মধ্যমণি করে তৈরি হওয়া সিনেমার গল্পও কিছু কম স্পেশাল নয়। লিখেছেন- অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
ঠাকুমা শিখিয়েছিল, ‘কানাকে কানা, খোঁড়াকে খোঁড়া বলতে নেই’। আর, ‘স্পেশাল’ শেখাল; কানাকেও স্পেশাল, খোঁড়াকেও স্পেশাল বলতে হয়।
রূঢ় শোনাল হয়তো, কিন্তু এটাই বাস্তব। এবং অত্যন্ত মধুর এক বাস্তব। যেসব শব্দের ব্যবহারভেদে অর্থের বিস্তর তারতম্য হয়ে যায়, ‘স্পেশাল’ সেরকমই একটা স্পেশাল শব্দ। হিসাবের মাপকাঠি থেকে যারা অনেকটা আলাদা, মানসিক বা শারীরিকভাবে যারা ভিন্ন ও স্বতন্ত্র, চেহারায়-বয়সে বড় হয়ে উঠলেও যাদের মনটা শিশু-সরল পথেই হাঁটে বা কিছু শারীরিক অপরাগত তাদের ছুটতে দেয় না ছেড়ে যাওয়া বাসের পাদানি ধরতে, আগেকার সময়ে তাদের দিকে সর্বসমক্ষে হাসাহাসি, মশকরা ছুড়ে দেওয়া যেত। ভেতরে ভেতরে হয়তো এখনও বদলায় নি এসব, কিন্তু তবু আজ বাইরে একটা পরিচ্ছন্নতা এসেছে নিশ্চিত। অন্তত শহরের দিকে তো বটেই। এবং এসেছে এই ‘স্পেশাল’-এর দৌলতেই। ‘স্পেশালি এবেল্ড’ বা ‘স্পেশাল চাইল্ড’ শব্দবন্ধ এই শারীরিক-মানসিক স্বাতন্ত্র্যকেই উদ্যাপন করে, তাদের স্থান করে সমাজ-সাধারণের মাঝে।
‘স্পেশাল’ শব্দের আভিধানিক অর্থ- ‘বিশিষ্ট’, ‘বিশেষ’, ‘খাস’, ‘অসাধারণ’, ‘স্বতন্ত্র’। আজ যাদের কথা হচ্ছে, তারা সেইভাবে সত্যিই ‘স্পেশাল’! সময় যাদের টানটান মনের ত্বকে লাগাতে পারেনি কোনো বলিরেখার দাগ, দুনিয়ার দেওয়া তঞ্চকতার মন্ত্র স্পর্শ করতে পারেনি যাদের মর্মকে, বারান্দায় বসে বসেই হাসিমুখে যারা দুর্গাপুজো কাটিয়ে দেয় নীচের রাস্তা দিয়ে বয়ে যাওয়া বহমান স্রোতের সঙ্গে নিজের ভাষায় গল্প করতে করতে, শারীরিক বিপর্যয় চেহারাকে বিকৃত করে দিলেও যাদের চোখ আর হাসিতে আজীবন লেগে থাকে নির্মল সারল্য, আর সবচেয়ে বড় কথা জন্মগতভাবে দলছুট হওয়া সত্ত্বেও যারা উপলব্ধি করেছে আশ্চর্য এক জীবনদর্শন- আশপাশে ছড়িয়ে থাকা সেরকমই মানুষদের গল্পকে নিয়ে তৈরি হয়েছে অসাধারণ সব ছায়াছবি। সে-রকমই কিছু বিখ্যাত ছবির কথা রইল আজ। ফরেস্ট গাম্প বাসস্ট্যান্ডে পাশে বসে থাকা মানুষটির দিকে একটা চকোলেটের বাক্স এগিয়ে দেয় লোকটি অপরিষ্কার উচ্চারণে বলে, ‘my mom always said life is like a box of chocolates’ কোন খোপ থেকে কোন মোড়ক খুলে কী স্বাদের চকোলেট বেরুবে কেউ জানে না। কিছু তোমার পছন্দ হবে, বাকিগুলো বিচ্ছিরি লাগবে। খারাপগুলো চিবিয়ে গিলে নিয়ে ভালোটার খোঁজে এগতে হবে। ওটাই বাক্সটার মজা।
