৩০ অক্টোবর দেয়া হবে ব্যালন ডি’অর, জয়ের দৌড়ে এগিয়ে যারা
- টিডিসি স্পোর্টস
- প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৩, ০৯:৩০ AM , আপডেট: ১০ জুন ২০২৩, ১২:৩৯ PM
ফুটবলের সর্বোচ্চ মর্যাদার পুরস্কার ব্যালন ডি’অর। তবে এটি কার হাতে উঠছে তা দেখার জন্য সারা বিশ্বের ক্রীড়াপ্রেমীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে। চলতি বছরের ব্যালন ডি’অর প্রদানের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৩০ অক্টোবর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে এক জমকালো আয়োজনে ২০২২-২৩ মৌসুমের ব্যালন ডি’অর বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে। এ নিয়ে মাসিক তালিকা প্রকাশ করেছে ফুটবল বিষয়ক জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম গোল ডটকম। এ তালিকায় ফেভারিট রয়েছেন পাঁচ ফুটবলার।
১৯৫৬ সাল থেকে ব্যালন ডি’অর দিয়ে আসছে ফ্রেঞ্চ ফুটবল ম্যাগাজিন। তারাই শুক্রবার (৮জুন) পুরস্কার প্রদানের তারিখ ঘোষণা করেছে। প্রতিবছর গণমাধ্যম প্রতিনিধি, জাতীয় দলের অধিনায়ক ও কোচদের ভোটের ভিত্তিতে নির্বাচিত হয় বর্ষসেরা খেলোয়াড়। এই পুরস্কারের জন্য ৩০ জনকে মনোনীত করবে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া আরও ২০ নারী ফুটবলারকেও মনোনয়ন দেওয়া হবে।
বর্ষসেরা গোলরক্ষকের ইয়াসিন ট্রফির জন্য ১০ জন ও বর্ষসেরা তরুণ ফুটবলারের পুরস্কার কোপা ট্রফির জন্য আরও জনকে মনোনীত করবে তারা। কারা কারা এই পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পাচ্ছেন সেটা জানা যাবে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর। সেদিনই জানতে পারবেন ভক্তরা কারা কারা আছেন ব্যালন ডি’অর জয়ের তালিকায়।
ফুটবলের বিশ্বখ্যাত ওয়েবসাইট গোল ডটকমের দৃষ্টিতে আসন্ন ২০২৩ ব্যালন ডি’অরের জন্য ফেভারিট পাঁচ ফুটবলার
১. আর্লিং হালান্ড (ম্যানচেস্টার সিটি)
মেসির ব্যালন ডি’অর জয়ের ক্ষেত্রে বড় বাধা ম্যানচেস্টার সিটির ফরোয়ার্ড হালান্ড। চলতি মৌসুমে নরওয়েজীয় এই স্ট্রাইকার রীতিমতো অতিমানবীয় পারফরম্যান্স করেছেন। ২০২২-২৩ মৌসুমে ফর্মের তুঙ্গে আছেন অর্লিং হালান্ড। তার জাদুকরি পারফরম্যান্সে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জিতেছে ম্যানচেস্টার সিটি।
প্রিমিয়ার লিগে ৩৬ গোল করে ইউরোপীয় গোল্ডেন বুট নিশ্চিত করে ফেলেছেন এ নরওয়েজিয়ান। ইন্টার মিলানের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে গোল করে সিটিকে শিরোপা এনে দিতে পারলে লিওনেল মেসিকে টপকে ২০২৩ সালের ব্যালন ডি’অর জিততে পারেন তিনি। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে এ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতায় ৫২ ম্যাচে ৫২ গোল করেছেন হালান্ড। পাশাপাশি ৯ গোলের জোগান দিয়েছেন তিনি।
২. লিওনেল মেসি
বিশ্বকাপজয়ী মেসির দল পিএসজি চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলো থেকেই বাদ পড়েছে। তবে দলটিকে লিগ ওয়ান শিরোপা এবং ফ্রেঞ্চ কাপ জেতার দৌড়ে রেখেছেন মেসি। কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে দীর্ঘ ৩৬ বছর পর শিরোপা জিতিয়েছেন। পিএসজিকে লিগ ওয়ানের শিরোপা জয়ে ভূমিকা রাখলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে নিজ ক্লাবের ছিটকে পড়াটা ছিল তার জন্য হতাশার। এবারো হয়তো ব্যালন ডি’অর জয় করতে পারেন তিনি। তবে সেটি একেবারেই নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। এ মৌসুমে পিএসজির হয়ে সব প্রতিযোগিতায় ৪১ ম্যাচে ২১ গোল করেছেন ৩৫ বছর বয়সী তারকা। বিপরীতে সহায়তা করেছেন আরো ২০ গোলে।
৩. কিলিয়ান এমবাপ্পে (প্যারিস সেন্ট জার্মেই)
