বিশ্বকাপ ২০১৯ স্পট লাইটে থাকা শীর্ষ ৫ অভিষিক্ত তারকা, নেই মিরাজ
আসন্ন ৩০ মে ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলসে শুরু হতে যাচ্ছে আইসিসি বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসর। বিশ্বকাপ অবশ্য ভবিষ্যত তারকাদের একটা মঞ্চও বটে। এ টুর্নামেন্ট দিয়ে ৫০ ওভার বিশ্বকাপে অভিষেক হবে বেশ কিছু খেলোয়াড়ের। এদের মধ্যে কতিপয় খেলোয়াড় ইতোমধ্যেই তাদের সংক্ষিপ্ত ক্যারিয়ারের ঝলক প্রদর্শন করেছেন। স্পট লাইট থাকবে এমন শীর্ষ পাঁচ অভিষিক্ত খেলোয়াড়। তবে এ তালিকায় নাম নেই বাংলাদেশের মেহেদী হাসান মিরাজের।
এবারের টুর্নামেন্টকে আরো চিত্তাকর্ষক ও প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ করতে আইসিসি গ্রুপ পর্বের পরিবর্তে রাউন্ড রবীন পদ্ধতিতে এবং কেবলমাত্র র্যাংকিংয়ের শীর্ষ দশ দল নিয়ে আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
জসপ্রিত বুমরাহ
অভিষেক হওয়ার তিন বছরের মধ্যেই ভারতীয় দলের পেস আক্রমণের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জসপ্রিত বুমরাহ। সিমিত ওভার ম্যাচের যে কোন পর্যায়ে অধিনায়ক বিরাট কোহলির আশা ভরসার প্রতিক হয়ে উঠেছেন তিনি। ভিন্ন ধর্মী এ্যাকশন, বাউন্সার, টো বরাবর ইয়র্কার এবং স্লোয়ার মারতে দারুন সক্ষম তিনি। অর্থাৎ একজন আধুনিক ফাস্ট বোলার হওয়ার সব যোগ্যতাই রয়েছে তার মধ্যে।
২০১৮ সালটা ছিল বুমরাহর স্বপ্নের বছর। এ বছর তিনি কেবল টেস্ট দলে জায়গা পেয়েছেন- তাই নয়। ওয়ানডে ক্রিকেটেও তার সংখ্যাটা বিস্ময়কর। ২০১৮ সালে ১৩ ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ১৬ দশমিক ৬৩ গড়ে তিনি শিকার করেছেন ২২ উইকেট। যেখানে তার ইকোনোমি রেট ৩ দশমিক ৬২ এবং স্ট্রাইক রেট ২৭ দশমিক ৫।
বর্তমানে আইসিসি ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে এক নম্বর বোলার তিনি। খুব কম আসরেই শক্তিশালী বোলিং আক্রমণ নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে গেছে ভারত। তবে এবারই প্রথম দারুন একটি পেস বোলিং বিভাগ নিয়ে বিশ্বকাপে যাচ্ছে দলটি। বুমরাহর দুর্দান্ত ফর্মের কারণেই অনেক শক্তিশালী ভারতীয় পেস বোলিং আক্রমণ।
জেসন রয়
নিঃসন্দেহে ফেভারিট হিসেবে এবার বিশ্বকাপ শুরু করবে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। দলে রয়েছে বেশ কয়েকজন ম্যাচ উইনার। ওপেনার হিসেবে জেসন রয় থাকায় আসন্ন বিশ্বকাপে তাদেরকে হারানোটা যে কোন দলের জন্যই কঠিন হবে।
২০১৫ সালের ৮ মে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়ার পর ৭৩ ম্যাচে ৩৮ দশমিক ৫৬ গড়ে অবিশ্বাস্য ১০৫ দশমিক ৫১ স্ট্রাইক রেটে তিনি ২৬৬১ রান করেছেন। বর্তমান সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে তিনশ প্লাস রান খুবই সাধারণ বিষয় এবং যেকোন বড় সংগ্রহ টপকাতে ইংল্যান্ড দলের মাস্টারে পরিণত হয়েছেন রয়।
