শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে এশিয়া কাপ থেকে বিদায় বাংলাদেশের
ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হলেও যথারীতি ব্যর্থ হন টপ-অর্ডাররা। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে হৃদয়ের জুটি আশা জাগিয়েছিল বেশ। পরে হৃদয়ের একার লড়াইও টেনে নিতে পারেননি শেষ অবধি। এ দিন শ্রীলঙ্কার রান যায় আড়াইশ ছাড়িয়ে। বোলাররা দারুণ বোলিং করেছিলেন বড় একটা সময়। কিন্তু সাদিরা সামারাবিক্রমাকে আটকে রাখতে পারেননি।
রান তাড়ায় নেমে শুরুটা দারুণ হয়েছিল বাংলাদেশের। ৯ ম্যাচ পর পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ, রান আসে ৪৭। মেহেদী হাসান মিরাজ বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুললেও সেটি করতে পারছিলেন না নাঈম শেখ।
শনিবার কলম্বোয় এশিয়া কাপের সুপার ফোরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে ২১ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৫৭ রান করে লঙ্কানরা। জবাব দিতে নেমে ১১ বল আগেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। যাতে নিশ্চিত হয় এশিয়া কাপের আরেকটি আসর থেকে টাইগারের বিদায়।
মিরাজ অবশ্য আউট হয়েছেন খুবই সাদামাটাভাবে। দাসুন শানাকার শর্ট বল তুলে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ দেন ৪ চারে ২৯ বলে ২৮ রান করে। পুরো ইনিংসজুড়ে ভুগতে থাকা নাঈম শেখ আউটও হয়েছেন দৃষ্টিকটুভাবে। শানাকার শর্টবল পুল করতে গিয়ে কিপারের হাতে সহজ ক্যাচ দেন নাঈম। ৪৬ বলে ২১ রানের ইনিংস শেষ হয় তার।
পরে দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারেননি সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস। পাথিরানার অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে ব্যাট চালান সাকিব। ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে গেলেও আম্পায়ার আউট দেননি, পরে রিভিউ নিয়ে নিজেদের পক্ষে সিদ্ধান্ত পায় শ্রীলঙ্কা। ৭ বলে ৩ রান করেন সাকিব।
তিনে নামা লিটনও অনেকটা একইভাবে আউট হন, তবে স্পিনারের বলে। ওয়ালালগের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারানো বাংলাদেশ ২৮ রানে চার উইকেট হারিয়ে বেশ বিপদে পড়ে যায়।
এরপর দলের হাল ধরেন তাওহীদ হৃদয় ও মুশফিকুর রহিম। দুজনের জুটির শুরুটা ধীরস্থির হলেও আস্তে আস্তে হাত খুলছিলেন তাওহীদ হৃদয়। কিন্তু এমন সময়ই হুট করে আউট হন মুশফিকুর রহিম। শানাকার বলে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। ভাঙে হৃদয়ের সঙ্গে তার ১২২ বলে ৭২ রানের জুটি।
মুশফিকের ফেরার পর শেষ স্বীকৃত ব্যাটার হিসেবে উইকেটে আসেন শামীম পাটোয়ারী। কিন্তু তিনি ভালো করতে পারেননি। ১০ বলে ৫ রান করে মাহেশ থিকসেনার বলে এলবিডব্লিউ হন তিনি। শামীমের ফেরার পর দলের হয়ে একা লড়েন তাওহীদ হৃদয়। কিন্তু তিনিও শেষ অবধি যেতে পারেননি।
আউট হওয়ার আগের বলেও থিকসেনার ফ্রি হিট বলে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরের বল তার প্যাডে লাগলে আম্পায়ার এলবিডব্লিউ আউট দেন। রিভিউ নিলেও আম্পায়ারস কলে সাজঘরে ফিরতে হয় হৃদয়কে। মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়েন হৃদয়। এরপর বাংলাদেশের হার ছিল স্রেফ সময়ের ব্যাপার।
যদিও শেষ উইকেট জুটিতে ফের হাসান মাহমুদ ও নাসুম আহমেদ সামান্য আশা জাগিয়েছিলেন। কিন্তু রানটা তাদের জন্য ছিল একটু বেশিই। শেষ উইকেট জুটিতে ১২ বলে ২০ রান যোগ করেন তারা। কিন্তু নাসুম বোল্ড হলে ম্যাচ জিতে নেয় শ্রীলঙ্কা।
