২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫:২১

বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে যে পরিকল্পনার কথা বললেন হামজা চৌধুরী

হামজা চৌধুরী  © সংগৃহীত

সম্প্রতি ফিফা থেকে বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য এসেছে দারুণ এক সুসংবাদ। লাল-সবুজ জার্সিতে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে খেলার ছাড়পত্র মিলেছে হামজা চৌধুরীর। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল লেস্টার সিটিতে খেলা এই মিডফিল্ডারের বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলতে আর কোনো বাধা নেই। শীঘ্রই বাংলাদেশের হয়ে ফুটবল খেলবেন, পাশাপাশি দেশে ফুটবলের উন্নয়নেও কাজ করবেন তিনি।

দা অ্যাথলেটিককে এক সাক্ষাৎকারে হামজা চৌধুরী জানিয়েছেন তার পরিকল্পনার কথা। হামজা বলেছেন, ‘বাংলাদেশি মানুষের জন্য খেলতে চাই। তাদের ভালোবাসা ও সমর্থন আমাকে এ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছে। আমি প্রতিদিন অসংখ্য বার্তা পাই, যেখানে তারা আমাকে বাংলাদেশে খেলতে দেখতে চায়।’

লেস্টার সিটির একাডেমিতে বেড়ে ওঠা হামজা ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে সাতটি ম্যাচ খেলেছেন। তবে তিনি অনুভব করেছেন, ইংল্যান্ড দলে তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। ‘ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা আমার জন্য আর কোনো অপশন ছিল না। তাই আমার নিজের শেকড়ের কাছে ফিরে যাওয়ার এটাই সঠিক সময়,’ বলেন তিনি।

বাংলাদেশের বর্তমান ফিফা র‍্যাঙ্কিং ১৮৫। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে দলের খারাপ পারফরম্যান্সের পরও হামজা আশাবাদী। ‘আমি শুধু মাঠে পারফর্ম করতে চাই না, বরং দেশের ফুটবলকে উন্নত করতে চাই। বাংলাদেশের তরুণ খেলোয়াড়দের উন্নত মানের প্রশিক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সুযোগ এনে দিতে চাই,’ উল্লেখ করেন হামজা।

তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে ফুটবল নিয়ে যে উন্মাদনা, তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। তবে এখানে পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব রয়েছে। আমি চাই তরুণরা ইউরোপের সেরা লিগগুলোতে খেলার সুযোগ পায়। এটি শুধুমাত্র খেলোয়াড়দের জন্য নয়, বরং বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।’

হামজা আরো বলেন, ‘আমার লক্ষ্য শুধু জাতীয় দলে ভালো খেলা নয়, বরং তরুণদের জন্য এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা, যাতে তারা ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোতে খেলার সুযোগ তৈরি করতে পারে।’

হামজা তার শৈশব থেকেই বাংলাদেশে নিয়মিত যাতায়াত করেছেন। হবিগঞ্জের এক গ্রামে তার পরিবারের শেকড়। ‘আমি ছোটবেলায় প্রতি বছর বাংলাদেশে যেতাম। সেখানকার জীবনধারা আমাকে শিখিয়েছে কৃতজ্ঞ হতে। গ্রামের মানুষদের জীবনযাপন আমাকে খুব প্রভাবিত করেছে। তাদের বন্ধন এবং জীবনযাপনের পদ্ধতি সত্যিই অসাধারণ।’

তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে আমার গভীর সম্পর্ক। আমার মা প্রতিদিন বাংলাদেশি খাবার রান্না করতেন। আমি বাংলা ভাষায় কথা বলতাম। এটি আমার জীবনের একটি অংশ। আমি চাই আমার সন্তানরাও এই সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হোক।’

হামজার মতে, ক্রিকেট বাংলাদেশে প্রধান খেলাধুলা হলেও ফুটবলের প্রতি মানুষের ভালোবাসা কোনো অংশে কম নয়। ‘বাংলাদেশের মানুষ ফুটবল নিয়ে পাগল। আমি চাই তাদের জন্য একটি মঞ্চ তৈরি করতে, যেখানে তারা নিজেদের প্রতিভা দেখাতে পারে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জায়গা করে নিতে পারে,’ বলেন তিনি।

বর্তমানে হামজা বাাংলাদেশ দলে যোগ দেওয়ার অপেক্ষায় আছেন। তার যোগদান শুধু দলের খেলোয়াড়দের মনোবলই বাড়াবে না, বরং বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।