শিক্ষার্থীদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ঢাবির ‘প্রজেক্ট ক্র্যাক প্লাটুন’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ছাত্র কাজী সাজ্জাদুর রহমানের উদ্যোগে ক্যাম্পাসে গড়ে উঠছে, 'প্রজেক্ট ক্র্যাক প্লাটুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়'। মূলত ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদেরকে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দেয়ার উদ্দেশ্যে গড়ে তোলা হয়েছে। এ বছর আগস্ট মাসে যাত্রা শুরু হয় এই উদ্যোগের।
২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র সাজ্জাদ থাকেন জহুরুল হক হলে। 'প্রজেক্ট ক্র্যাক প্লাটুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়' নিয়ে তার সাথে ১৭ সেপ্টেম্বর আলাপ হয় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। প্রজেক্ট ক্র্যাক প্লাটুনের আইডিয়া কিভাবে শুরু হয়েছিলো জানতে চাওয়া হয় তার কাছে।
সাজ্জাদ বলেন, 'আমি যখন এমএমএ (মিক্সড মার্শাল আর্ট) শিখতে শুরু করি তখন আমি ক্লাস নাইনের ছাত্র। পরিবারকে না জানিয়ে এটা শুরু করায় আমার কাছে প্রশিক্ষণ ফী পর্যন্ত ছিলো না। তখন আমাকে বিনামূল্যে এমএমএ শেখান এডভোকেট ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী স্যার। আমাকে আরও প্রশিক্ষণ দেন মামুর সাদী স্যার। আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসি, তখন বিভিন্ন ঘটনা, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানির বিষয়টি আমার চোখে পরে। তখন আমি সিদ্ধান্ত নেই, ক্যাম্পাসে এমন একটি প্রশিক্ষণের আয়োজন করবো যেন একদম সামান্য খরচে একজন ছাত্র/ছাত্রী আত্মরক্ষার টেইনিং নিতে পারে।
আরও পড়ুনঃ চাকরি খোঁজার বয়সেই চাকরি দিচ্ছেন ইউএপি’র আদর
তিনি আরও বলেন, অনেক সময় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে সম্ভব হয় না অনেক টাকা ব্যয় করে প্রশিক্ষণ নেয়ার। এছাড়া ছাত্রীদের বেলায় পারিবারিক সাপোর্টও থাকে না। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে মেয়েদেরই আত্মরক্ষা শেখা বেশি প্রয়োজন। তাই ক্যাম্পাসের ভিতরে খুবই সামান্য খরচে এই টেইনিং এর আয়োজন করেছি।'
প্রশিক্ষক সাজ্জাদ 'প্রজেক্ট ক্র্যাক প্লাটুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়' এই নামকরণের একটি বিশেষ ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন,' ১৯৭১ এ মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বিশেষ দল ছিলো, যাদেরকে বলা হতো ক্র্যাক প্লাটুন। এই দলে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ছিলেন, কিন্তু অসাধারণ প্রশিক্ষণ দক্ষতায় তারা হানাদারদের নাস্তানাবুদ হাল করেছিলো। আমি চাই, এমনভাবেই ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা মনোবলে আর দৈহিক ভাবে যেন সব পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারে। অন্যায় প্রতিহত করতে পারে।'
এ বছর আগস্ট মাসে শুরু হয়েছে প্রজেক্ট ক্র্যাক প্লাটুন এর প্রশিক্ষণ। ৮-১০ জন প্রশিক্ষণার্থী আছেন প্রজেক্টে। প্রতি শুক্রবার আর শনিবার সকাল ৮টায় বটতলা বা গ্রাফিতি চত্বরে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এখানে ঠিক কি প্রক্রিয়ায় আত্মরক্ষা শেখানো হয় সে বিষয়ে সাজ্জাদ জানান, ' এমএমএ-তে ২ ধরনের টেকনিক আমি শিখাচ্ছি। শুক্রবার স্ট্রাইকিং এবং শনিবার গ্র্যাপলিং শেখানো হয়। আমি স্টুডেন্টদের সাপ্তাহিক হোম-ওয়ার্ক দিয়ে দেই যেন তারা বাকি দিনগুলোতেও প্র্যাকটিস করে।'
এখানে ছাত্রদের যে প্রক্রিয়ায় আত্মরক্ষা শেখানো হচ্ছে, এতে তারা মিক্সড মার্শাল আর্টের মূল কনসেপ্ট আর টেকনিক শিখতে পারছে। পাশাপাশি তাদেরকে বডি ফিটনেসের জন্য তৈরি করা হচ্ছে।' সাজ্জাদের কাছ থেকে জানা যায়, এখানে তিনি যে পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, সেটা প্র্যাকটিস বেইজড। একজন শিখে আরও ৩ জনকেও শেখানোর দক্ষতা অর্জন করছে।
ক্যাম্পাসে এরকম একটি উদ্যোগে বেশ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আর সমর্থন পাচ্ছে প্রজেক্ট ক্র্যাক প্লাটুন। বক্তব্যের শেষে আশাবাদ ব্যক্ত করে সাজ্জাদ বলেন, 'এই প্রশিক্ষণ তখনই সফল মনে হবে যখন ছাত্ররা কোন অন্যায় দেখে ভিডিও করবে না, বরং রুখে দাঁড়াবে।'