এর আগে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংয়ের শুরুর দিকে রান আসছিল, কিন্তু বাংলাদেশের বোলাররা দুর্দান্ত করছিলেন। তাসকিন আহমেদের প্রথম ওভারে আম্পায়ার আঙুলও তুলেছিলেন, কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান পাথুম নিশাঙ্কা।
ষষ্ঠ ওভার করতে এসে প্রথম দুই বলে দুটি বাউন্ডারি হজম করেন হাসান মাহমুদ। কিন্তু তৃতীয় বলেই তিনি পান উইকেট। তার দারুণ এক বলে উইকেটের পেছনে দিমুথ করুণারত্নের ক্যাচ নেন মুশফিকুর রহিম। এরপরের কিছুটা সময় ছিল বাংলাদেশের জন্য বেশ হতাশার। শুরুতে মুশফিকুর রহিম ও পরে শামীম পাটোয়ারী দুটি ক্যাচ ছাড়েন। মেন্ডিসের ক্যাচ ছেড়ে শামীম দেন ছক্কা।
পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে ৫১ রান খরচ করে ১ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। সাকিব আল হাসান এর মধ্যেই ব্যবহার করে ফেলেন পাঁচ বোলার। অল্প সময় পরপর বোলিং বদলাচ্ছিলেন তিনি, সেটি অবশ্য কাজেও এসেছে। যদিও উইকেট না পাওয়ার হতাশা কাটছিল না। গত কয়েক ম্যাচে শরিফুল ইসলাম নতুন বলে ভালো করছিলেন, এদিন তেমন সুযোগ পাননি।
তবে তিনিই বাংলাদেশকে এনে দেন দ্বিতীয় উইকেট। ৬০ বলে ৪০ রান করা পাথুম নিশাঙ্কাকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন তিনি। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি এই ব্যাটার। এরপর আরেক সেট ব্যাটার কুশল মেন্ডিসকেও সাজঘরে ফেরান শরিফুল। তার বাউন্সার থার্ড ম্যানের উপর দিয়ে মারতে গিয়ে তাসকিন আহমেদের হাতে ক্যাচ দেন ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৭৩ বলে ৫০ রান করা মেন্ডিস। দ্রুত দুই সেট ব্যাটারকে ফিরিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন শরিফুল।
এরপর বাংলাদেশের বোলাররা রীতিমতো চেপে ধরেন শ্রীলঙ্কান ব্যাটারদের। নাসুম ওভারপ্রতি রান দিচ্ছিলেন তিনের নিচে, সাকিবও তাই। আরেকদিকে উইকেট এনে দেন পেসাররা। তাসকিন আহমেদ ২৩ বলে ১০ রান করা চারিথ আশালাঙ্কাকে আউট করেন। ১৬ বলে ৬ রান করা ধনঞ্জয়া ডি সিলভা হাসান মাহমুদের বলে ক্যাচ দেন মুশফিকুর রহিমের হাতে।
ততক্ষণে ক্রিজে চলে এসেছেন সাদিরা সামারাবিক্রমা। তিনি স্পিন খেলছিলেন খুব ভালো, ইনিংস এগিয়ে নিয়েছেন দারুণভাবে। তার সঙ্গে যোগ দেন অধিনায়ক দাসুন শানাকা। ৪০তম ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রান করেছিল শ্রীলঙ্কা। তারা ছিল বেশ চাপেও। এরপর ধীরে ধীরে দলকে তুলে আনার চেষ্টা করেন সামারাবিক্রমা ও শানাকা।
পরের ৫ ওভারে ৪৩ রান তুলে শ্রীলঙ্কা রানটাকে বেশ ভালো অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার আভাস দেয়। কিন্তু এরপর আবারও বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান বোলাররা। সাকিব ৪৪তম ওভারে ৪ রান দেওয়ার পর ৪৬তম ওভারে এসে ৫ রান দেন। এর ঠিক পরের ওভারেই দুর্দান্ত বোলিং করেন হাসান মাহমুদ, দেন কেবল ৩ রান। ওই ওভারেই দাসুন শানাকাকে বোল্ডও করেন হাসান।
তবুও হাল ছাড়েননি সামারাবিক্রমা। সাকিবের করা ৪৮তম ওভারে ১১ রান নেওয়ার পরেরটিতে হাসান মাহমুদকে প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান। তাসকিন আহমেদের শেষ ওভারের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে ওই ওভারেও একটি চার ও ছক্কা হাঁকান। ৮ চার ও ২ ছক্কার ইনিংসে ৭২ বল খেলে ৯৩ রান করেন সামারাবিক্রমা।
বাংলাদেশের তিন পেসারের মধ্যে তাসকিন ১০ ওভারে ৬৩ রান দিয়ে তিন, শরিফুল ৪ ওভারে ৪৮ রান দিয়ে দুই ও হাসান মাহমুদ ৯ ওভারে ৫৭ রান দিয়ে তিন উইকেট নেন। ১০ ওভারে ৪৪ রান দিয়ে সাকিব ও ১০ ওভারে ৩১ রান দিয়ে নাসুম উইকেটশূন্য ছিলেন। ৩ ওভারে ১৪ রান দেওয়া মিরাজও উইকেট পাননি।