ভারতের কাছে জেতা ম্যাচ হেরে প্রমাণ করল পাকিস্তান ‘আনপ্রেডিক্টেবল’
পাকিস্তান ক্রিকেট দল যে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ ঐতিহাসিকভাবেই এটি মানেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। একদম হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে যাওয়া, কিংবা জয়ের জন্য পর্বতসমান লক্ষ্য অনায়াসে পেরিয়ে যাওয়া ক্রিকেট বিশ্ব পাকিস্তান দলের এমন কাণ্ডের সঙ্গে পরিচিত। সে কারণে দলটিকে ক্রিকেট দুনিয়া ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ নাম দিয়েছে। এবার গতকাল ভারতের কাছে জেতা ম্যাচ হেরে প্রমাণ করল পাকিস্তান আসলেই ‘আনপ্রেডিক্টেবল’।
রোববার (৯ জুন) নিউ ইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠান পাক অধিনায়ক বাবর আজম। বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় হাইভোল্টেজ ম্যাচ। যেখানে স্কোরবোর্ডে মাত্র ১১৯ রান। পাকিস্তান কেন আনপ্রেডিক্টেবল, তা বোঝা গেল আরও একবার। ১২০ রানের ক্ষুদ্র টার্গেটে এসেও পাকিস্তানকে থামতে হয়েছে ১১৪ রানে এসে।
আগে ব্যাট করতে নেমে ভারতের হয়ে ইনিংস শুরু করতে আসেন রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। প্রথম ওভার থেকে ৮ রান সংগ্রহ করে টিম ইন্ডিয়া। মাঠে ১ ওভার গড়ালে ফের বৃষ্টি বাধায় বন্ধ থাকে ম্যাচ। এরপর স্থানীয় সময় ১২টার কিছু আগে মাঠে নামে ক্রিকেটাররা। খেলা শুরু হলে নাসিম খানের করা প্রথম বলেই চার হাঁকান কোহলি। তবে এক বলের ব্যবধানে আউট হন তিনি। উসমান খানের তালুবন্দী হওয়া কোহলির সংগ্রহ সাকুল্যে সেই ৪ রান।
কোহলি সাজঘরে ফিরলে উইকেটে আসে ঋষভ পান্থ। তাকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাট করতে থাকেন অধিনায়ক রোহিত। তবে কোহলির পর উইকেটে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি ম্যান ইন ব্লুদের অধিনায়কও। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। যাবার আগে ১২ বলে ১৩ রান করেন রোহিত। এরপর তৃতীয় উইকেটে ব্যাট হাতে আসেন অক্ষর প্যাটেল।
তাকে নিয়ে চাপ সামলানোর চেষ্টা করেন পান্থ। দুই জন মিলে ৩৯ রানের জুটি গড়েন। তবে এই জুটিও বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি দলীয় ৫৮ রানে নাসিম শাহর বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন অক্ষর। যাবার আগে ১৮ বলে ২০ রান করেন তিনি। এরপর চতুর্থ উইকেটে ব্যাট করতে নামেন সূর্যকুমার যাদাব। তবে উইকেটে বেশিক্ষন থিত হতে পারেননি তিনিও। নিজের নামের পাশে ৭ রান যোগ করেই সাজঘরে ফেরেন তিনি।
একপ্রান্ত আগলে লড়ে যাচ্ছিলেন পান্থ। তাকে ৪২ রানে পরাস্ত করেন মোহাম্মদ আমির। পরের বলে জাদেজাকেও ফেরান এ পেসার। দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে আরও চাপে পড়ে রোহিত শর্মার দল। এ অবস্থায় চাপে পড়েছে টিম ইন্ডিয়া। এরপর ভারতের হয়ে আর কেউই ম্যাচের হাল ধরতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ১১৯ রানে অলআউট হয় ভারত।
৪ ওভারে ২১ রান খরচায় নাসিম শাহ নিয়েছেন ৩ উইকেট। ৩ ওভারে ২১ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন হারিস রৌফ। ৪ ওভারে ২৩ রান খরচায় ২ উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ আমির। এছাড়া একটি উইকেট নিয়েছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি এবং একটি ছিলো রান আউট।
১২০ রানের ছোট লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামলেও শুরু থেকেই সাবধানী ছিলেন বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। পাওয়ার প্লে’তে দু’জন দেখে শুনে খেলতে থাকলেও জাসপ্রিত বুমরাহ’র বিপক্ষে হার মানেন বাবর। স্লিপে দারুণ ক্যাচ নিয়ে বাবরকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান সুরিয়াকুমার।
রিজওয়ানের পরের সঙ্গী উসমান খান। দুজনের রান তোলার গতি ধীর হলেও পাকিস্তান কক্ষপথ থেকে ছিটকে যায়নি কখনোই। ১০ ওভারে তাদের ৫৭ রানও নাসাউ কাউন্টির উইকেটে ছিল যথেষ্ট। তবে বুমরাহ, হার্দিক পান্ডিয়াদের পরিকল্পনা ছিল অন্যরকম। একের পর এক স্লোয়ার এবং ভ্যারিয়েশন দিয়ে পাকিস্তানের ব্যাটারদের বিভ্রান্ত করেছেন।
ফখর জামানও আউট হয়েছিলেন এমনই বাড়তি বাউন্সের স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে। রিজওয়ানও পরাস্ত হন সেই স্লোয়ারেই। পাকিস্তানকে এরপর ম্যাচে ফেরার আর সুযোগই দেয়নি ভারত। শেষ ওভারে নাসিম শাহের দুই চার কেবল পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়েছে। নাসিম শাহ চেষ্টা করলেও ৬ রানে হারে দলটি। ১১৩ রানে থামে পাকিস্তানের ইনিংস।
ভারতের জয়ের নায়ক বুমরাহ। ৪ ওভারে স্রেফ ১৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন ৩০ বছর বয়সী এই পেসার। ম্যাচ সেরার পুরস্কার ওঠে তার হাতেই। বিশ্বকাপের ফেবারিট পাকিস্তান ও ইংল্যান্ডেরও সুপার এইটে খেলা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।