যে কারণে আজকের ম্যাচ জিততেই হবে মাশরাফি-সাকিবদের
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সপ্তম ম্যাচে আজকের প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। নিজেদের ছয়টি ম্যাচই হেরে যাওয়ায় তাদের সেমিফাইনালের সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেলেও বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় ছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করছেন না। ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন আফগান অধিনায়ক গুলবদন নাইব।
এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরমেন্স তাদের তুলনায় ভাল হলেও আফগানিস্তানের অধিনায়ক নিজেদেরকে বাংলাদেশের চেয়ে ‘দুর্বল দল’ বা ‘আন্ডারডগ’ হিসেবে মানতে নারাজ। আজ সোমবার বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের পরে পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলা বাকি থাকবে আফগানিস্তানের।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ফর্ম এবং পারফরমেন্সের বিবেচনায় যদিও আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি হওয়ার কথা ছিল সবচেয়ে সহজ, পারিপার্শ্বিক নানা কারণে সেই ম্যাচটিই হয়তো হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ম্যাচ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বেশ কয়েকটি কারণে বাংলাদেশের জন্য এই ম্যাচটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। আর সেসব কারণেই এবারের বিশ্বকাপের অন্যান্য ম্যাচের চেয়ে অনেক ক্ষেত্রে আলাদা এই ম্যাচ। তারা বলছেন, ছয়টি ম্যাচের সবকটিতে হারা আফগানদের আর হারানোর কিছু নেই। এবারের বিশ্বকাপে অন্তত একটি জয় চায় তারা। আর নিজেদের শেষ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ভাল পারফর্ম করে দলের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে।
আর সেই জয়টা যে তারা বাংলাদেশের বিপক্ষেই তুলে নিতে চায়, সেবিষয়টিও বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথেই সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেন আফগান অধিনায়ক। আফগানদের এই মরীয়া মানসিকতা বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের প্রধান অনুপ্রেরণা হতে পারে। বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচের ভেন্যু সাউদাম্পটনের রোজ বোল স্টেডিয়ামে ২২শে জুন ভারতের বিপক্ষে খেলেছে আফগানিস্তান। একদিনের ব্যবধানে আবার একই মাঠে নামছে তারা।
ভারত-আফগানিস্তান ম্যাচটি যেই পিচে হয়েছে, সে পিচেই হবে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচও। এবারের আসরে ওভালের যেই পিচে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ হয়েছিল, বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচটিও হয়েছিল একই পিচে। কিন্তু ঐ দুই ম্যাচের মধ্যে তিনদিনের ব্যবধান ছিল। একদিনের ব্যবধানে একই পিচে খেলা হলে ভারত-আফগানিস্তান ম্যাচের মতই দারুণ স্পিন সহায়ক উইকেট হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
কয়েকদিন ধরে সাউদাম্পটনে থাকার কারণে এবং এই মাঠে এরই মধ্যে একটি ম্যাচ খেলায় আবহাওয়ার সাথে খাপ খাওয়ানো বা মাঠের সাথে পরিচিতির হিসেবে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের চেয়ে আফগানরা কিছুটা সুবিধা পেতে পারেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ইংল্যান্ডের আবহাওয়া অনুযায়ী তাদের পিচ তৈরির ধরণের হিসেব অথবা এবারের বিশ্বকাপের দলগুলোর বোলিংয়ের পরিসংখ্যানের হিসেব - যে কোনো ভাবে বিবেচনা করলে সহজেই বোঝা যায় যে ঐ কন্ডিশনে একটি দলের বোলিংয়ের মূল অস্ত্র পেসাররা। তবে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচে এই ধারার বিপরীত দেখা যেতে পারে।
ভারত-আফগানিস্তান ম্যাচে আফগান স্পিনারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের কারণে খুব একটা বেশি রান তুলতে পারেনি ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপ। আর ঐ পিচেই একদিনের ব্যবধানে ম্যাচ হওয়ায় উইকেট আরো বেশি স্পিনারদের সহায়তা করবে বলে মনে করছেন তারা।
তারা বলেন, এই উইকেটে যত বেশি সময় খেলা হবে, পিচ ততই স্পিন সহায়ক হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। কাজেই দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিং করা দল উইকেট থেকে বেশি টার্ন পেতে পারে। তবে ম্যাচের দিনের আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, প্রায় সারাদিনই আকাশ মেঘলা থাকতে পারে এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণও থাকবে বেশি। সেই হিসেবে স্পিনাররা যথেষ্ট টার্ন না'ও পেতে পারে।
টুর্নামেন্টের প্রথম কয়েকটি ম্যাচে দলের খেলোয়াড়দের ফিটনেস নিয়ে কোনো সমস্যার কথা শোনা না গেলেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি মোসাদ্দেক হোসেন এবং মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। এছাড়া রোববার অনুশীলনের সময় মেহেদি হাসান মিরাজও চোট পান বলে খবর পাওয়া যায়।
ক্রীড়া সাংবাদিক তাওসিয়া ইসলাম জানান, আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে অফস্পিনার মোসাদ্দেক হোসেন একাদশে আসতে পারেন বলে ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে ইঙ্গিত দিয়েছেন বাংলাদেশের কোচ স্টিভ রোডস। আর কিছুটা আঘাত পাওয়া মিরাজও খেলার জন্য পুরোপুরি ফিট রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন।
এদিকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে পিঠের চোটের কারণে বাংলাদেশ একাদশে ছিলেন না পেস বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ম্যাচের পর সাইফউদ্দিনের ইনজুরির সত্যতা এবং এরপর তার খেলোয়াড়-সুলভ মনোভাব ও পেশাদারিত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে একটি খবর প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের গণমাধ্যমে, যা সামাজিক মাধ্যমে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে এই প্রসঙ্গটি উঠে আসলে কোচ স্টিভ রোডস যথেষ্ট ক্ষোভ এবং আক্ষেপ প্রকাশ করেন। তাওসিয়া ইসলাম বলেন, একটি গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টের মধ্যে দলের একজন খেলোয়াড় সম্পর্কে ভিত্তিহীন খবর প্রচার দলের মনোবলের জন্য যে ক্ষতিকর হতে পারে, সে বিষয়টি সাংবাদিকদের বিবেচনা করার অনুরোধ করেন কোচ। চোটের কারণে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে মাঠে না নামা সাইফুদ্দিন রোববার দলের সাথে অনুশীলন করেছেন।
তিনি বলেন, অনুশীলনের সময় কোচ সাইফুদ্দিনকে দিয়ে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সব অনুশীলনই করিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনেও জানিয়েছেন যে ফিজিও যদি শেষ মুহুর্তে কোনো নেতিবাচক রিপোর্ট না দেন তাহলে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তাকে খেলানোর পক্ষপাতী তিনি। খবর: বিবিসি বাংলা