ফরেস্ট গাম্প (ইংরেজি: Forrest Gump) ১৯৯৪ সালে মুক্তি পাওয়া একটি মার্কিন চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রটিতে অভিনয়ের জন্য টম হ্যাংক্স্ সেরা অভিনেতা হিসেবে ৬৭ তম অস্কার পুরস্কার লাভ করেন
এই হলো বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সিনেমা, রবার্ট জেমেকিস আর টম হ্যাংকসের মাস্টারপিস ‘ফরেস্ট গাম্প’-এর এক বিখ্যাত সংলাপ, যা মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯৪-এ। এই হলো ফরেস্ট গাম্প বলে একটি মানুষের গল্প, যে ছোট থেকেই জানে সে সবার থেকে অনেকটা পিছিয়ে। কিংবা সে হয়তো জানে না, কারণ সেটা বোঝার মতো বুদ্ধিটুকুও নেই তার। নির্বোধ সে। তার ওপর তার পা দুটোও ভালোভাবে চলে না। আশপাশের সবাই মিলে তাকে জ্বালাতন করে, দুয়ো দেয়, হাসাহাসি করে। তার জীবনে শুধু দুজনই আছে ভালোবাসার মানুষ। এক তার মা, আর এক স্কুলের বান্ধবী জেনি। মা বোকাসোকা ফরেস্টকে বোঝান জীবনের কথা। প্রতিমুহূর্তে জোগান বিশ্বাস। দেন লড়ার শক্তি। তার মতো করে। সহজ-সরলভাবে। হতাশা আর দুঃখে আদর দেন নরম হাতে। ফরেস্টকে স্কুলে ভর্তি করার জন্য বিছানা ভাগ করে নেন স্কুলের হেডমাস্টারের সঙ্গে। আর আছে জেনি। যে বাচ্চা মেয়েটা প্রথম দিন থেকেই স্কুলবাসে তার বন্ধু। সেই জেনির উৎসাহ আর চিৎকার ‘রান, ফরেস্ট রান’-ই ফরেস্টকে হাঁটতে শেখায়, সব প্রতিবন্ধকতা ভেঙে দৌড়তে শেখায়, আর দৌড়তে দৌড়তেই সে বড় হয়ে ওঠে কবে যেন। কিন্তু তাতে তার হুঁশ নেই, সে শুধু একমনে একটা কাজ করে যেতে জানে। কিছু বোঝে না, জানে না, শুধু যে তাকে যা বলে, সে সরল মনে করে যায় এদিক-ওদিক না ভেবে। আর পেয়ে যেতে থাকে সাফল্য। কিন্তু বোঝে না ‘সাফল্য’ কী? হেলায় ফেলে-ছড়িয়ে রাখে সবকিছু। মাঝে মাঝে ফিরে যায় জেনির কাছে। ভালোবাসা পেতে। জেনি কয়েকদিন চেষ্টা করে ফরেস্টকে ভালোবাসার পাঠ শেখাতে, কাছাকাছি আসে কয়েকবার, কিন্তু পারে না। ফরেস্টকে শিশুর মতো ভালোবাসা যায়, কিন্তু প্রেম করা যায় না। তাই একদিন জেনি ছেড়ে যায় তাকে, অন্য পুরুষের হাত ধরে। ফরেস্ট কষ্ট পায়, কিন্তু সে রাগতে জানে না। কারণ, সে জানে এটাই তার প্রাপ্য। তারপর একদিন মা-ও চলে যান অতল ঘুমে। ফরেস্ট জানে না এবার কী করবে সে। ছুটতে শুরু করে। দিন, মাস, বছর কেটে যায়, সে ছোটে। মিডিয়া, দেশ উত্তাল হয় এই ভেবে যে সে কেন ছুটছে। যে যার মতো কারণ দর্শায়, কেউ বলে ও ‘বিপ্লবী’, কেউ বলে কিছুর ‘দাবি’তে ছুটছে, কেউ বলে ‘পর্যটক’ সে। দলে দলে মানুষ জমা হয় তার পিছনে। আর সবাইকে পিছনে রেখে ছুটতে থাকে সে। সে কিছুই জানে না এসব। তাকে যখন সাংবাদিক জিগ্যেস করে সে কেন দৌড়ে