বিকেএসপি থেকে ন্যাশনাল টিম, স্কুল ফাঁকি দিয়ে খেলার মাঠে পড়ে থাকতেন জয়
দল যখন ব্যাটিং বিপর্যয়ে, জয় তখন একপ্রান্তে মাটি কামড়ে পড়ে আছেন। ফলোঅন যখন চোখ রাঙাচ্ছে বাংলাদেশকে ঠিক তখনি যেন ত্রাণকর্তা হিসেবে এলেন জয়। খেললেন সত্যিকার টেস্ট মেজাজের এক ইনিংস। দলের বিপদের সময়ে ৩৬৩ মিনিট ক্রিজে পড়ে থেকে করলেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি।
৩২৬ বলে ১৫ বাউন্ডারি আর ২ ছক্কায় ১৩৭ রান করেন জয়। যেটি দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্টে বাংলাদেশি কোনো ব্যাটারের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ।
ডানহাতি ব্যাটার জয় ২০১৯ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্রিকেট দল-এর হয়ে লিস্ট এ ক্রিকেট-এ অভিষেক করে। ২০১৯ ও ২০১৬ আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ দলে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন।
পড়াশোনায় মন বসতো না অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার মাহমুদুল হাসান জয়ের। স্কুল ফাঁকি দিয়ে পড়ে থাকতেন খেলার মাঠে। এ জন্য মারও খেতেন বাবার হাতে। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ে বড় অবদান রেখেছিলেন জয়।
মাহমুদুল হাসান জয় ২০০০ সালের ১৩ই নভেম্বর চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলায় গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের পশ্চিম লাড়ুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আব্দুল বারেক পূবালী ব্যাংকের কর্মকর্তা এবং মাতা হাছিনা বেগম একজন গৃহিণী।
আরও পড়ুন: জয়ের প্রথম সেঞ্চুরি, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশেরও প্রথম
ছেলের ডানপিটে স্বভাবের কথা জানালেন মাহমুদুল হাসান জয়ের বাবা আব্দুল বারেকও। তিনি বলেন, পড়াশোনায় মন না থাকলেও ক্রিকেটে খুব আগ্রহ ছিল জয়ের। অনেক শাসন করেছি কিন্তু বইয়ে মনযোগ ফেরাতে পারিনি। যখন দেখলাম প্রতিটি খেলায় প্রথমস্থান অর্জন করতো, পুরস্কার নিয়ে আসতো। তখন তাকে চাঁদপুর ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করে দেই। মায়ের সঙ্গে চাঁদপুর শহরে থেকে দুই বছর কোচ শামীম ফারুকীর কাছে প্রশিক্ষণ নেয় জয়। এরপর ওর এক চাচা ওকে বিকেএসপিতে নিয়ে যান।
ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের মালিক বনে গেলেন জয়। দুর্দান্ত টেম্পারমেন্ট, আত্মবিশ্বাসের সর্বোচ্চটা দেখিয়ে ডারবানের প্রতিপক্ষের উপর আধিপত্য বিস্তার করেছেন জয়।
এই মাহমুদুল হাসান জয় অভিষেকেই শিকার হন সমালোচনার। গেল বছর ডিসেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে মিরপুরে সাদা পোশাকে অভিষেক। তবে অভিষেকটা আপন রঙে রাঙাতে পারেননি জয়। প্রথম ইনিংসেই ফিরেন শূন্য রানে! এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে করেন মোটে ৬ রান। দলের ভরাডুবি, ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স – সব মিলিয়ে অভিষেকেই সমালোচনার বৃত্তে নিজেকে জড়ান এই তরুন ওপেনার।
এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও সুযোগ পেলেন। আর সুযোগ পেয়ে এবার নিজেকে মেলে ধরলেন। মাউন্ট মঙ্গানুইতে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের ম্যাচে খেললেন ৭৮ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। নিউজিল্যান্ডের বাউন্সি উইকেট, পেস দাপট, বিরুদ্ধ কন্ডিশনে জয়ের ইনিংসট নিঃসন্দেহে অন্যতম সেরা। ওই ইনিংস দিয়ে যেন খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন এই তরুন সম্ভাবনাময়ী তারকা।
২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু টি২০ কাপ প্রতিযোগিতায় গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের হয়ে টি২০ ক্রিকেটে অভিষেক করে। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ১০ ম্যাচে ৩৭.৭০ গড়ে করেন ৬৫৮ রান। ২টি শতকও আছে। যুব বিশ্বকাপজয়ী এই ক্রিকেটারের জাতীয় ক্রিকেট লিগে পারফরম্যান্স ছিল ঈর্ষণীয়। ২ সেঞ্চুরি ও ১ হাফ সেঞ্চুরিতে ৩৪৫ রান করেছেন। সর্বোচ্চ রান ১২১, গড় রান ৫৭.৫০। জাতীয় দলে ৩ টেস্টে ৪ ইনিংসে করেন ৫৫.২৫ গড়ে করেন ২২১ রান।