ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসির জন্মদিন আজ

লিওনেল মেসি
লিওনেল মেসি  © সংগৃহীত

ফুটবল বিশ্বে অনন্য এক নাম লিওনেল মেসি। বাঁ পায়ের জাদুতে মুগ্ধ করেছেন কোটি ভক্তকে। আজ তার ৩৭তম জন্মদিন। জীবনের ৩৬টি জন্মদিন পেছনে ফেলে এসেছেন ফুটবলের এই বরপুত্র। নিজ দেশ আর্জেন্টিনা থেকে ব্রাজিল, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যেও রয়েছে মেসি ভক্ত। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সর্বকালের সেরাদের একজন হিসেবে। বিশ্ব ফুটবলে সব ক্ষেত্রেই সাফল্য পেয়েছেন আর্জেন্টাইন এ ফুটবলার।

১৯৮৭ সালের ২৪ জুন আর্জেন্টিনার রোজারিওর এক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। বাবা হোর্হে হোরাসিও মেসি কাজ করতেন রোজারিওর একটি স্টিল কারখানায়। আর মা সেলিনা মারিয়া কুচ্চিত্তিনি ছিলেন পার্ট-টাইম ক্লিনার। 

চার ভাইবোনের মধ্যে মেসি তৃতীয়। তার বড় দুই ভাই রদ্রিগো ও মাতিয়াস। ছোট বোন মারিয়া সল। ছোটবেলা থেকেই তাদের পরিবার ছিল ফুটবলপ্রেমী। বড় দুই ভাই ও দুই মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে ফুটবল খেলেই বাল্যকাল কেটেছে তার। লিওনেল মেসি মাত্র ১৩ বছর বয়সে আর্জেন্টিনা থেকে স্পেনের বার্সেলোনায় চলে আসেন। 

১১ বছর পর্যন্ত তিনি আর্জেন্টিনার কোলেজিও জেনারেল লাস হেরাস স্কুলে পড়েছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ ২০১৫ সালে মেসিকে সম্মাননা জানায়। স্কুলে মেসি আর দশজন সাধারণ শিক্ষার্থীর মতোই পড়ালেখা করেছেন। স্পেনে থিতু হওয়ার পর বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাবের ইয়ুথ একাডেমি লা মাসিয়াতে তাঁর প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এই একাডেমির শিক্ষার্থী হিসেবে একটি এলিমেন্টারি স্কুলে মেসি পড়াশোনা করেছেন বলে জানা যায়। মেসির ভাষা স্পানিশ। তিনি ইংরেজি ভাষা জানেন না।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ-১৮ এর খবরে মেসির পড়াশোনা সম্পর্কে বলা হয়েছে, পড়াশোনায় মেসি একজন মাঝারি ধরনের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি সবসময় একটি বল নিয়ে স্কুলে যেতেন। প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করার পর, তার পরিবার ১৩ বছর বয়সে বার্সেলোনায় স্থানান্তরিত হয়। তিনি বার্সেলোনার বিখ্যাত লা মাসিয়াতে যোগ দেন, ফুটবলের অন্যতম সেরা প্রশিক্ষণ সুবিধা পেতে। সেখানেই মেসি ১৩তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। কলেজ পর্যন্ত যাওয়ারও সুযোগ হয়নি তার।

১১ বছর বয়সে মেসির শরীরে গ্রোথ হরমোন জনিত জটিলতা দেখা দেয়। কিন্তু তার বাবা মায়ের সেটার চিকিৎসা করার মত সামর্থ্য ছিল না। এই চিকিৎসার খরচ ছিল প্রতিমাসে প্রায় ৯০০ ডলার। সেই চিকিৎসার জন্যই বার্সেলোনায় গিয়েছিলেন মেসি ও তাঁর পরিবার। মেসিরা ২০০০ সালে কাতালান শহরটিতে যান। যুব দল পেরিয়ে ২০০৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে নাম লেখান বার্সেলোনার সিনিয়র দলে।

বার্সেলোনার জার্সিতে লিওনেল মেসির অভিষেক হয় ১৬ অক্টেবর ২০০৪ সালে। মেসির বয়স তখন ১৭ বছর ৩ মাস ২২ দিন। অভিষেকের সাত মাস পর ২০০৫ সালের ১ মে ক্লাবের জার্সিতে প্রথম গোল পান এই ক্ষুদে জাদুকর। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। লা মাসিয়া থেকে উঠে আসা এই আর্জেন্টাইন ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় জুড়ে কাতালুনিয়ার দলটিকে দিয়েছেন মুঠোভরে, দিয়ে যাচ্ছেন এখনও। বিশ্বসেরা এই তারকার ফুটবলের আঙিনায় যত প্রাপ্তি।

