বিশ্বকাপের পরেই অবসরে হাফ ডজন তারকা ক্রিকেটার
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত এভাবেই বলতে ইচ্ছে করছে যে থাকা যায় না আরও কিছু মুহুর্ত। উপহার দেওয়া যায় না আরও কিছু স্মৃতি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তবু যেতে দিতে হয়, তবুও চলে যায়। পুরুষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম সংস্করণের সমাপ্তি ঘটেছে। বিশ্বকাপের পর দেশের জার্সিতে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন অনেক খেলোয়াড়। তারকা খেলোয়াড়েরা অবসরে যান। কিন্তু রেখে যান স্মৃতি। তেমনি এবারের বিশ্বকাপ মাতানো অনেক ক্রিকেটারকে পাওয়া যাবে না পরবর্তী আসরে। ইতিমধ্যে অবসরের ঘোষণাও দিয়েছেন কেউ কেউ। চলুন এক নজরে তালিকাটা দেখে নেওয়া যাক-
১. রোহিত শর্মা (ভারত)
ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ী দ্বিতীয় অধিনায়ক ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনিও বিরাটের দেখানো পথে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে নিজের বিদায়ের কথা উল্লেখ করেন। সদ্য শেষ হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রান সংগ্রাহকের তালিকায় রোহিত আছেন দ্বিতীয় স্থানে। আট ম্যাচে তিন ফিফটিতে করেছেন ২৫৭ রান। মন্থর ব্যাটিংয়ের বিশ্বকোপেও তার স্ট্রাইক রেট ১৫৬.৭০। ২০০৭ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে ২০২৪ এর সর্বশেষ আসর–৯টি টুর্নামেন্টেই খেলেছেন তিনি। আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ২২০ রান তারই।
২০০৭ সালে নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার শুরু করা রোহিত এই ফরম্যাটে খেলেছেন ১৫৯টি ম্যাচ। রান করেছেন সর্বোচ্চ চার হাজার ২৩১। যা টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানে প্রথম। ৩২.০৫ গড় ও ১৪০.৮৯ স্ট্রাইক রেট যথেষ্ট সমীহ জাগানিয়া। এই ফরম্যাটে ৩২টি ফিফটির পাশাপাশি সর্বোচ্চ পাঁচটি সেঞ্চুরিও রোহিতেরই।
২. বিরাট কোহলি (ভারত)
বয়স ৩৫ বছর, যিনি ক্রিকেট না খেললে প্রমাণ পাওয়া যেত না রেকর্ড যে তৈরি হয় ভাঙার জন্য। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিতে এসে ঘোষণা করলেন ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে নিজের অবসরের কথা। টি-টোয়েন্টিতে ১২৫টি ম্যাচ খেলেছেন কোহলি। ৪৮.৬৯ গড়ে ৪১৮৮ রান করেছেন। যা টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। এ তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছেন তারই সতীর্থ রোহিত শর্মা। একটি শতরান করেছেন। ফাস্টেট ৩৫০০ রান করতে তিনি ব্যবহার করেছিলেন মাত্র ৯৬ ইনিংস যা টি-টোয়েন্টিতে প্রথম।
এ ছাড়া কোহলির ৩৯টি অর্ধশতরান রয়েছে। যা টি-টোয়েন্টিতে প্রথম সর্বোচ্চ অর্ধশত রান। হারারে-তে জ়িম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয়েছিল তাঁর। মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে বিরাট কোহলি ২০১১ সালে বিশ্বকাপ ট্রফি, ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জিতেছেন।
৩. কুইন্টান ডি কর্ক (দক্ষিণ আফ্রিকা)
ওয়ানডে এবং টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন গতবছর ডিসেম্বরে। ওয়াল্টার এর পরামর্শ থেকেছেন এ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত। উইকেট রক্ষক এ ব্যাটসম্যান টি-টোয়েন্টিতে এ পর্যন্ত খেলেছেন ৯২ টি ম্যাচ। যেখানে ৩১.৫১ গড়ে, ১৩৮.৩২ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ২৫৮৪ রান। তার ঝুলিতে রয়েছে একটি শতক ও ১৬ টি অর্ধশতক রানের ইনিংস।
৪. ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া)