চলেছে, সে বলে যে তার ছুটতে ইচ্ছে করছে তাই। এই এক লাইনই হলো ফরেস্টের জীবনদর্শন। ‘ইচ্ছে করছে তাই’। এর চেয়ে বেশি কিছু না। না, কারণ কোনো ফলের আশা নেই। এই করতে করতে ঘটনাচক্রে সে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে আমেরিকার কিছু ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে। যুদ্ধে যায়, ব্যবসা করে, বন্ধুদের জন্য জীবন দিতেও পিছপা হয় না। তবু কিছুই বোঝে না সে। বা হয়তো এত গভীরভাবে বোঝে যে বাকিরা তার তল পায় না। সেখানেই সে ‘স্পেশাল’। সহজ ভাষায় বুঝিয়ে যাওয়া মায়ের কথা তার পাথেয়। কেউ কিছু জিগ্যেস করলে ‘মাম্মা সেড...’ বলেই মা’কে ‘কোট’ করে সে। আর খুঁজতে থাকে জেনিকে। পায়-ও একদিন। দেখে একটি বাচ্চা ছেলেকে নিয়ে থাকে জেনি। জানতে পারে সে ফরেস্টেরই পুত্র। সেটাও সে গ্রহণ করে সরলভাবে। বাপ-ব্যাটা কার্টুন দেখতে থাকে বন্ধুর মতো, যেন সব একই আছে। এড্স-এ ভুগতে থাকা জেনি মারা যায় একদিন। আবার সে একা। না, এবার তার ছেলের সঙ্গে। ছেলে তার মতো নয়, চালাক-চতুর, স্মার্ট। সে ছেলেকে বড় করতে থাকে সহজভাবে। যেন জীবনে সেটাই একমাত্র সত্যি! আর বিকেলের পড়ে আসা আলোয় জেনির সমাধির কাছে দাঁড়িয়ে বলে তার আর ছেলের দিন-রাতের গল্প। বলে, সে কত মিস করে জেনিকে! তারপর চোখের জল মুছে ফিরতি পথ ধরে বাড়ির। আকাশজুড়ে পাখিরা তখন বাড়ি ফিরছে। আর সকলের অলক্ষ্যে একটা পালক উড়তে উড়তে ভেসে যাচ্ছে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়। হাওয়া যেদিকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে, সেদিকেই। তার কোনো জোর নেই, নেই জটিলতা। ফরেস্ট গাম্পের মতোই।
রেন ম্যান
ব্যারি লেভিনসন পরিচালিত, ডাস্টিন হফম্যান ও টম ক্রুজ অভিনীত এই অসাধারণ ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৮৮-এ। তরুণ, সুদর্শন চার্লি ব্যাবিট (টম ক্রুজ) একজন গাড়ি-ডিলার। খবর পায় বাবা মারা গিয়েছে। তার বাবা তাকে অনেক আগে গাড়ি চুরি করার বদনাম দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল, সেই থেকে বাবার সঙ্গে তার আর কোনো যোগাযোগ ছিল না। তবু চার্লি আসে তার বাবার শেষ কাজে যোগ দিতে। এসে জানতে পারে, বাবার রেখে যাওয়া বিপুল সম্পত্তির ভেতর তার ভাগ্যে জুটেছে একখানা গাড়ি, আর ‘রেমন্ড’ নামে কাউকে বাবা দিয়ে গিয়েছে ৩ মিলিয়ন ডলার। কে এই রেমন্ড? খোঁজখবর নিয়ে সে জানতে পারে, রেমন্ড হলো চার্লির বড় দাদা। এ-কথা তার অজানা ছিল। বাবা কাউকে জানায় নি এই পুত্রের ব্যাপারে।
