পদত্যাগ না করলে পাপন দায়িত্বে থাকবেন কতদিন?

নাজমুল হাসান পাপন
নাজমুল হাসান পাপন  © সংগৃহীত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন ছাত্র প্রতিনিধি আসিফ মাহমুদ। সর্বশেষ এই দায়িত্ব ছিল ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে ক্রিকেটের প্রাণকেন্দ্র মিরপুরের শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে বেড়েছে রাজনৈতিক আনাগোনা। এরইমধ্য প্রশ্ন উঠেছে বিসিবি নিয়ে। তবে খোঁজ নেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান সভাপতি এবং সদ্য বিলুপ্ত সংসদের সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপনের।

জাতীয় সংসদের পদ চলে গেলেও ক্রিকেট বোর্ডের কার্যত সভাপতি পাপনই। বর্তমান মেয়াদে ২০২৫ সাল পর্যন্ত তার থাকার কথা রয়েছে। ক্ষমতার পালাবদলে তাকে সরানোর কোনো সুযোগই থাকছে না। বোর্ডের ওপর সরকার বা অন্য কোনো শক্তির উপস্থিতি প্রমাণিত হলে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়বে বাংলাদেশ ক্রিকেট। 

২০২৩ সালে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডকে সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। দেশটির ক্রীড়ামন্ত্রী রোশান বিক্রমাসিংহে পুরো বোর্ডকে বরখাস্ত করে নিয়োগ দিয়েছিল ৭ সদস্যের অন্তর্বর্তী এক কমিটিকে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে সুযোগ থাকছে না পাপনকে সরিয়ে দেয়ার। 

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বর্তমান পরিস্থিতিতে বোর্ড সভাপতি পদে নাজমুল হাসান পাপনের থাকা কিংবা না থাকা নিয়ে কোনো প্রকার ব্যাখ্যা নেই। তবে গঠনতন্ত্রের ১৩তম অনুচ্ছেদের এক ধারা অনুযায়ী মৃত্যু, পদত্যাগ, মানসিক ভারসাম্যহীনতা অথবা শৃঙ্খলতাজনিত শাস্তি প্রদানের প্রেক্ষিতে পরিচালকের পদ শূন্য হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মানসিক ভারসাম্যহীনতার ক্ষেত্রে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত থাকতে হবে। 

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। তার দেশ ছাড়ার খবর চাউড় হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার শীর্ষ কর্তারা পদত্যাগ করেছেন। অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তবে দেশেই রয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। 

বোর্ডের গঠনতন্ত্রের ১৫(২) এর ধারা অনুযায়ী, শারীরিক অসুস্থতা, বিদেশ গমন বা যথাযথ কারণ ছাড়া পরিচালনা পরিষদের পরপর ৩ সভায় অনুপস্থিত থাকলে পরিচালকের সদস্যপদ বাতিল হবে। নাজমুল হাসান পাপন ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির পাশাপাশি একজন পরিচালকও বটে। পাপনের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তের জন্য তাই এমন নিয়মের দিকেই নজর থাকবে। 

বোর্ড গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, প্রতি ২ মাসে একটি করে পরিচালক সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেই বিবেচনায় অন্তত ৬ মাসের জন্য সময় পেতে পারেন নাজমুল হাসান পাপন। এর মাঝে নিজ থেকে পদত্যাগ না করে সময়ক্ষেপণ করলে বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তার পরিচালক পদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। আর সেখানেই ইতি ঘটবে সভাপতি হিসেবে তার মেয়াদের। 

ঢাকার ক্লাব প্রতিনিধি হিসেবে ২০২১ সালের সবশেষ নির্বাচনে বিসিবি পরিচালক হয়েছিলেন নাজমুল পাপন। পরবর্তীতে ২৫ পরিচালকের মধ্য থেকেই নির্বাচিত হয়েছিলেন বোর্ড সভাপতি হিসেবে।

২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে বিসিবি সভাপতি পদে বর্তমান মেয়াদ শেষ হবে। এরপরেই দেখা যেতে পারে অন্তর্বর্তী একটি কমিটি। সেখান থেকেই দেখা যাবে নতুন বোর্ড সভাপতি। এর আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে দুবার দেখা গিয়েছিল অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি। ২০০৭ সালে সে সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দেয়া হয়েছিল অ্যাড-হক কমিটি। এছাড়া ২০১৩ সালে আ হ ম মুস্তফা কামাল ও নাজমুল হাসান পাপনের মধ্যবর্তী সময়েও ছিল অন্তর্বর্তীকালীন একটি কমিটি।


সর্বশেষ সংবাদ