কোপা আমেরিকার প্রথম ম্যাচে কাল মাঠে নামছে আর্জেন্টিনা
ইউরোপিয়ান ফুটবলের আসর উয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হয়ে গেছে। এবার যুক্তরাষ্ট্রের মাঠে গড়াচ্ছে লাতিন আমেরিকান ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই কোপা আমেরিকার ৪৮তম আসর। কোপা মূলত দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের (কনমেবল) সর্বোচ্চ ফুটবল আসর। কিন্তু এবার পরিধি বাড়িয়ে উত্তর ও মধ্য আমেরিকা অঞ্চলকে (কনকাকাফ) যুক্ত করা হয়েছে। যেখানে প্রতিনিধিত্ব করবে ১৬টি দল। কনমেবল থেকে দশটি, কনকাকাফ থেকে ছয়টি। কোপার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা।
শুক্রবার (২১ জুন) বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় উদ্বোধনী দিনে যুক্তরাষ্ট্রের মার্সিডিজ বেঞ্জ স্টেডিয়ামে কানাডার মুখোমুখি হবে টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। প্রথমবারের মতো কোপা আমেরিকায় খেলতে আসা কানাডার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে মিশন শুরু করবে লিওনেল স্কালোনির দল।
‘এ’ গ্রুপের গ্রুপ অব ডেথে পড়েছে আর্জেন্টিনা। গ্রুপপর্বেই মেসিরা পাচ্ছে মহাদেশীয় প্রতিপক্ষ পেরু এবং চিলিকে। সে তুলনায় কিছুটা সহজ প্রতিপক্ষ পেলেও স্বস্তি পাচ্ছে না ব্রাজিলও। গ্রুপ 'ডি'তে কলম্বিয়া এবং প্যারাগুয়ের মত প্রতিপক্ষের সামনে পড়তে হবে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রদের।
২০২১ কোপা আমেরিকার ১৫তম ট্রফি জয়ের আগে ফাইনালের মঞ্চ থেকে চারবার খালি হাতে ফেরার হতাশা সঙ্গী হয়েছিল আর্জেন্টিনার-২০০৪, ২০০৭, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে। ২০১৯-এ সেমি-ফাইনাল থেকে ছিটকে যাওয়ার পর তৃতীয় হয়েছিল তারা।
তারপরও এই প্রতিযোগিতা মুঠোভরে দিয়েছে আর্জেন্টিনাকে। সেরা তিনে ৩৪ বারের উপস্থিতি (১৫ বার চ্যাম্পিয়ন, ১৪ বার রানার্সআপ, ৫বার তৃতীয়) এবং ১২৮ ম্যাচ জয়ের ঈর্ষণীয় রেকর্ড তাদেরই। কানাডার বিপক্ষে স্বাভাবিকভাবে যোজন যোজন এগিয়ে লিওনেল স্কালোনির দল।
সর্বশেষ ২০২১ আসরের ফাইনালে বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়ামে স্বাগতিক ব্রাজিলকে হারিয়ে শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছিল আলবিসেলেস্তেরা। মেসি-ডি মারিয়াদের সামনে এবার ট্রফি নিজেদের করে রাখার হাতছানি। শুধু তাই নয়? লিওনেল স্কালোনির শিষ্যদের সামনে টানা তিনটি আন্তর্জাতিক শিরোপা জয়েরও সুযোগ। এর আগে একমাত্র দল হিসেবে যে কীর্তি গড়েছিল স্পেন। সেবার ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরো জয়ের নজির গড়েছিল লা রোজারা।
দলের প্রাণভোমরা লিওনেল মেসিও এবারের কোপা আমেরিকা মাতাতে প্রস্তুত বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আর্জেন্টাইন কোচ। মিশন শুরুর আগে লিওনেল স্কালোনি বলেন, ‘মেসি পুরোপুরি ফিট। যুক্তরাষ্ট্রে তার জাদু দেখাতে প্রস্তুত। ওকে দেখে গোটা দল উৎসাহে টগবগ করে ফুটছে। প্রত্যেকেই নিজের সেরা ফুটবল খেলতে তৈরি।
আমাদের সবাই পেশাদার, নিজেদের কাজটা ঠিকমতোই জানে। গতবারের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে আমাদের দায়িত্ব বেশি। তাই আবারও শিরোপা জিততে সবাই তৈরি।’ বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ম্যাচেও নিজেদের দারুণভাবে ঝালাই করে নিয়েছে স্কালোনির শিষ্যরা। শুধু তাই নয়? ২০২২ সালের পর কেবলমাত্র একটি ম্যাচেই পরাজয়ের স্বাদ পাওয়া আর্জেন্টিনা এবার কোপায় হট ফেভারিট।
এই ম্যাচে মাঠে নামলেই রেকর্ড গড়বেন লিওনেল মেসি। কোপার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডে চিলির গোলরক্ষক সের্হিও লিভিংস্তোনের সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে আছেন মেসি। কানাডার বিপক্ষে মাঠে নামলেই এককভাবে চূড়ায় উঠবেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা। কোপা আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গোলের মালিক আর্জেন্টিনার নরবের্তো মেন্ডেস ও ব্রাজিলের জিজিনিয়ো। যৌথভাবে সমান সংখ্যক ১৭ গোল করে এ তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন তারা।
এদিকে, ৩৪ ম্যাচে ১৩ গোল নিয়ে তালিকায় সাতে আছেন মেসি। কোপায় সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড গড়তে দরকার আরও ৫টি। এবারের আসরটি হবে মেসির সপ্তম কোপা আমেরিকা। প্রথম আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় হিসেবে ভিন্ন সাত আসরে খেলার কীর্তি গড়বেন মায়ামির এই তারকা। কোপা আমেরিকায় দুটি করে হ্যাটট্রিক আছে ১০ জনের। এবার একটি হ্যাটট্রিক করলে এই তালিকায় নাম লেখাবেন মেসি। টুর্নামেন্টিতে তার একমাত্র হ্যাটট্রিক ২০১৬ আসরে, পানামার বিপক্ষে।
এখন পর্যন্ত কোপার ইতিহাসে দুইবার টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন মেসি। যা যৌথভাবে সর্বোচ্চ সেরা খেলোয়াড় হওয়ার রেকর্ড। এবারের আসরে যদি তৃতীয়বারের মতো টুর্নামেন্ট সেরা হতে পারেন, তবে কোপার ইতিহাসের প্রথম ফুটবলার হিসেবে আরেকটি কীর্তি গড়বেন মেসি।
আরও পড়ুন: ২০২৪ কোপা আমেরিকা: দেখে নিন সব ম্যাচের পূর্ণাঙ্গ সূচি
প্রথম রাউন্ডে তারা চারটি গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলবে। এরপর একে একে অনুষ্ঠিত হবে কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল ও ফাইনাল। থাকছে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী প্লে-অফও। প্রায় মাসব্যাপী আসরে অনুষ্ঠিত হবে মোট ৩২টি ম্যাচ। খেলা গড়াবে ১৪টি ভেন্যুতে। গ্রুপ পর্ব হবে ২০ জুন থেকে ২ জুলাই। কোয়ার্টার ফাইনাল ৫ থেকে ৭ জুলাই। সেমিফাইনাল ১০ ও ১১ জুলাই। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ ১৩ জুলাই। আর ফাইনাল হবে ১৫ জুলাই।