সে রেমন্ডকে খুঁজতে খুঁজতে পৌঁছয় এক মানসিক হাসপাতালে এবং পরিচিত হয় এক অটিস্টিক মানুষের সঙ্গে, যার বয়স অনেক, কিন্তু শিশুর মতো হাবভাব, বুদ্ধি। চার্লি জানতে পারে এই হলো রেমন্ড, তার দাদা। তার ৩ মিলিয়নের সম্পত্তি হস্তগত করে রেখেছে। কী বিড়ম্বনা! চার্লি ফান্ড-কর্তা ও রেমন্ডের ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করে বোঝায় যে এই সম্পত্তিতে তার ভাগ আছে। কিন্তু আইন কিছুতেই উইলের বাইরে গিয়ে কিছু করবে না।
কিন্তু চার্লিকে তখন লোভ পেয়ে বসেছে। টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য সে রেমন্ডের দায়িত্ব নেয়। আর তাকে নিয়ে ঘুরতে থাকে। রেমন্ডের উদ্ভট, আজগুবি রুটিন-জীবনে বিরক্ত হয়ে ওঠে চার্লিং, কিন্তু তার কিছু করার নেই। হঠাৎ চার্লি জানতে পারে, বড় দাদা পরিপক্ব না হলেও স্বাভাবিক না হলেও তার কিছু অসাধারণ ক্ষমতা আছে। সংখ্যার ব্যাপারে সে অদ্বিতীয়। অবলীলায় মুখস্থ রাখতে পারে যে কোনো নম্বর। এমনকি একবার পড়ে সে টেলিফোন ডাইরেক্টরি মুখস্থ করে ফেলতে পারে। চার্লিং রেমন্ডের এই ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে জুয়া খেলা শুরু করে। ক্যাসিনোতে কামায় অনেক। কিন্তু ভাগ্য তাকে নিয়ে যায় অন্যদিকে। এই ক্রস-কান্ট্রি ট্রিপে করে যেন সে ভালোবেসে ফেলে ওই আধপাগল দাদাটাকে। দুজনের মধ্যে তৈরি হয় এমন একটা সম্পর্ক, যা তারা আগে কখনও পায়নি। চার্লি আর টাকার ভাগ চায় না, চায় শুধু দাদাকে সারাজীবন কাছে রাখতে। কিন্ত দেখা যায়, এখন টাকা সে পেতে পারে, দাদার কাস্টডি পাওয়া সম্ভব হবে না।
হোয়াট্স ইটিং গিলবার্ট গ্রেপ
ল্যাস হলস্ট্রট পরিচালিত ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৯৩-এ। দুই ভাইয়ের গল্প, আর তাদের ঘিরে এক পরিবার আর সমাজের ছবি। জনি ডেপ ও লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও ছিলেন দুই ভাইয়ের ভ‚মিকায়। এ হলো আমেরিকান এক ছোট্ট নিস্তরঙ্গ শহরের গল্প। তরুণ গিলবার্ট গ্রেপ, মানে জনি ডেপ, খুব অল্প বয়সেই সংসারের দায়িত্ব নিয়েছে। বাড়িতে আছে তার মা, দুই বোন আর ভাই। মা দোতলা থেকে নামেন না, ঘর থেকে বের হন না, অদ্ভুত ডিপ্রেশনে জীবন কাটান। তার শরীর ভয়ঙ্কর স্থ‚লকায়। বড় বোন ঘরের কাজ করে, আর ছোট বোন বেশ ছোট। