লিভারপুলে ভর করেছে 'কালো জাদু'!
লিভারপুল যেন নতুন এক রহস্যময় অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। প্রতিপক্ষ যতই শক্তিশালী হোক না কেন, ম্যাচের ৮০ মিনিট পেরোনোর পর হঠাৎ করেই সব পাল্টে যায়। লিভারপুলে যেন ভর করেছে ‘কালো জাদু’ এক অদৃশ্য শক্তি, যা প্রতিপক্ষের কৌশলকে মুহূর্তেই ভেঙে ফেলে। শেষ সময়ে এমন বারবার বিস্ময়কর প্রত্যাবর্তনে শুধু সমর্থক নয়, ফুটবলবিশ্বও বিস্ময়ে তাকিয়ে।
গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন লিগের সেমিফাইনালে বাদ পরার পর অনেকে ভেবেছিল, এ মৌসুমে দল হয়তো কিছুটা পথ হারাবে। তবে কোচ আর্নে স্লটের অধীনে লিভারপুল যেন আরও ক্ষুধার্ত, আরও নিষ্ঠুর। মাঠে তাদের পারফরম্যান্স দেখলেই বোঝা যায়—এই দল ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজা পর্যন্ত লড়তে জানে।
সবচেয়ে চমকপ্রদ দৃষ্টান্ত ছিল চ্যাম্পিয়নস লিগে অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে লড়াই। অ্যানফিল্ডের আলোঝলমলে স্টেডিয়ামে শুরুটা দুর্দান্ত হলেও লিভারপুলকে ম্যাচ শেষে আবার নিজেদের শক্তি প্রমাণ করতে হয়। অ্যান্ডি রবার্টসনের গোলের পর সালাহ স্কোরলাইন ২-০ করে ফেলেন মাত্র ৬ মিনিটে। কিন্তু অ্যাথলেটিকো, যাদের রক্ষণ বিশ্ববিখ্যাত, তারা ফিরে আসে লরেন্টের জোড়া গোলে। ম্যাচ যখন ড্রয়ের দিকে যাচ্ছিল, তখনই আসে সেই ‘জাদুর ছোঁয়া’। ৯০+৪ মিনিটে কর্নার থেকে ভ্যান ডাইক হেড করে বল জালে পাঠান — অ্যানফিল্ড উল্লাসে ফেটে পড়ে।
এই গল্পটা কিন্তু নতুন নয়। গত ছয় ম্যাচে লিভারপুল পাঁচবার গোল করেছে ৮০ মিনিটের পরে। শুধু গোলই নয়, প্রায় প্রতিবারই সেই গোল দলকে এনে দিয়েছে জয়। যেন নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলায় তারা নিজের মতো একটা ‘শেষ অধ্যায়’ যোগ করে নেয়—যেখানে রচিত হয় নতুন কাব্য।
লাস্ট ছয় ম্যাচে লিভারপুলের ফলাফল (সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে):
অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ (চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) – ২-১ জয়
নির্ধারিত সময়ের একেবারে শেষভাগে, অতিরিক্ত সময়ে (৯০+২ মিনিটে) আসে জয়সূচক গোল।
উলভারহ্যাম্পটন (প্রিমিয়ার লিগ) – ৩-১ জয়
৮৫ মিনিটের পর দুই গোল করে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয় লিভারপুল।
নিউক্যাসল ইউনাইটেড – ২-১ জয়
৮৮ মিনিটে সমতা এবং ৯০+৩ মিনিটে জয়সূচক গোল।
আর্সেনাল – ১-১ ড্র
ম্যাচের ৮৯ মিনিটে সমতায় ফেরে লিভারপুল, হারের হাত থেকে রক্ষা।
লেস্টার সিটি (ইএফএল কাপ) – ২-১ জয়
৮১ মিনিটে জয় নিশ্চিত করে অলরেডরা।
অ্যাস্টন ভিলা – ৩-০ জয়
যদিও প্রথমার্ধেই লিড নেয়, তবে শেষ গোলটি আসে ৮৯ মিনিটে।
সালাহ তো এই জাদুর অন্যতম রচয়িতা। মৌসুমের শুরু থেকেই তিনি ভয়ংকর ধারায় আছেন। গোল করছেন, করাচ্ছেন, সুযোগ তৈরি করছেন। চ্যাম্পিয়নস লিগে এরই মধ্যে গোল করে আবারও প্রমাণ করেছেন, তিনিই দলের অনুপ্রেরণা। এমনকি এই ম্যাচে তার প্রথমার্ধে গোল না হলে হয়তো ভ্যান ডাইকের শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তা আসত না।
লিভারপুলের এই ‘শেষ মুহূর্তের রাজত্ব’ কি কেবল মৌসুমের শুরুতে দেখা যাচ্ছে, নাকি এটি টিকে থাকবে পুরো মৌসুম জুড়ে? প্রতিপক্ষরা এখন থেকে শুধু শুরু নয়, ম্যাচের শেষ ১০ মিনিটকেও ভয় পাবে। আর যদি এই "কালো জাদু"র ধারা অব্যাহত থাকে, তবে লিভারপুল যে শুধু চ্যাম্পিয়নশিপ ধরে রাখবে না, বরং নতুন করে ইউরোপের সিংহাসনেও দখল বসাতে পারে—তা বলার অপেক্ষা রাখে না।