পাকিস্তানের মাটিতে ঐতিহাসিক জয় বাংলাদেশের
২০০৩ সালে মুলতান টেস্টে জয়ের খুব কাছে গিয়েও হেরেছিল বাংলাদেশ। সেবার টাইগারদের হৃদয় ভেঙে পাকিস্তানকে রক্ষা করেছিলেন ইনজামাম উল হক। ২১ বছর পর এবার ক্রিকেটে প্রথমবার পাকিস্তান জয় করলেন মুশফিকুর রহিম-সাকিব আল হাসান-মেহেদী মিরাজরা। আজ রবিবার (২৫ আগস্ট) রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০ উইকেটের ঐতিহাসিক জয় পেয়েছে টাইগাররা।
প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট হারিয়ে ৪৪৮ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিকরা। পরে নিজেদের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট হয় ৫৬৫ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান ১৪৬ রানে অলআউট হলে সফরকারীদের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় স্রেফ ৩০ রানের।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জিততে বাংলাদেশের দরকার ৩০ রান
পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪তম টেস্টে এসে প্রথম জয় পেলো বাংলাদেশ। এর আগে তাদের মাটিতে কখনও এমনকি ড্রও করতে পারেনি তারা। পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি ম্যাচেই ড্র করতে পেরেছিল বাংলাদেশ, ২০১৫ সালে খুলনায় হয়েছিল সেটি।
রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের পঞ্চম দিনে বাংলাদেশি বোলারদের তোপের মুখে মধ্যাহ্নবিরতির আগেই ৬ উইকেট হারায় পাকিস্তান। বিরতি থেকে এসে আর মাত্র ২৮ রান যোগ করতেই বাকি ৪ উইকেট চলে যায় পাকিস্তানের।
আজ রবিবার ১ উইকেটে ২৩ রান নিয়ে পঞ্চম দিনের খেলা শুরু করে পাকিস্তান। উইকেট শিকারের মাধ্যমে দিন শুরু করে বাংলাদেশ। দিনের দ্বিতীয় ওভারেই পাকিস্তান অধিনায়ক শান মাসুদের উইকেট তুলে নেন হাসান মাহমুদ। তাকে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের ক্যাচ বানান টাইগার পেসার।
যদিও প্রথমবারের আবেদনে আম্পায়ার মাথা নাড়িয়ে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত দেন। তবে রিভিউ কথা বলে বাংলাদেশের পক্ষে। রিভিউতে দেখা যায়, হাসান মাহমুদের বাউন্সি বল শান মাসুদের ব্যাটে সামান্য স্পর্শ করেছে। ৩৭ বলে ১৪ রান করে ফেরত যান শান মাসুদ।
এরপরই আরও একটি উইকেট শিকারের সুযোগ মিস করে বাংলাদেশ। মাসুদ ফেরত যাওয়ার পরের ওভারেই শরীফুল ইসলামের বলে বাবর আজমের সহজ ক্যাচ ফেলে দেন লিটন দাস।
২৫তম ওভারের তৃতীয় বলে বাবরের লেগ স্টাম্প উপড়ে ফেলেন পেসার নাহিদ রানা। বাবর ফেরেন ২২ রানে। পরের ওভারে আঘাত হানেন সাকিব আল হাসান। ২৬তম ওভারের শেষ বলে সাকিবকে সামনে এগিয়ে এসে খেলতে চেয়েছিলেন সৌদ শাকিল। তবে বলটি মিস করেন আগের ইনিংসে ১৪১ রান করা শাকিল। বল পেয়ে মোটেও ভুল করলেন না লিটন দাস। দ্রুতগতিতে স্টাস্পড করেন তিনি। রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরের পথে হাঁটেন শাকিল।
৩৩তম ওভারের শেষ বলে সাকিবকে উড়িয়ে মারতে গিয়েছিলেন আব্দুল্লাহ শফিক। ব্যাটে-বলে ভালো মতো সংযোগ ঘটাতে না পেরে মিড অফে সাদমান ইসলামের হাতে ক্যাচ হন পাকিস্তান ওপেনার (৩৭ রান)। এই ইনিংসে এটি সাকিবের দ্বিতীয় শিকার।
পরের ওভারেই নতুন ব্যাটার সালমান আলি আগাকে (০) বোকা বানান মিরাজ। মিরাজকে ঠেকাতে গিয়ে প্রথম স্লিপে সাদমানের ক্যাচ হন তিনি। এতে ১০৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে পাকিস্তান।
মধ্যাহ্নবিরতি থেকে আসার পর শাহিন শাহ আফ্রিদির (১৬ বলে ২) উইকেট তুলে নেন মিরাজ। এরপর নাসিম শাহকে (২২ বলে ৩) নিজের তৃতীয় শিকার বানান সাকিব আল হাসান।
এরপর বাংলাদেশের সামনে কাঁটা হয়ে দাঁড়ান মোহাম্মদ রিজওয়ান। খুররম শেহজাদকে নিয়ে ২৪ রানের জুটি করেন তিনি। এরমধ্যে হাঁকিয়ে ফেলেন ফিফটিও। তবে রিজওয়ানকে ফিফটির পর বেশিদূর যেতে দেননি মিরাজ। ৮০ বলে ৫১ রান করা পাকিস্তানের ডানহাতি এই ব্যাটারকে বোল্ড করে দেন টাইগার স্পিনার।
পাকিস্তানের সর্বশেষ উইকেটও তুলে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। মোহাম্মদ আলিকে রানের খাতাই খুলতে দেননি তিনি।
৩০ রানের লক্ষ্য তাড়ায় স্বাচ্ছন্দে খেলতে থাকেন দুই টাইগার ওপেনার জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম। সাদমানের ৯ আর জাকিরের ১৫ রানের সুবাদে জয় অর্জিত হয় বাংলাদেশের।