১৮ বছর বয়স গুকেশের, বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন হয়ে গড়লেন বিরল ইতিহাস

গুকেশ ডোম্মারাজু
গুকেশ ডোম্মারাজু  © সংগৃহীত

বিশ্ব দাবায় নতুন ইতিহাস গড়লেন ভারতের গুকেশ ডোম্মারাজু। মাত্র ১৮ বছর ৮ মাস ১৪ দিন বয়সে তিনি দাবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জিতলেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি গড়লেন দুটি বিরল ইতিহাস। বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ দাবা চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন, পাশাপাশি গ্যারি কাসপারভের ২২ বছর বয়সে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত ফিদে দাবা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে তিনি বর্তমান চ্যাম্পিয়ন চীনের ডিং লিরেনকে পরাজিত করেন।

রাশিয়ার কিংবদন্তি গ্র্যান্ডমাস্টার গ্যারি কাসপারভ ১৯৮৫ সালে ২২ বছর বয়সে এই খেতাব জিতেছিলেন। তার রেকর্ড ভেঙে বিরল ইতিহাস গড়লেন  এই ‘বিস্ময় বালক’।
 
গুকেশ ফিদে দাবা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে চীনের ডিং লিরেনকে ৭.৫-৬.৫ স্কোরে পরাজিত করে ১৮তম দাবা চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। তিনি দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে এই খেতাব জিতলেন। এর আগে প্রথম ভারতীয় হিসেবে বিশ্বনাথ আনন্দ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিলেন।

চেন্নাইয়ের এই প্রতিভাবান তরুণ ১২ বছর বয়সে গ্র্যান্ডমাস্টার হয়েছিলেন। তবে এবার ফিদে চ্যাম্পিয়নশিপে তার স্থান ছিল বহিরাগত প্রতিদ্বন্দ্বীর মতো।

ফাইনাল খেলায় কালো ঘুঁটি নিয়ে নেমে ডিং লিরেনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুলের সুযোগ নেন গুকেশ। ডিং তার শেষ শক্তিশালী ঘুঁটি হারিয়ে বসেন, যা তাকে পরাজয়ের মুখে ঠেলে দেয়।

এই জয়ের ফলে বিশ্বে র‍্যাংকিংয়ে পঞ্চম এবং ভারতে র‍্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় গুকেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মর্যাদা লাভ করেছেন। ১৪ গেমের এই চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতা গত দুই সপ্তাহ ধরে দাবা প্রেমীদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল।

চেন্নাই থেকে উঠে আসা গুকেশের পরিবারে কোনো এলিট দাবাড়ু নেই। তবে ছোটবেলায় স্কুল পরবর্তী দাবা ক্লাসে তার প্রতিভা ধরা পড়ে। ২০১৯ সালে ১২ বছর ৭ মাস বয়সে ইতিহাসের তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে তিনি গ্র্যান্ডমাস্টার হন।

চ্যাম্পিয়নশিপের ১৪ গেমে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ৮টি ড্র এবং ২টি করে জয় অর্জন করেছিলেন। বৃহস্পতিবার ফাইনালে ডিং চাপের মুখে ভুল করে কিস্তি হারালে গুকেশ জয় নিশ্চিত করেন।

ডিং লিরেন২০২৩ সালে চীনের প্রথম দাবা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হন। তবে মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার কারণে তিনি দীর্ঘদিন বিরতিতে ছিলেন। তবে চ্যাম্পিয়নশিপের শুরুতে ও ১২তম রাউন্ডের জয় তাকে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে তুলে ধরেছিল।

ডিংয়ের ফাইনাল ভুল সম্পর্কে চেজডটকম বলেছে, ‘ডিং জয়ের সুযোগ পেয়েও রিস্ক ফ্রি পজিশনে পা ফেলেছিলেন, যা তাকে একটি পন-ডাউন এন্ড গেমে ঠেলে দেয়। ম্যাচ ড্র হওয়ার কথা থাকলেও, চাপ বাড়তেই ডিং ভুল করেন।’ তিন চাল পরেই তিনি পরাজয় মেনে নেন।

গুকেশ এই জয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আমি এই পজিশনে জিতব আশা করিনি।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাকে অভিনন্দন জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, ‘ঐতিহাসিক ও অনুকরণীয়! এটি তার অনবদ্য প্রতিভা, কঠোর পরিশ্রম এবং দৃঢ় সংকল্পের ফল।’

এই প্রতিযোগিতার পুরস্কার তহবিল ছিল মোট ২.৫ মিলিয়ন ডলার।


সর্বশেষ সংবাদ