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তার ছোট ভাই আর্নি। এই আর্নির ভ‚মিকায় অভিনয় করেছেন লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও। আর্নির ‘অটিজম’ আছে। সে বেড়ে উঠেছে, শরীর স্বাভাবিক, কিন্তু নিজের কিছু করার ক্ষমতা নেই। দাদা গিলবার্ট ছাড়া তার চলে না একমুহূর্ত। চান করাতে গামলায় বসিয়ে এলে ঠাণ্ডায় সেখানেই বসে থাকে, দাদা ভুলে গিয়েছে তুলে আনতে বলে। শুধু একটা ব্যাপারে আর্নি অদ্বিতীয়- সমস্যা ডেকে আনতে! গিলবার্টকে মূলত ব্যস্ত থাকতে হয় আর্নিকে সামলে রাখতে, যে কি না প্রায়ই একটা বিরাট উঁচু জলের ট্যাঙ্ক বেয়ে উঠে যায়। উত্তেজনা আর ভালোলাগা বলতে গিলবার্টের ব্যতিব্যস্ত জীবনে রয়েছে এক বিবাহিত নারীর সঙ্গে সম্পর্ক। কিন্তু পরিবর্তন আসে, যখন তাদের শহরে গাড়ি নষ্ট হয়ে আটকে পড়ে বেকি নামের এক তরুণী আর তার ঠাকুমা। গিলবার্টের সঙ্গে বেকির ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। এদিকে, আর্নিও বেকিকে পছন্দ করে। বেকির প্রতি গিলবার্টের মনোযোগ বাড়ায় বিবাহিত ওই মহিলার মন ভেঙে যায়, আর ঠিক এমনই সময় হঠাৎ মারা যায় তার স্বামী। জটিলতা আরও বাড়ে। এরপর একদিন গিলবার্ট-আর্নির মা রাস্তায় বের হন বিশেষ কারণে এবং সমস্ত টাউনের মানুষের হাসির পাত্রী হন। এরপর নাটকীয়ভাবে মারা যান ভদ্রমহিলা। গিলবার্ট বিশালবপু মৃত মা’কে হাসাহাসির কারণ হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে বাড়িসমেত জ্বালিয়ে দেয়। পথে নেমে পড়ে ভাইকে নিয়ে। বেকি তাদের তুলে নিয়ে যাবে একদিন। আর্নি অত বোঝে কি? সে জানে দাদা আছে। ছোট্ট থেকে শক্ত করে যে হাতটা ধরে না থাকলে আজ সে হড়কে যেত। দাদা গিলবার্টও কি খুঁজে বেড়ায় না আর্নির হাতটা?
আই অ্যাম স্যাম
জেসি নেলসন পরিচালিত, শন পেন অভিনীত ‘আই অ্যাম স্যাম’ মুক্তি পায় ২০০১-এ। গল্পে স্যাম ডসন পূর্ণবয়স্ক এক ব্যক্তি। কিন্তু তার মনের বয়স আটকে আছে সাত বছরে। আর আছে তার কন্যা লুসি। তার মা তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে জন্মের পরই। স্যাম একাই লুসিকে বড় করতে থাকে, যতটা একটা সাত বছরের বুদ্ধির মানুষের পক্ষে পারা সম্ভব সেইভাবেই। তাও কেটে যাচ্ছিল এর-তার সাহায্য নিয়ে। সমস্যা বাধে লুসির বয়স যখন হয়ে যায় সাত। একজন সাত বছরের মানুষ আরেকজন সাত বছরের মানুষকে কী করে দেখাশোনা করবে? আইনের চোখে, রাষ্ট্রের ব্যবস্থায় ‘বাবা’ হিসেবে স্যাম ‘অযোগ্য’। তাই আইনত রাষ্ট্র দায়িত্ব নিয়ে নেয় লুসির। কিন্তু লুসি তো স্যামের মেয়ে! সে কী করে কাছ-ছাড়া করবে মেয়েকে? কিছুতেই মেয়েকে দিতে রাজি নয় স্যাম। মেয়েও চায় তার কাছে থাকতে। শুরু হয় স্যাম বনাম রাষ্ট্রের আইনি লড়াই। কিন্তু আইনের প্যাঁচের কাছে স্যামের সাত বছরের বুদ্ধি জিতবে কী করে? লুসির জন্যও নতুন ‘গুরুজন’ খুঁজে দেয় কোর্ট। কাস্টডি নেয় কারপেন্টার বুঝতে পারে স্যামের সোজাসাপটা ভালোবাসার কাছে আইনের দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই।
