২৩ নভেম্বর ২০২৩, ১৯:৫৪

ফুরিয়ে যেতে গিয়ে যেভাবে পূর্ণ হয়ে ফিরলেন শ্যামল

নিজের দোকানে শ্যামল কুমার ধর  © টিডিসি ফটো

জীবনযুদ্ধে হার না মানা এক ফেরিওয়ালা শ্যামল কুমার ধর। দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন দুটি পা ও একটি হাত। এ দুর্ঘটনাই যেন তার জীবনের মোড় ঘুরিয়েছে। জীবনের প্রতি সব মায়া ত্যাগ করে রেললাইনে যখন তার সমাপ্তি টানতে গিয়েছিলেন, বেঁচে ফিরে পেলেন নতুন আশার আলো। বর্তমানে আগারগাঁও বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের সামনে হুইল চেয়ারে খেলনা ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ফেরি করেন।

মাত্র এক হাত দিয়েই ধরেছেন সংসারের হাল। কারও কাছে মাথা নত না করে নিজের কর্ম ও পরিশ্রমের উপর বিশ্বাস রেখে পথ চলছেন নিজেই।নিজের আত্মসম্মানবোধ নিয়ে শ্যামল বলেন, সাহায্য এক জিনিস সহযোগিতা আরেক জিনিস। আমি মনে করি সাহায্য একমাত্র করতে পারে ওপরওয়ালা। সহযোগিতা একজন আরেকজনকে করতে পারে।

তিনি বলেন, আপনি চাইলে আমার কাছ থেকে ৫০ টাকা দিয়ে একটি জিনিস কিনলেন। সেখানে হয়তো আমি ১০ টাকা লাভ করতে পারব। আপনি আমাকে ১০০ টাকা বা ৫০০ টাকা দিলে তখন আমি খুশি হব না, বরং কষ্টটা আরও বেড়ে যায়। কারণ আমি কারও কাছে সাহায্যের হাত পাতিনি। আমার কাছে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিস রয়েছে, যা বিক্রি করে নিজের জীবিকা নির্বাহ করতে চাই। 

জীবিকার আয়োজন সব এই গাড়িতে

পথের ধারে ছোট্ট একটি লোাহার গাড়িতে শ্যামলের জীবিকার সব আয়োজন। সারি সারি সাজানো রয়েছে শিশুদের অসংখ্য খেলনা, চিরুনি, আয়না, নেইলকাটার সহ যাবতীয় নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিস। শ্যামল জানান, ২০০৪ সালে ট্রেনে দুর্ঘটনার শিকার হন। এতে দুই পা এবং এক হাত হারান। প্রথমে মুদি দোকান ছিল। সেখানে মানুষ বাকিতে বেশি নিত। তারপর টাকা চাইলে গেলে বিবাদ সৃষ্টি হতো।

এ অবস্থায় মারামারি সম্ভব ও না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি আমার নিজের চেষ্টায় ঢাকা শহরে আসি গাড়ি ঠিক করার কাজের জন্য। সেখানে না পেরে গাড়িতে এ ব্যবসা শুরু করি। আজ চার বছর যাবৎ আমি এ ব্যবসা চালাচ্ছি। পরিবার নিয়েই থাকি এখানে।

আরো পড়ুন: এইচএসসির ফল পেয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধ, যা জানা জরুরি

শ্যামলের ছোট্ট এই দোকান আহার জুগাচ্ছে তার দুই ছেলে এবং এক মেয়ের মুখে। জীবনের দীর্ঘ পথে নানান ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে যেতে হচ্ছে তাকে। তবুও তিনি বলেন, আমি আমার জীবনযুদ্ধে হার মানতে রাজি না। আমি চাকরি ছেড়েছি। আমার তিনটা সন্তান আছে। তাদের মুখে খাবার দেয়ার জন্য আমি কারও কাছে হাত পাততে চাই না। আমি মারাও যেতে পারতাম। যেহেতু আমি এখান থেকে আসতে পেরেছি আমি আর জীবন যুদ্ধে হার মানতে রাজি না।

তিনি বলেন, আমি আমার জায়গা থেকে এগিয়ে যাব। আমার দেশ আমাকে কি দিয়েছে কি দেয়নি সেটা বড় বিষয় নয়, আমি আমার দেশকে কি দিতে পেরেছি। আমার সমাজ কি দিয়েছে সেটা বিষয় নয়, সমাজকে আমি কি দিতে পেরেছি সেটা বড় বিষয়। আমি কারও উপকার করতে না পারি, কিন্তু কারও ক্ষতি করবো না। আমি যতটুকু পারব আরেকজনকে সাহায্য করতে চেষ্টা করব।