১৮ জুন ২০২৩, ১২:১৯

একজন কোলে তুললেন, আরেকজন রোনালদোকে পেয়ে কাঁদলেন

রোনালদোকে কোলে তুললেন ভক্ত  © সংগৃহীত

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ-২০২৪ এর বাছাইয়ে বড় জয় পেয়েছে। ব্রুনো ফার্নান্দেজের জোড়া গোলে বসনিয়া হার্জেগোভিনাকে ৩-০ তে হারিয়েছে তারা। এদিন ম্যাচ চলাকালেই মাঠে ঢুকে পড়েন এক রোনালদো ভক্ত। পর্তুগালের পতাকা হাতে সেই সমর্থক নিরাপত্তারক্ষীদের ফাঁকি দিয়ে পৌঁছে যান রোনলদোর কাছাকাছি গিয়ে কোলে তুলে আকাশের পানে উঁচিয়ে ধরেন সেই ভক্ত। অন্যদিকে রোনালদোর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর শিশুর মতো কেঁদেছেন ইউটিউবার স্পিড। 

শনিবার (১৭ জুন) ইউরো বাছাই পর্বের ম্যাচে ব্রুনো ফার্নান্দেজের জোড়া গোল ও বের্নার্দো সিলভার গোলে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনাকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে পর্তুগাল। ম্যাচে শুরু থেকে খেলেছেন আন্তর্জাতিক ফুটবলের সর্বোচ্চ গোলের মালিক রোনালদো। তবে কোনো গোল করতে পারেননি তিনি। টানা তিন ম্যাচ জিতে ইউরো বাছাই পর্বের শীর্ষে আছে রোনালদোর দল।

৩৮ বছর বয়সী রোনালদো নিয়ে ভক্তদের উন্মাদনার কমতি নেই। যার প্রমাণ তো মিলেছে এদিনের ম্যাচেই। কিংবদন্তি ফুটবলারকে সামনে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাওয়া ভক্ত ছাড়তে পারেননি তাকে ছুঁয়ে দেখার লোভ। তাই ছুঁয়ে তো দেখেছেনই, ঘটিয়েছেন আরও অবাক করার মতো কাণ্ড।  

পর্তুগিজ তারকা জানেন, ভক্তদের কারণেই আজ তিনি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। এই ভক্তরাই তাঁদের মতো তারকাদের সঙ্গে একটু দেখা করতে পারলে সেটা সারা জীবনের গল্পের খোরাক। রোনালদো সে জন্যই সম্ভবত মাঠে ঢুকে পড়া সেই উন্মাদ দর্শক যখন তাঁকে কোলে তুললেন, এতটুকু বাধাও দেননি। উল্টো ভালোবাসায় আপ্লুত হয়ে হাসছিলেন।

নিরাপত্তারক্ষীরাও ততক্ষণে ছুটে এসেছেন মাঠে। কিন্তু কিংবদন্তিকে সেই ভক্তের অর্ঘ্য দেওয়ার একটু বাকি ছিল। ভক্ত দৌড়ে গিয়েই রোনালদোর পায়ে লুটিয়ে পড়েন। এরপর তাকে আলিঙ্গন করেন। শুধু আলিঙ্গন করেই তুষ্ট থাকেননি তিনি। আলিঙ্গনে বাহুপাশে আবদ্ধ পর্তুগিজ কিংবদন্তিকে আকাশের পানে উঁচিয়ে ধরেন সেই ভক্ত।

নিরাপত্তারক্ষীরা ধারেকাছে আসার আগেই রোনালদোর বিখ্যাত ‘সিউ’ গোল উদ্‌যাপনটা তাঁর সামনেই সেরে নিয়ে ভোঁ-দৌড় দেন সেই ভক্ত, যেন বিশ্বজয় করেছেন! স্টেডিয়ামে তখন করতালির আওয়াজ, শেষ বাঁশি বাজার পর সেই উন্মাদ ভক্তেরও নিশ্চয়ই খুশি হওয়ার কথা। রোনালদো অবশ্য হাসিমুখেই সামলেছেন সেই ভক্তকে। এরপর অবশ্য নিরাপত্তারক্ষীরা এসে সেই ভক্তকে সরিয়ে নেয়।

