ক্রাচ আর মায়ের হাতে ভর করে পরীক্ষা কেন্দ্রে অদম্য সিয়াম
ভোলার লালমোহন উপজেলার ধলীগৌরনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০২২ সালে এসএসসিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এখন তিনি ধলীগৌরনগর ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএমটি কোর্সের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিচ্ছেন। প্রতিদিন প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূর থেকে তাকে ক্রাচ আর মায়ের হাতে ভর করে পরীক্ষা দিতে আসতে হচ্ছে। তার পরীক্ষা কেন্দ্র উপজেলা সদরের লালমোহন সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. সিয়াম। ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না তিনি। তাই চলাফেরায় ভরসা ক্রাচ আর মায়ের হাত। প্রতিদিন ক্রাচ আর মায়ের হাতে ভর করে এইচএসসি সমমানের বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ও টেকনোলজি (বিএমটি) কোর্সের প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন তিনি।
শিক্ষার্থী সিয়াম প্রতিবন্ধী হলেও পড়ালেখায় অনেক বেশি আগ্রহী। তার পড়ালেখা চালিয়ে নিতে যত ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হবে আমরা সেটি দেওয়ার চেষ্টা করবো। -উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা
সিয়াম পার্শ্ববর্তী তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝির পুকুর পাড় এলাকার মোতুরুন বেপারী বাড়ির গার্মেন্টসকর্মী শাহজাহানের ছেলে। পরিবারের তিন ভাই-বোনের মধ্যে সিয়াম সবার বড়। পরিবারের দরিদ্রতা আর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা হার মেনেছে সিয়ামের অদম্য ইচ্ছা শক্তির কাছে।
সিয়াম বলেন, আমি ঠিকমতো চলতে পারি না। তবুও প্রাথমিক থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। এজন্য সব সময় আমার পরিবার আমাকে সহযোগিতা করেছে। মা আমার জন্য সবচেয়ে বেশি কষ্ট করেন। কোথায়ও যেতে হলে মা-ই আমার সঙ্গে যান। আমার স্বপ্ন গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে একটি সরকারি চাকরি করার। চাকরি করে পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে চাই।
সিয়ামসহ মোট তিন সন্তানের জননী মোসা. নাছিমা বেগম। সিয়াম ছাড়া রয়েছে আরও দুই মেয়ে। তিনি বলেন, ছেলে সিয়াম জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়েও প্রতিবন্ধী। ওই মেয়ে একটুও চলাফেরা করতে পারে না। তবে ছেলে সিয়ামকে হাত ধরে সহযোগিতা করলে কিছুটা চলতে পারে। তবে বেশি হাঁটতে পারে না। মাঝেমধ্যে কোলেও নিতে হয়।
নাছিমা বেগম বলেন, সিয়ামের পড়ালেখা এই পর্যন্ত চালাতে আমার অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। আমার কষ্ট হলেও ছেলেটার স্বপ্ন পূরণের জন্য সব সময় তাকে অনুপ্রেরণা দিচ্ছি। আমি চাই, প্রতিবন্ধী হলেও আমার ছেলে মানুষের মতো মানুষ হোক।
আমি ঠিকমতো চলতে পারি না। তবুও প্রাথমিক থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার স্বপ্ন গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে একটি সরকারি চাকরি করার। চাকরি করে পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে চাই। -অদম্য সিয়াম
ধলীগৌরনগর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আকবর হোসেন বলেন, সিয়াম একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাকে আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারিভাবেও যদি সিয়ামের পরিবারকে সহযোগিতা করা হয়, তাহলে তার স্বপ্নযাত্রা সহজ হবে।
লালমোহন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা দেখি অনেক সুস্থ-সবল ছেলে-মেয়েরাও খুব বেশি পড়ালেখা করছে না। তবে শিক্ষার্থী সিয়াম প্রতিবন্ধী হলেও পড়ালেখায় অনেক বেশি আগ্রহী। আমি তার উচ্চশিক্ষার জন্য সফলতা কামনা করছি। সিয়ামের পড়ালেখা চালিয়ে নিতে যত ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হবে আমরা সেটি দেওয়ার চেষ্টা করবো।