তার ধ্বংসাত্মক ধারার ব্যাটিংয়ে গত বছর মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩০৫ রান সহজেই টপকেছে ইংল্যান্ড। রেকর্ড ভাঙ্গা তার ১৫১ বলে ১৮০ রানের সুবাদে ৭ বল বাকি থাকতেই ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত হয়েছে। এ বছর তার ৬৫ বলে সেঞ্চুরির সুবাদেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বারবাডোজে স্বাগতিক দলের ৩৬১ রানের পাহাড় সহজেই টপকে জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড।
কাগিসো রাবাদা
সাবেক কিংবদন্তী বোলার ‘সাদা বিদ্যুৎ’ খ্যাত এ্যালান ডোনাল্ডের মতে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বকালের সেরা ফাস্ট বোলার হতে যাওয়া কাগিসো রাবাদা হবেন বিশ্বকাপে আরেক চিত্তাকর্ষক অভিষিক্ত।
বিশ বছর বয়সে এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়ার পর রাবাদা ২৬ দশমিক ৪৩ গড়ে এ পর্যন্ত ৬৬ ম্যাচে ১০৬ উইকেট শিকার করেছেন। আইসিসি ওয়ানডে বোলিং র্যাংকিংয়ে রাবাদা বর্তমানে ৫ নম্বরে আছেন। গত বছর উইজডেনের ‘গোল্ডেন বয়’ পুরস্কার পান তিনি। বিশ্বের সেরা অনূর্ধ্ব-২৩ বছর বয়সী খেলোয়াড়কে প্রতি বছর এ পুরস্কার দিয়ে থাকে ক্রিকেটের বাইবেল খ্যাত উইজডেন। ডেল স্টেইন এবং ভারনন ফিলান্ডারের মত পেস আক্রমন বিভাগ থাকা সত্ত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের এক্স ফ্যাক্টর রাবাদা।
বাবর আজম
গণমাধ্যমে পাকিস্তানের ‘বিরাট কোহলি’ খ্যাতি পাওয়া লাহোরের ২৪ বছর বয়সী এ ব্যাটসম্যান নিঃসন্দেহে উঠতি তারকাদের একজন। মনে হয় ফাস্ট বোলারদের সামনে একটা দানব তিনি।
বর্তমানে আইসিসি ওয়ানডে ব্যাটসম্যান র্যাংকিংয়ের সপ্তম স্থানে থাকা বাবর আজম ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত ৫৯ ম্যাচে ৫১ দশমিক ২৯ গড়ে ২৪৬২ রান করেছেন। অভিষেক হওযার পর থেকেই পাকিস্তান দলের জয়ের মূল কারিগর হয়ে উঠেছেন এ তারকা ব্যাটসম্যান। তাকে দলে অন্তর্ভুক্ত করে পাকিস্তান ২৯ ম্যাচে জয়ী হয়েছে। পরাজিত হয়েছে ২৮ ম্যাচে।
পাকিস্তান এমন একটা দল যারা ফর্মে থাকুক না থাকুক কোন টুর্নামেন্টের আগে তাদের হিসেবের বাইরে রাখা যায় না। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জিতে বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল তারা। পুনরায় বিস্ময়কর এমন কিছু ঘটাতে হলে তাদের আজমের বড় রানের ওপর নির্ভর করতে হবে।
রশিদ খান
২০১৯ বিশ্বকাপ শুরুর সময় রাশিদ খানের বয়স ২১ বছর হবেনা। ইতোমধ্যেই যে ভেল্কি তিনি দেখিয়েছেন তাতে বিশ্বকাপে তিনি যে একজন আকর্ষণীয় খেলোয়াড় হবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই।
বর্তমানে আইসিসি ওয়ানডে বোলিং র্যাংকিংয়ের তৃতীয় এবং অলরাউন্ডার তালিকায় শীর্ষে আছেন রশিদ। ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত ৫৭ ওয়ানডেতে ১৫ গড়ে, ৩ দশমিক ৯০ ইকোরোমি এবং ২৩ স্ট্রাইক রেটে ১২৩ উইকেট শিকার করেছেন তিনি।
জিম্বাবুয়ে এবং আয়ারল্যান্ডকে পিছনে ফেলে বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জনের মাধ্যমেই প্রমাণ পাওয়া যায় ক্রিকেটের প্রতি দেশটির কত ভালবাসা।
দেশটি যদি নক আউট পর্বে ওঠে এবং টুর্নামেন্টের শীর্ষ পাঁচ বোলারের একজন হয় রশিদ তাতে বিস্ময়ের কিছু থাকবেনা। এটাই হবে এ তারকা স্পিনারের কারিশমা।