ইংল্যান্ডে অন্য এক বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পথশিশুরা
কিছুদিন পরেই ইংল্যান্ডে শুরু হচ্ছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। তার আগে শনিবার থেকে শুরু হওয়া অন্য এক বিশ্বকাপে বাংলাদেশসহ দশ দেশের পথশিশুরা অংশ নিচ্ছে। মঙ্গলবার লর্ডসে প্রতিযোগিতার ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে৷
চার মেয়ে ও চার ছেলের সমন্বয়ে বাংলাদেশ দল গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে সানিয়া ও রাসেল৷ দু’জনেরই বয়স ১৫ এবং তাদের গল্পও প্রায় একইরকম। গৃহকর্ত্রীর অত্যাচার থেকে বাঁচতে সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে বাড়ি ফেরার পথ না চেনায় কিছুদিন পথেই বাস করতে হয়েছে সানিয়া মির্জাকে৷
পরে ‘লোকাল এডুকেশন অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’ বা লিডো নামের এক সংগঠন তাকে আশ্রয় দেয়৷ সংগঠনটি পথশিশুদের নিয়ে কাজ করে। অভাবের কারণে সানিয়ার বাবা মেয়েকে কাজ করতে শহরে এক দম্পতির কাছে পাঠিয়েছিলেন৷ কিছুদিন সেখানে ভালোই ছিল সানিয়া৷ কিন্তু ঐ দম্পতির প্রথম সন্তান জন্ম নেয়ার পর সানিয়ার উপর অত্যাচার শুরু করেন তারা।
এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সানিয়া সেখান থেকে পালিয়ে ট্রেন ধরে কমলাপুর চলে যায়। তারপর সে বাবার কাছে ফিরতে গিয়ে বুঝতে পারে যে, সে বাড়ির পথ চেনে না। এরপর থেকেই সানিয়ার আশ্রয়স্থল লিডো। খবর: ডয়েচে ভেলে।
সানিয়ার সহখেলোয়াড় রাসেলের মা ছেলেকে ভাইয়ের কাছে রেখে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন৷। রাসেলের বাবা তার জন্মের আগেই মারা গেছেন। এই অবস্থায় মামা-মামি তাকে অত্যাচার করলে সেখান থেকে সেও পালিয়ে যায়। পরে তারও আশ্রয় হয় লিডো-র আশ্রয়কেন্দ্রে।
এই আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মোট আটজন শিশুই পথশিশুদের ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে। বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়ে রোমাঞ্চিত সানিয়া ও রাসেল৷ সানিয়া বলছে, ‘এটা স্বপ্নপূরণের মতো। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে, আমি বিশ্বকাপ খেলবো।’
রাসেল বলছে, ‘আমি এমন জায়গায় ক্রিকেট খেলবো যেখানে খেলাটার জন্ম হয়েছে। আমি লর্ডসে খেলবো। আমার মনে হয় না, অনেক মানুষ এমনটা বলতে পারবে।’
লন্ডনভিত্তিক দাতব্যসংস্থা ‘স্ট্রিট চাইল্ড ইউনাইটেড’ প্রথমবারের মতো পথশিশুদের জন্য ক্রিকেট বিশ্বকাপের আয়োজন করেছে। এর আগে অবশ্য তারা চারবার পথশিশুদের জন্য ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজন করেছিল।
পথশিশুদের বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এ ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। পথশিশুদের পাচার ও নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঝুঁকি থাকে বলে জানান বিশ্লেষকরা।
জাতিসংঘের হিসেবে বিশ্বে পথশিশুদের সংখ্যা দেড়শ মিলিয়ন পর্যন্ত হতে পারে। এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় পরিচালিত এক জরিপ বলছে, বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা প্রায় সাত লক্ষ। এরমধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বাস ঢাকাতে।