অস্ট্রেলিয়ান এ ওপেনার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২০০৯ সালে। সে থেকে এখন পর্যন্ত খেলেছেন ১১০ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। যেখানে ৩৩.৪৩ গড়ে, ১৪২.৪৭ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৩২৭৭ রান। রানের হিসেবে যা টি-টোয়েন্টিতে সপ্তম সর্বোচ্চ রান। তার ঝুলিতে রয়েছে ২৮ টি অর্ধশত ও একটি শত রানের ইনিংস।
৫. টেন্ট বোল্ট (নিউজিল্যান্ড)
নিউজিল্যান্ডের এ পেস বোলার এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দল গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিলে নিজের অবসরের কথা বলেন। বোল্টের টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়েছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৩ সালে। সে থেকে এখন পর্যন্ত ম্যাচ খেলেছেন ৬১ টি। যেখানে ২১.৪৩ গড়ে, ৭.৬৮ ইকোনমি রেটে নিয়েছেন ৮৩ টি উইকেট। টি-টোয়েন্টিতে উইকেট শিকারের হিসেবে যা ৩১ তম।
৬. রবীন্দ্র জাদেজা (ভারত)
অনেকটা সময় ধরেই ভারতের টি-টোয়েন্টি দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন জাদেজা। সদ্য সমাপ্ত বিশ্বকাপে খুব একটা ছন্দে ছিলেন না এই তারকা অলরাউন্ডার। তবে জাদেজার অভিজ্ঞতা রোহিতের দলের বড় শক্তি, অতীতে অনেক ম্যাচ জেতানো ভূমিকা ছিল তার। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ভারতীয় এই অলরাউন্ডার সবমিলিয়ে ৭৪টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। যেখানে ১২৭.১৬ স্ট্রাইকরেটে তার সংগ্রহ ৫১৫ রান। এ ছাড়া ৭.১৩ ইকোনমিতে ৫৪ উইকেট শিকার করেছেন জাদেজা। এ নিয়ে তিনি ছয়টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলেছে।
৭. সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)
বিশ্বসেরা ক্রিকেট অলরাউন্ডারের মধ্যে একজন সাকিব আল হাসান। সাকিব বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ক্রীড়াবিদ তো বটেই, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হিসেবে। টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়েছিল ২০০৬ সালের ২৮ নভেম্বর খুলনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সে থেকে ২০২৪ সাল ক্যারিয়ারের বয়স ১৮ বছর এবং নিজের বয়স ৩৭ বছর। টি-টোয়েন্টিতে ১২৯ ম্যাচ খেলে ২৩.১৯ গড়ে রান করেছেন ২৫৫১। যেখানে রয়েছে ১৩টি অর্ধশত রানের ইনিংস। দেশের হয়ে সর্বোচ্চ আইসিসির অলরাউন্ডার র্যাংকিং এ দীর্ঘ এক যুগ ছিলেন এক নম্বরে।
টি-টোয়েন্টিতে বল হাতে সমান ম্যাচ খেলে পেয়েছেন ১৪৯টি উইকেট। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবারের আসরে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে রয়েছে একটি অর্ধশত রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস। ২০০৭ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে ২০২৪ এর সর্বশেষ আসর–৯টি টুর্নামেন্টে খেলা রোহিত শর্মার পর দ্বিতীয় খেলোয়াড় তিনি। সাকিব এখনো অবসরের ঘোষণা না দিলেও পরবর্তী আসলে তাকে পাওয়া যাবে কিনা, সেটা এখনো অনিশ্চিত।
৮. মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (বাংলাদেশ)
বাংলাদেশের সাইলেন্ট কিলার খ্যাত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়েছিল ২০০৭ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে। টি-টোয়েন্টিতে ১৩৮ ম্যাচ খেলে ২৩.৭০ গড়ে, ১১৭.৮১ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ২৩৯৪। যেখানে রয়েছে ৮টি অর্ধশত রানের ইনিংস। বল ঘুরিয়ে ঝুলিতে পুড়েছেন ৪০টি উইকেট। বয়সের হিসেবে তার বয়স ৩৮ বছর, তাই ধারণা করাই যায় ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে হয়তো পরবর্তী আসরে দেখা যাবে না এই সাইলেন্ট কিলারকে।