বার্সেলোনায় যোগদানের পর টানা ২ দশক ধরে পুরো ফুটবল বিশ্বকে নিজের জাদুতে মাতিয়ে রাখেন এই আর্জেন্টাইন ফুটবল তারকা। নিজের ক্লাব ফুটবল কেরিয়ারে বার্সেলোনার হয়ে ৭৭৮টি ম্যাচে ৬৭২ গোল আর পিএসজির হয়ে ৭৫ ম্যাচে ৩২ গোল করেছেন মেসি। 

২০১৮ বিশ্বকাপে যখন বাছাই পর্বেই বাতিল হবার পথে আর্জেন্টিনা, তখন অবসর ভেঙ্গে ফিরে এসে দেখিয়েছেন তার জাদু। বাছাই পর্ব উতরে মূল পর্বের খেললেও ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরের চাপটাই যেনো নিতে পারছিলেন না। পরের বছরের কোপা আমেরিকায় আবারও ব্যর্থ হলে শূন্য হাতে তার বিদায় যেনো নিয়তি হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ২০২১ সালে ১৬ বছর পর জাতীয় দলের হয়ে তার শিরোপা জয়ের আক্ষেপ মেটে। কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিলকে হারিয়ে শিরোপাটা যেনো তারই প্রাপ্ত ছিল।

২০০৬ থেকে শুরু, ২০১০ হয়ে ২০১৪, পেরিয়েছে ২০১৮ বিশ্বকাপও। চোখের নোনা জল বারবার হতাশার রেশ তুলে গেছে। তার বিরস নয়নে চেয়ে থাকা বলে যায় একের পর এক বিরহের কবিতা। কানে বাজে বাশির করুণ সুর।এরপরই আসে সেই মহেন্দ্রক্ষণ, ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে লিওনেল মেসির জাদুতেই ৩৬ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটে আকাশি-নীল শিবিরে। সেই সাথে ‘অমরত্ব’ পেয়ে যান আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকর।

বিশ্বকাপ জয়ের পর মেসির প্রথম জন্মদিন আজ

২০২২ সালের বিশ্বকাপে এসে ক্যারিয়ারের একমাত্র অপূর্ণতাটা পূর্ণ হয় ক্ষুদে এই জাদুকরের। লুসাইল স্টেডিয়ামে সেই ফ্রান্সকেই হারিয়ে স্বাদ নেন বিশ্বকাপের। বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ, আর্জেন্টিনার হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল, ভিন্ন পাঁচ বিশ্বকাপে অ্যাসিস্ট, বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ ম্যাচ, সবচেয়ে বেশি মিনিট খেলা, সবচেয়ে বেশি গোল অবদানে মেসি একাই নিজের করে নেন কাতার বিশ্বকাপ।

ম্যানচেস্টার সিটির ফরোয়ার্ড আর্লিং হালান্ডকে পেছনে ফেলে ২০২২-২৩ মৌসুমের রেকর্ড অষ্টমবারের মতো ব্যালন ডি'অরের পুরস্কার জিতেছেন লিওনেল মেসি। ফুটবলের অস্কার খ্যাত এই পুরস্কার মেসি সর্বোচ্চ আটবার জিতেছেন। তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ধরাছোয়ার বাইরে। ১৯৫৬ সাল থেকে চলে আসা এ পুরস্কার মেসির হাতে প্রথম ওঠে ২০০৯ সালে। এরপর ২০১১, ২০১২, ২০১৩, ২০১৬, ২০১৯, ২০২১ এবং ২০২৩ সালে ব্যালন ডি’অর জেতেন সাবেক বার্সেলোনা তারকা। 

১৬তম নমিনেশনে ৮ম ব্যালন ডি’অর জিতলেন মেসি

২০০৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে মেসি ও রোনালদো ব্যতীত কেবল দুইজন এই পুরস্কার জিতেছেন। ২০১৮ সালে রিয়াল মাদ্রিদের লুকা মদ্রিচ ও ২০২২ সালে রিয়াল মাদ্রিদের ফরাসি তারকা করিম বেনজেমা ব্যালন ডি’অর নিজের করে নেন।

 

সর্বশেষ সংবাদ