এদিকে, ড্যারেন ওয়াটকিনস জুনিয়র নামে বিখ্যাত লাইভস্ট্রিমার ইউটিউবে সেরা কনটেন্ট নির্মাতাদের একজন। ব্যক্তিত্ব ও কৌতুক করার দক্ষতায় ভীষণ জনপ্রিয় ‘স্পিড’ নামে পরিচিতি পাওয়া ইউটিউবার। তিনি আবার রোনালদোর পাগলভক্তও। বহুদিন ধরে চেষ্টা করছিলেন নিজের আদর্শ ও অনুপ্রেরণাদাতা কিংবদন্তির সঙ্গে দেখা করতে। রোনালদোর সঙ্গে দেখা করতে এর আগে একবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে ওল্ড ট্রাফোর্ডে চলে এসেছিলেন স্পিড। কিন্তু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সেদিন রোনালদোকে ম্যাচের স্কোয়াডে না রাখায় তাঁর ইচ্ছাটা পূরণ হয়নি।

স্টেডিয়াম থেকে রোনালদো যখন গাড়িতে বেরোচ্ছিলেন, তখন এক পাশেই স্পিডকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন লিয়াও। রোনালদোর গাড়ি দেখেই হাত ইশারা করে থামতে বলেন লিয়াও। এরপর গাড়ির কাছে গিয়ে লিয়াও হাত ইশারায় কিছু একটা বলেন রোনালদোকে। দেখে মনে হয়েছে, একজন ভক্তের সঙ্গে দেখা করতে হবে, সেটা বলেছেন রোনালদোকে।

এরপর যা ঘটল স্পিড সারা জীবন তা মনে রাখবেন। রোনালদো গাড়ির দরজা খোলার সময়ই আনন্দে শিশুর মতো লাফাচ্ছিলেন স্পিড। পর্তুগিজ কিংবদন্তি গাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় স্পিডের চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছিল, যেকোনো মুহূর্তে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হতে পারেন! থরথর আবেগ ভর করেছিল তাঁর মধ্যে। শিশুর মতো লাফাতে লাফাতে ‘ও মাই গড! ও মাই গড!’ বলছিলেন। রোনালদো একটু কাছে আসতেই হাঁটু মুড়ে বসে পড়েন স্পিড, যেন সামনে কোনো অবতার দাঁড়িয়ে! এরপর কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে কিছু একটা বলেই জড়িয়ে ধরেন রোনালদোকে। পর্তুগিজ তারকাও উষ্ণ আলিঙ্গন উপহার দেন স্পিডকে।

রোনালদো এসে তাঁকে জড়িয়ে ধরেন। আবেগে কাঁপতে কাঁপতে স্পিড দেখিয়েছেন নিজের বাঁ হাতে রোনালদোর ট্যাটু। ছবি তোলার সঙ্গে রোনালদোকে নিয়ে তাঁর ‘সিউ’ গোল উদ্‌যাপনও সেরেছেন। রোনালদো চলে যাওয়ার পর স্পিডের প্রতিক্রিয়া মনে রাখবেন আশপাশে দাঁড়িয়ে দৃশ্যটি দেখা অনেকেই। লাফাতে লাফাতে স্পিড বলছিলেন, ‘আই ডিড ইট! আই ডিড ইট! টোল্ড ইউ ব্রো, আই ডিড ইট!’ রোনালদো চলে যাওয়ার পর সে জায়গাতেই বসে পড়ে ‘ও মাই গড’ বলতে বলতে শিশুর মতো বিলাপ করছিলেন। 

গত বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) একই অভিজ্ঞতা হয়েছে রোনালদোর সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসির সঙ্গেও। বেইজিংয়ের ওয়ার্কাস স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ চলাকালীন মাঠে ঢুকে পড়েন এক মেসিভক্ত। প্রিয় তারকাকে একবার জড়িয়ে ধরতে তিনি গ্রেফতার হওয়ার ঝুঁকি পর্যন্ত নেন। সে স্বপ্ন অবশ্য পূরণও হয়েছে তার। মেসিকে কাছে থেকে তো দেখেছেনই, কথাও বলেছেন। তবে পরে নিরাপত্তারক্ষীরা এসে তাকে চ্যাংদোলা করে মাঠের বাইরে নিয়ে যান।