তারে জমিন পর
২০০৭-এ আমির খান পরিচালিত এই ছবিটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এর মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিল দরশিল সাফারি, যাকে অনেকেই মনে করেছিলেন ‘ভারতের সেরা শিশুশিল্পী’।
আট বছরের ছোট্ট ঈশান নন্দকিশোর অবস্তি (দরশিল সাফারি) থাকে বাবা, মা, আর তার দাদার সঙ্গে। তার জীবনজুড়ে শুধু রং, তুলি, কুকুর, মাছ, ঘুড়ি- এসব। বাঁধাধরা হোমওয়ার্ক, পড়াশোনা, এমনকি নিয়ম করে খেলাও তার ভালো লাগে না। আর সে পারেও না ঠিকঠাক। পরীক্ষায় গোল্লা পায়, খেলায় বল মিস করে। সাধারণ জিনিস, যা আর পাঁচটা বাচ্চা সহজেই করে ফেলে, তাতেও সে ফক্কা। এদিকে তার দাদা চ্যাম্পিয়ন। পড়া, টেনিস- সবেতে সে দুরন্ত। মা চিন্তা করেন ছোট ছেলেকে নিয়ে, আর বাবা করেন রাগারাগি। মারধর রোজ লেগেই আছে বাড়িতে। সবাই বলে ঈশান মন দেয় না। বড্ড অমনোযোগী। শেষমেশ তাকে পাঠানো হয় শহর থেকে দূরে একটা বোর্ডিং স্কুলে। রং ঝলমলে দুনিয়া থেকে নিয়মের কারাগারে নির্বাসন পায় সে। উচ্ছল ছেলেটা একেবারে চুপ করে যায় সবার অলক্ষ্যে। শুধু ছবি আঁকতেই ভালো লাগে তার। কিন্তু পড়াশোনার কিছু পরিবর্তন হয় না। যে-কে-সেই বাজে রেজাল্ট। গার্জেন কল। এমন একদিন ক্লাসে আসে এক টেম্পোরারি ড্রয়িং টিচার রামশঙ্কর নিকুম্ভ (আমির খান)। তার খুব অবাক লাগে এরকম মনমরা একটা ছেলেকে দেখে। আস্তে আস্তে সে দেখতে পায় ছেলেটি অসম্ভব ভালো ছবি আঁকে। কিন্তু আর কিছু ঠিক করে করতে পারে না। কেন? শুধুই মনোযোগের অভাব? উত্তর খুঁজতে খুঁজতে সে জানতে পারে, ছেলেটির একটা অসুখ আছে, যার নাম ‘ডিসলেক্সিয়া’। সেই মানসিক সমস্যার জন্যই সে ঠিকমতো পড়তে, বুঝতে, কোনো কিছুর দূরত্ব মাপতে পারে না।
তারে জামিন পার ২০০৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বলিউড চলচ্চিত্র। ছবিটি পরিচালনা এবং প্রযোজনা করেছেন আমির খান। ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত এক ৮-৯ বছরের ছেলেকে কেন্দ্র করে সিনেমাটির কাহিনী রচিত হয়েছে।
ক্রমে জানা যায়, নিকুম্ভ স্যারেরও ‘ডিসলেক্সিয়া’ ছিল। আস্তে আস্তে ছাত্র-মাস্টারের এক দারুণ বন্ধুত্ব তৈরি হয়। ঈশানের একমাত্র আশ্রয় এখন নিকুম্ভ স্যার, আর স্যারের ধ্যান-জ্ঞান ঈশান। নিকুম্ভের ভালোবাসা, সহমর্মিতা আর সঠিক পদ্ধতিতে পড়ানোর উপায়ে ধীরে ধীরে ভালো হতে থাকে ঈশান। অসুবিধের গণ্ডি টপকে সে হয়ে ওঠে কৃতী।