সমুদ্রের সর্বনাশা হাতছানি; দু’টি পরিবারের স্বপ্নের মৃত্যু

সমুদ্রের সর্বনাশা হাতছানি
সমুদ্রের সর্বনাশা হাতছানি  © ফাইল ফটো

সমুদ্রের সর্বনাশা হাতছানিতে লাশ হলেন সম্ভাবনাময়ী দুই তরুণ। এরইসাথে মৃত্যু ঘটেছে তাদের ঘিরে গড়ে ওঠা দু’টি পরিবারের স্বপ্নেরও। বৃহস্পতিবার বিকেলে সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়ায় সমুদ্রসৈকতে নিখোঁজ হন কলেজছাত্র নাজমুল হাসান ইমন (১৯) ও দশম শ্রেণির ছাত্র রাজ (১৬)। দীর্ঘ তল্লাসির পর শুক্রবার সন্ধ্যায় সম্পর্কে খালাতো ভাই দুই তরুণের লাশ স্বজনদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। এদিকে, দুই ছাত্র যখন সাগরে ভেসে যাচ্ছেন তখন ঘাট ইজারাদারের লোকজনের কাছে সাহায্য চাইলেও তারা উদ্ধারে সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ অন্য শিক্ষার্থীদের। বশেষে লাশ বুঝে পেলেও শিক্ষার্থীদ্বয়ের স্বজন ও সহপাঠিদের মাঝে মাঝে শোকের মাতম চলছে।

জানা গেছে, গত বুধবার নারায়ণগঞ্জ থেকে ৯ ছাত্র সীতাকুণ্ডে বেড়াতে আসে। বৃহস্পতিবার তারা সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়, ইকো পার্ক ঘুরে দুপুর ২টার দিকে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকতে ঘুরতে যায়। বিকেলের দিকে সাগরে গোসল করতে নেমে ইমন ও রাজ ভেসে যান। এরপর ফায়ার সার্ভিস, কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী সাগরে ডুবুরি নামিয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। এ অভিযান রাতভর চালিয়েও গুই শিক্ষার্থীর কোনো সন্ধান মেলেনি। পরে গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে আবারও অভিযান শুরু করা হয়। ডুবুরিদলগুলো আবারও সাগরে নেমে জাল ফেলে। পরে বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৪টার মধ্যে লাশ দুটি উদ্ধার হয়।

লাশ উদ্ধারের সময় সেখানে উপস্থিত ছিল দুই শিক্ষার্থীর স্বজন ও বন্ধুরা। সেখানে ইমনের বাবা খোকন বলেন, ‘তারা দুই দিন বেড়ানো শেষে বৃহস্পতিবার রাতের গাড়িতে ফেরার কথা ছিল। দুপুর ২টার দিকে ইমন ফোন করে জানায়, তারা খুব বেড়াচ্ছে, আনন্দ করছে। কিন্তু এক ঘণ্টা পরেই জানতে পারি তারা নিখোঁজ।’

রাজের সহপাঠী আরিফ হোসেন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরে আমরা বাঁশবাড়িয়া সাগরপাড়ে আসি। এখানে ঘোরাঘুরির একপর্যায়ে আমরা ঘাট ইজারাদারদের লোহার ব্রিজের ওপর দিয়ে হেঁটে সাগরে যেতে চেষ্টা করি। কিন্তু সেখানে থাকা ঘাট ইজারাদারের লোক সায়েদ, সেলিম ও মাসুদুর রহমান লোহার ব্রিজে উঠতে টাকা লাগবে বলে জানায়। তখন আমরা ব্রিজে না উঠে পাশে পানিতে নেমে পড়ি। ৯ সঙ্গীর মধ্যে একজন কাপড়সহ অন্যান্য জিনিসপত্র দেখভালের দায়িত্বে ছিল। বাকি আটজন পানিতে গোসল ও দুষ্টুমির একপর্যায়ে স্রোতের কবলে পড়েন। এ সময় ছয়জন উঠে আসতে পারলেও ইমন ও রাজ উঠতে পারেনি। এ সময় ঘাট ইজারাদারের লোকদের কাছে সহযোগিতা চাইলেও তারা এগিয়ে আসেনি।’

বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী জাহাঙ্গীর বলেন, সাগরপাড়ের ঘাটের ইজারাদার রাজা কাসেম অনুমতি না নিয়ে অবৈধ কিছু স্থাপনা তৈরি করে লোকজনকে বেড়াতে উৎসাহিত করছেন। কিন্তু বৈধ সমুদ্রসৈকত না হওয়ায় সেখানে কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা নেই সরকারিভাবে। এ কারণে এ রকম একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মন্তব্য তার।


সর্বশেষ সংবাদ