খেলার ফাঁকে পড়েও আকবর পেয়েছেন জিপিএ ফাইভ

  © সংগৃহীত

আকবর আলী নামটি এখন সবার মুখে মুখে , ফেসবুকের পোস্ট কমেন্টে ছড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ব জয়ের নায়ক তিনি। অনেকেই ভালবেসে তার নামের আগে ‘গ্রেট’ তকমাটি জুড়ে দিচ্ছেন মুঘল সম্রাট আকবরের সাথে মিল রেখে। বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ এনে দিয়ে সত্যিই ‘গ্রেট’ বনে গেছেন এই তরুণ ক্রিকেটার। তবে নিজের নামের সাথে গ্রেট তকমা অনেক আগেই জুড়ে নিয়েছেন তিনি। তার ইনস্টাগ্রাম আইডিতে লেখা আছে ‘আকবর দ্য গ্রেট’। নিজের ভবিষ্যৎ আগেই দেখেছিলেন তিনি?  

বিশ্বকাপ জয়ী এই অধিনায়ক অবশ্য এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বুদ্ধিদীপ্ততার সাথেই।‘আমি দেখেছি পৃথিবীতে তিনজনের নামের সঙ্গে গ্রেট আছে। আকবর আলেকজান্ডার ও অশোকা। যেহেতু আমার নাম আকবর এই কারণেই মিলিয়ে গ্রেট লেখা।’

আকবর আলীর জন্ম আর বেড়ে ওঠা রংপুর শহরে। শহরের জুম্মাপাড়ায় তাদের বাড়ি। চার ভাই আর এক বোনের মধ্যে তিনিই সবার ছোট। বিশ্বকাপ চলাকালে গত ২২ জানুয়ারি যমজ বাচ্চা প্রসব করতে গিয়ে মারা যান একমাত্র বোন। সেই শোক নিয়েই বিশ্বাকপ জয় করে এনেছেন দেশের জন্য।

ব্যবসায়ী পিতা আর গৃহিণী মায়ের সংসারে বেশ আদরেই বেড়ে উঠেছেন আকবর।  বড় ভাই মুরাদ হোসেনকে দেখে ক্রিকেটার হওয়ার স্বাদ জাগে মনে। শুরুটা হয়েছিলো অঞ্জন সরকারের হাত ধরে। রংপুর জিলা স্কুলের মাঠে প্রথম ব্যাটে বলের হাতেখড়ি হয় আকবর আলীর। নিজের জেলার দুই ক্রিকেটার সোহরাওয়ার্দী শুভ আর নাসির হোসেনের নাম দেখে মনের মধ্যে বড় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন গেঁথে যায় পাকাপাকিভাবে।

জেলা পর্যায়ে বাছাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন বিকেএসপিতে ২০১২ সালে। এরপরের গল্প সামনে এগিয়ে চলার। বিকেএসপির বয়সভিত্তিক দলগুলোতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে শুরু হয়েছিলো। এরপর খেলেছেন অনূর্ধ্ব-১৭ দলে। আর এবার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের নেতৃত্ব কাধে তুলে বিজয় করেছেন বিশ্বকাপ।

দিনের সবটুকু সময়ে বলা যায় ক্রিকেটে মজে থাকেন। ব্যাট আর বলের দুনিয়ায় পড়াশোনারও গুরুত্ব দেন বেশ ভালোই। ভালো খেলার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে একাডেমিক শিক্ষা। ক্রিকেটের ফাঁকে ফাঁকে বই-খাতার সাথে দেখা হয়েছে কমই। তবে এই কম দেখাতেই এসএসসিতে মানবিক শাখা থেকে পেয়েছেন জিপিএ ফাইভ।

একজন ভালো ক্রিকেটার হওয়ার জন্য আকবরের পরিশ্রমের কমতি নেই। কাকভোরে ঘুম থেকে উঠেই ছুটে যান খেলার মাঠে। হাড়ভাঙা খাটুনির পর হোস্টেলে ফিরেই আবার ছুটতে হয় ক্লাসের দিকে। ক্লান্ত শরীরে পড়াশোনা ঢুকতে চায় না মাথায়। ঘুমে চোখ ঢুলুঢুলু হয়ে পড়ে ঠিকই কিন্তু বুকে লালন করা স্বপ্ন আর পণ তাকে জাগিয়ে রাখে। আর সাফল্যও আসতে শুরু করেছে তাই।

অবশ্য তার নিজের একটি নীতি আছে এ ব্যাপারে। যখন পড়ার বই হাতে নেন মাথায় শুধু পড়াই থাকে। আর খেলার সময়ে শুধুই খেলা।


সর্বশেষ সংবাদ