ইতিহাসের প্রথম টাইমড আউট, সাকিবের পক্ষে-বিপক্ষে নানা বিতর্ক
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে টাইমড আউট নিয়মে আউটের সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর থেকেই তৈরি হয়েছে নানা বিতর্ক। এভাবে ব্যাটসম্যানকে আউট করা ক্রিকেটের চেতনা পরিপন্থী কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। ধারাভাষ্যকক্ষে থাকা সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ক ওয়াকার ইউনিস এই আউটকে ক্রিকেটের চেতনার পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন। এমন আউট মানতে পারছেন না ডেইল স্টেইন-রমিজ রাজারাও।
ধারাভাষ্যকক্ষে থাকা ওয়াকার বলেছেন, ‘এটা ক্রিকেটের জন্য ভালো কিছু নয়। এটা ক্রিকেটের চেতনার পরিপন্থী।’ আরেক পাকিস্তানি ধারাভাষ্যকার ও সাবেক অধিনায়ক রমিজ রাজা বলেছেন, ‘এ ঘটনার পর শ্রীলঙ্কা নিশ্চয়ই আরও একটু বেশি আবেগ ও রাগ নিয়ে খেলবে।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ (সাবেক টুইটার) নিজের অবস্থান জানিয়েছেন সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকার ফাস্ট বোলার স্টেইন, ‘এটা ভালো কিছু হলো না।’
তবে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ওপেনার মার্ক ওয়াহ বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি ‘এক্স’–এ লিখেছেন, ‘ক্রিকেটের আইন ও চেতনা ভুলে যান। একজন ন্যায্য মনের ক্রিকেটার কীভাবে এই আউটের জন্য আপিল করার কথা ভাবতেই পারেন, আউটটি তো পরের ব্যাপার।’
আইসিসির নিয়ম কী বলছে?
বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা আইসিসির প্লেয়িং কন্ডিশনে ৪০.১ ধারা অনুযায়ী, কোনও ব্যাটার যদি আউট হয়ে যান বা রিটায়ার হয়ে যান, তাহলে নয়া ব্যাটারকে (নয়া ব্যাটার যদি স্ট্রাইকে থাকেন) দুই মিনিটের মধ্যে খেলতে হবে। অর্থাৎ স্ট্রাইক নিয়ে বল খেলতে হবে নয়া ব্যাটারকে। যদি সেই দু'মিনিটের সময়সীমা পেরিয়ে যায়, তাহলে তাঁকে আউট দেওয়া হবে। ‘টাইমড আউট’ হিসেবে তাঁকে আউট দেওয়া হবে বলে আইসিসির প্লেয়িং কন্ডিশনে জানানো হয়েছে।
MCC-র নিয়ম কি বলছে?
মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) ৪০.১ ধারায় সেই ‘টাইমড আউট’-র বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ৪০.১.১ ধারা অনুযায়ী, কোনও উইকেট পড়লে বা কোনও ব্যাটার রিটায়ার করে গেলে পরবর্তী ব্যাটারকে তিন মিনিটের মধ্যে পরবর্তী বলের মুখোমুখি হতে হবে। যদি সেই সময়ের মধ্যে নয়া ব্যাটার স্ট্রাইক না নেন, তাহলে তিনি ‘আউট’ বলে বিবেচিত হবেন। সেটা 'টাইমড আউট' দেওয়া হবে বলে ৪০.১.১ ধারায় জানানো হয়েছে।
নিয়ম মেনেই আউট
ভারতের শীর্ষ স্থানীয় দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমস বলছে একেবারে নিয়ম মেনেই আউটের আবেদন করেছেন সাকিব। আর তাতে নিয়ম মেনেই আম্পায়ার আউট দিয়েছেন। কারণ স্থানীয় সময় অনুযায়ী, দুপুর ৩ টে ৪৯ মিনিটে চতুর্থ উইকেট পড়েছিল। তারপর মাঠে নামেন ম্যাথিউজ। ক্রিজে এসে অনুভব করেন যে হেলমেটে সমস্যা আছে। তারপর হেলমেট চেয়ে পাঠিয়ে দেন। সেইসময় আউটের আবেদন করেন শাকিব। সেইমতো দুপুর ৩ টে ৫৪ মিনিটে ম্যাথিউজকে আউট দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: উপাচার্যের বিদায়ে শিক্ষার্থীদের উল্লাস, মিষ্টি বিতরণ
পক্ষে বিপক্ষে বিতর্ক
এদিকে এই আউটের পক্ষে বিপক্ষে মত দিচ্ছেন নেটিজেনরাও। জে আই শুভ নামে এক ব্যাক্তি ফেসবুকে কারও নাম প্রকাশ না করে ফেসবুকে লিখেছেন, ছোটলোকের ছোটলোকিপনা দেখালো একজন বিশেষ ব্যক্তি।
সাইফুল ইসলাম সজীব নামে এক ব্যাক্তি লিখেছেন, আমার দেখা ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টাইমড আউট হলেন শ্রীলঙ্কান লিজেন্ড এ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। বাংলাদেশ দলের এমন আপিল সত্যি লজ্জাজনক।
শাওন মাহমুদ নামের এক নারী ফেসবুকে লিখেছেন, দয়া করে রুল ইজ রুলের গল্প আমাকে শুনাতে আসবেন না কেউ। ম্যাথিউসের মতন সিনিয়র একজনকে টাইমড্ আউট রুলে আউট করে খুব ইতিহাস সৃষ্টি করলেন সাকিব। এই এ্যাপিল ইচ্ছে করলে সাকিব তুলে নিতে পারতেন।
এদিকে অনেকে আবার এই আউটকে নিয়ে বেশ গর্বও করছেন। অনেকে এটিকে সাকিবের বুদ্ধিমত্তা হিসেবে দেখছেন। মাঝারুল ইসলাম নিলয় নামের একজন ফেসবুকে কমেন্ট করেছেন, জীবনে প্রথম দেখলাম টাইম আউট। এতোদিন শুধু পড়ে আর শুনে এসেছি। ধন্যবাদ আম্পায়ার ইতিহাসের সাক্ষী হলাম।
এক্ষেত্রে হিন্দুস্তান টাইমস বলছে ক্রিকেটের তথাকথিত স্পিরিটকে দূরে সরিয়ে রেখে আইনের নিরিখে বিচার করলে ‘টাইমড আউট’-র আবেদন করে কোনও ভুল করেননি বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব। ক্রিকেটের স্পিরিটের ধ্বজাধারীরা সাকিবকে আক্রমণ করলেও আদতে ক্রিকেটের আইন মেনেই তিনি চলেছেন।
তবে এই বিতর্কে সাকিবের পাশে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তিনি মনে করেন যারা এই আইন তৈরি করেছিলেন তাঁরা যদি আজ বেঁচে থাকতেন তাহলে আজকের ঘটনা নিয়ে গর্ববোধ করতেন।
টাইগার ক্রিকেটের অন্যতম সফল এই অধিনায়ক তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রায় দেড়শ বছরের ইতিহাসের উনিশ হাজার ছয়শ সাতান্ন তম ম্যাচে এসে প্রথম টাইম আউট। যারা এতো বছর আগে আইনটা করেছিল তারা বেঁচে থাকলে আজ নিজেদের গর্বিত ভাবতে পারতো।