যে কারণে দুই মাস বেতন পাননি সাফজয়ী মেয়েরা, দ্রুতই পরিশোধের আশ্বাস সরকারের
ফুটবলে অন্যতম সেরা সাফল্য এনেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা ফুটবল স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার জিতেছে সাফের শিরোপা। দেশের ফুটবলে ছেলেদেরকে পেছনে ফেলেছেন সাবিনা খাতুনরা। গত কয়েক বছরে বাফুফে যে সাফল্যের বড়াই করে তা শুধুই মেয়েদের কারণেই। অথচ এই সোনার মেয়েদের ভাগ্যে জুটে না মূল্যায়ন। দুই মাস ধরে বকেয়া রয়েছে প্রাপ্য বেতনও।
শুধু মেয়েরা নন, তাদের ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারও ক্ষোভ-অভিমানে দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার সময় জানান, তিন মাস ধরে বেতন পান না তিনি।
নারী ফুটবলারদের বেতন বাড়ানো হলেও স্পন্সর সংকটে ফিফার বার্ষিক তহবিল থেকে তাদের বেতন দেওয়া হতো বলে জানা যায়। যদিও তখন বেতন দিতে দেরি হতো, কিন্তু বর্তমানে দুই মাসের বেতনই বকেয়া হয়ে গেছে।
সাফ শিরোপাজয়ের পর মেয়েদের বেতন বকেয়া থাকার বিষয়টি ফের আলোচনায় আসে। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিং চলাকালে এ নিয়ে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
মেয়েদের বেতন বকেয়া থাকার দায় বাফুফের সদ্য সাবেক সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনকে দিয়ে তিনি বলেন, 'সাফ নারী ফুটবল টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা হয়েছে। বেশ কয়েকটি পত্রিকায় নারী ফুটবল দলের দুই মাসের বেতন বকেয়া থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে।'
'সেটা সাবেক সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের আমলের সমস্যা। তাদের বেতনের সমস্যা দ্রুত সময়ে সমাধান করা হবে। দেশের নারী ক্রীড়াবিদদের বেতনবৈষম্য নিয়ে আলোচনা করছে সরকার। নারী অ্যাথলেটরাও যাতে পুরুষদের সমান বেতন পায়, তা নিয়ে বিসিবি ও বাফুফের সঙ্গে আলোচনা চলছে।' যোগ করেন তিনি।
জানা গেছে, চুক্তি অনুযায়ী গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে জাতীয় দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনসহ ১৫ ফুটবলার মাসে পেয়েছেন ৫০ হাজার টাকা করে। ১০ জন পেতেন ৩০ হাজার টাকা, চারজন ২০ হাজার ও দুইজনের বেতন ছিল ১৮ হাজার টাকা করে। সব মিলিয়ে ৩১ ফুটবলারের জন্য বেতনের অঙ্ক ছিল মাসে ১১ লাখ টাকার কিছু বেশি।
তবে চলতি বছরের মে মাস থেকে সেটা বেড়েছে। বাফুফের তৎকালীন সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের আমলে সেটা বাড়ানো হয়েছিল। তারপর থেকেই শুরু হয় জটিলতা। শুরুতে বেতন দেওয়া হত একটু দেরিতে। কখনও সেটা মাসের শেষ দিকে গিয়ে হয়েছে। কিন্তু গত দুই মাস ধরে বেতনই পাচ্ছেন না ফুটবলাররা।
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিকাংশ মেয়েরাই এসেছেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে। যাদের পরিবার খুব একটা স্বচ্ছল নয়। অনেক ফুটবলারের পরিবার টিকে আছে এই মেয়েদের বেতনের ওপর ভর করেই। দেশের নারী ফুটবলে নেই ক্লাবভিত্তিক কোনো ফুটবল প্রতিযোগিতা। যে কারণে শুধু বাফুফের থেকে প্রাপ্ত বেতনের ওপর নির্ভর করে চলতে হয় ঋতুপর্না চাকমাদের।
যদিও বেতন বন্ধ এবারই প্রথম নয়। গত বছরেও এমন দৃশ্য দেখা গেছে। ২০২২ সালে নেপালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতার পর থেকে সাবিনা ও সানজিদাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবি উঠেছিল। এজন্য অনুশীলনও বন্ধ রেখেছিলেন ফুটবলাররা, যার ফলে গত বছরের আগস্টে সাবিনাদের দাবি মেনে তাদের বেতন কাঠামোতে আনা হয়। তবে স্পন্সর খুঁজে না পাওয়ায় ফুটবলারদের নিয়মিত বেতন দিতে পারছিল না বাফুফে। খবরটি ফিফা অবদি পৌঁছে। তাই নিজেদের দেওয়া বার্ষিক তহবিল থেকে সাবিনাদের বেতন দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছিল ফিফা। সেবার অনিশ্চয়তা কাটলেও এবার ফের তৈরি হয়েছে জটিলতা।