নেদারল্যান্ডসের কাছেও হারল বাংলাদেশ

বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারানোর পর আর জয় পায়নি
বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারানোর পর আর জয় পায়নি  © সংগৃহীত

বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের কাছেও হেরে বসলো বাংলাদেশ। তাও আবার ভালো খেলে নয়, লজ্জাজনক পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে। আজ শনিবার কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে বাংলাদেশকে ৮৭ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে নেদারল্যান্ডস। বিশ্বকাপে এটি তাদের দ্বিতীয় জয়। বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারানোর পর আর জয় পায়নি। 

চলমান বিশ্বকাপে এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে চমক দেখায় তারা। ওয়ানডের বিশ্ব মঞ্চে সব মিলিয়ে ২৬ ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের চতুর্থ জয় এটি। ২০০৩ আসরে নামিবিয়া ও ২০০৭ আসরে স্কটল্যান্ডকে হারিয়েছিল তারা।

বাংলাদেশ জয়ে চলতি আসর শুরুর পর হারের তেতো স্বাদ পেল টানা পাঁচ ম্যাচে। বিস্ময়করভাবে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে খেলে দুটিই হারল তারা। ২০১০ সালে দুই দলের প্রথম দেখায় ডাচদের জয়ের পর ২০১১ বিশ্বকাপে জিতেছিল বাংলাদেশ।

ইডেন গার্ডেনসে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে নেদারল্যান্ডস ভালো করতে পারেনি একদমই। বাংলাদেশও দ্রুত পায় পায় সাফল্য। ৯ বলে ৩ রান করে বিক্রমজিৎ সিং ক্যাচ দেন তাসকিন আহমেদের বলে সাকিব আল হাসানের হাতে। পরের ওভারেই আরেক ওপেনার ম্যাক্স ও ডাউডকে ফেরান শরিফুল ইসলাম।  

৩ বলে কোনো রান করার আগেই তার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে শরীর দূরে রেখে ব্যাট চালিয়ে ক্যাচ দেন স্লিপে দাঁড়ানো তানজিদ হাসানের হাতে। শুরুর ওই ধাক্কা কিছুটা হলেও সামলে নেন ওয়েসলি বারেসি ও কলিন আকারম্যান। কিন্তু খুব লম্বা সময় চালিয়ে নিতে পারেননি তারা।  

এ দুজনের ৫৯ রানের জুটি ভাঙেন মোস্তাফিজুর রহমান। ৮ চারের ইনিংসে ৪১ বলে ৪১ রান করা এই ব্যাটার ক্যাচ দেন সাকিব আল হাসানের হাতে। পরের ওভারে এসেই ৩৩ বলে ১৫ রান করা কলিন আকারম্যানকে আউট করেন সাকিব, এবার ক্যাচ নেন মোস্তাফিজ।  

দুজনের বিদায়ের পর ডাচদের হাল ধরেন স্কট এডওয়ার্ডস। তার দুটি ক্যাচ ছাড়েন লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশ ক্যাচ ছাড়ে পরেও। এই ফাঁকে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন এডওয়ার্ডস। ৬ চারে ৮৯ বলে ৬৮ রান করা এই ব্যাটার আউটও হন ক্যাচ দিয়েই।  

মোস্তাফিজুর রহমানের ওয়াইড ইয়র্কারে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট অঞ্চলে ক্যাচ দেন তিনি, সেটি ধরতে আর ভুল করেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। তার সঙ্গী হিসেবে থাকা সাইব্রান্ডন্ড এঙ্গেলব্রেখটকে ৬১ বলে ৩৫ রান করার পর এলবিডব্লিউ করেন মাহেদী হাসান।  

নেদারল্য্যান্ডসের রান দুইশ ছাড়ানো রানের স্বপ্নটাও স্থিমিত হয়ে আসে। কিন্তু লোগান ফন বিক আলো ছড়ান তাতে। তার ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৬ বলে ২৩ রানের ইনিংস নেদারল্যান্ডসের রানকে নিয়ে যায় দুইশ ছাড়িয়েও বেশ খানিকটা দূরে।  

রান তাড়ায় নামা বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল আগে থেকেই, ছিল ইডেনের উইকেট নিয়ে শঙ্কা; কিছুটা স্লো হয়ে যাচ্ছিল প্রথম ইনিংসে। সবই সত্যি হয়েছে পরে। পঞ্চম ওভারে গিয়ে প্রথম ব্যাটার হিসেবে ফিরে যান লিটন দাস। আরিয়ান দত্তকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ১২ বলে ৩ রান করে ক্যাচ আউট হন লিটন।  

এরপর তানজিদ হাসানও তার পথ ধরেন দলের সংগ্রহে আর কোনো রান যোগ হওয়ার আগে। আউট হওয়ার আগে ৩ চারে ১৬ বলে ১৫ রান করেছেন তিনি। অনেক সমালোচনার পরও আবার তিনে পাঠানো হয় মেহেদী হাসান মিরাজকে। তিনি একপাশটা ধরেই রেখেছিলেন। কিন্তু আরেকদিকে উইকেট যাচ্ছিল নিয়মিত।  

২ চারে ১৮ বলে ৯ রান করার পর পল ফন মেকেরিনের অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন। এরপর বাংলাদেশের ব্যাটাররা যাওয়া-আসার মিছিলে নামেন। সাত রানের ভেতর বাংলাদেশ হারায় তিন উইকেট। ৭০ রানে নেই ছয় উইকেট।  

শুরুটা হয় সাকিব আল হাসানকে দিয়ে। ১৪ বলে স্রেফ ৫ রান করে ফন মেকেরিনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। গত কয়েকদিনে দেশে ফিরে অনুশীলনের পরও আশা দেখানোর মতো কিছু করতে পারেননি।  

৪০ বলে ৩৫ রান করে মিরাজ আউট হন বাস ডে লেডের বলে, তিনিও উইকেটের পেছনেই ক্যাচ দেন। বাংলাদেশের ‘সর্বনাশ’ নিশ্চিত হয় মুশফিকুর রহিম ফন মেকেরিনের বলে বোল্ড হলে। এরপর ফর্মে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ শেষ চেষ্টা করছিলেন মাহেদী হাসানকে নিয়ে। দুজন মিলে ২৮ রানের জুটিও গড়েন।  

কিন্তু এই জুটি ভাঙে রান আউটে। উইকেটের কাছে রেখেই শুরুতে দৌড় শুরু করেন নন স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তাতে সাড়া দেন মাহেদীও। কিন্তু বাস ডে লেডের করা থ্রো সরাসরি স্টাম্পে লাগে, আউট হয়ে যান ৩৮ বলে ১৭ রান করা এই ব্যাটার।  

এরপর একমাত্র আশা ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ- তার জন্যও কাজটা তখন প্রায় অসম্ভব। ২ চারে ৪১ বলে ২০ রান করা এই ব্যাটার আউট হলে শেষ হয়ে সবকিছু। বোধ হয় তৈরি হয় কয়েক বছর ধরে দেখে আসা বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্নের সৌধও!


সর্বশেষ সংবাদ