কাতার বিশ্বকাপে ফাইনালে অতুলনীয় ছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। সর্বোচ্চ গোলস্কোরারও ছিলেন তিনি। তবে দুর্ভাগ্যবশত সোনালি ট্রফিতে চুমু আঁকা হয়নি তার। কিন্তু ২৪ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডের ঈর্ষণীয় পারফরম্যান্সেই শিরোপা লড়াইয়ের মঞ্চে নাম লেখায় ফ্রান্স। ফলে ব্যালন ডি’অর জিততে পারেন তিনিও। বায়ার্ন মিউনিখের কাছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলয় পরাজিত হওয়াটা এম্বাপ্পের প্রথম ব্যালন ডি’অর জয়ে কিছুটা অন্তরায় হিসেবে দেখা দিয়েছে।
তবে ক্লাব ও দেশের হয়ে গোল করার দুর্দান্ত দক্ষতাই তার বর্ষসেরার খেতাব জয়ের জন্য যথেষ্ট।এ মৌসুমে ক্লাব ও দেশের হয়ে ৫০টিরও বেশি গোল করেছেন ফরাসি স্ট্রাইকার। ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপ থেকে তিনি জয় করে এনেছেন গোল্ডেন বুট। শুধু তাই নয়, আর্জেন্টিনার বিপক্ষে বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সের হয়ে হ্যাটট্রিকের বিরল এক কৃতিত্বও অর্জন করেছেন এমবাপ্পে। এছাড়া এ মৌসুমে পিএসজির হয়ে ৪৩ ম্যাচে অংশ নিয়ে ৪১ গোল করেছেন তিনি। পাশাপাশি সহায়তা করেছেন ১০ গোলে।
৪. কেভিন ডি ব্রুইনা (ম্যানচেস্টার সিটি)
সাম্প্রতিক মৌসুমগুলোতে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে অসাধারণ খেলছেন কেভিন ডি ব্রুইনা। ২০২২-২৩ মৌসুমটি এর ব্যতিক্রম ছিল না। সিটির অনন্য এক আবিষ্কার তিনি। অসাধারণ পাস দেয়ার দক্ষতা এবং দলীয় লক্ষ্য অর্জনে ধারাবাহিক ভূমিকার মাধ্যমে সমর্থক-পন্ডিতদের বিস্মিত করে চলেছেন এ বেলজিয়ান।
ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে এ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতায় ৪৮ ম্যাচে ১০ গোল করেছেন ব্রুইনা। পাশাপাশি ৩১ গোলে সহায়তা করেছেন তিনি। প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপ জয়ী এ তারকা ২০২৩ ব্যালন ডি’অর জয়ের অন্যতম দাবিদার।
৫. ভিক্টর ওসিমেন (নাপোলি)
এই মৌসুমে নিজেকে দারুণভাবে এগিয়ে নিয়েছেন নাপোলির ভিক্টর ওসিমেন। নায়কোচিত পারফরমেন্সের মাধ্যমে এখন নিজেকে বিশ্বসেরা স্ট্রাইকারদের একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি।
লুসিয়ানো স্পালেত্তির দলের হয়ে দুর্দান্ত পারফর্মেন্সের মাধ্যমে নাইজেরীয় এ আন্তর্জাতিক নাপোলিকে সিরি এ লিগের শিরোপা এনে দিয়েছেন। পাশাপাশি পৌঁছে দিয়েছেন উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে।
ওসিমেন হচ্ছেন একজন শক্তিশালী ও অ্যাথলেটিক স্ট্রাইকার। যিনি তার ওই সামর্থ্যকে মাঠে বল নিয়ন্ত্রণের সময় দারুণভাবে ব্যবহার করেছেন। তিনি একজন নিখুঁত ফিনিশার, যেকোনও মাঠে গোল করতে পারদর্শী।
নাপোলির হয়ে ২০২২-২৩ মৌসুমে সবধরনের প্রতিযোগিতায় ৩৮ ম্যাচে অংশ নিয়ে ৩০ গোল করেছেন ওসিমেন। পাশাপাশি ৫ গোলে সহায়তা করেছেন তিনি। ওই দক্ষতার মাধ্যমে ব্যালন ডি’অর জয়ের দাবিদারদের পাশে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এ তারকা। যদিও শেষ পর্যন্ত খেতাব জয় করতে পারবেন কিনা সেটা বলা কঠিন।
অবশ্য তার আগে ৬ সেপ্টেম্বর পুরস্কারটির জন্য মনোনীত ফুটবলারদের নাম প্রকাশ করবে তারা। যেখানে পুরুষ বিভাগে বর্ষসেরা নির্বাচনের জন্য ৩০ জন ফুটবলারের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। যাদের মধ্যে একজনের হাতে উঠবে ২০২৩ সালের ব্যালন ডি’অর। তবে অনেকের চোখে এগিয়ে ম্যানচেস্টার সিটি স্ট্রাইকার আর্লিং হলান্ড।
উল্লেখ্য, ব্যালন ডি’অরে কেন মেসি এখন আর কেন শতভাগ ফেবারিট নন, তা লরিয়াস পুরস্কার অনুষ্ঠানে এসে স্পষ্ট করেছেন লুইস ফিগো। মূলত, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বাজে পারফরম্যান্সের কারণেই এই দৌড়ে কিছুটা হলেও পিছিয়ে রয়েছেন আর্জেন্টিনার এই ফুটবলার। চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল পার্থক্য গড়ে দিতে পারে বলেও মন্তব্য করেন ফিগো।
ব্যালন ডি’অর জয়ে কাকে ফেবারিট মানছেন জানতে চাইলে পর্তুগিজ কিংবদন্তি বলেছেন, ‘আমি মেসিকে বাছাই করব না; কারণ, সে আর চ্যাম্পিয়নস লিগে নেই। আমি মনে করি, যারা ভোট দেয় তাদের ওপর এই প্রতিযোগিতার দারুণ প্রভাব আছে।