১৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৫৮

খেলার নামে লিটন-মোস্তাফিজদের দিয়ে লাইক-কমেন্টের ব্যবসা আইপিএলে

লিটন-মোস্তাফিজদের দিয়ে লাইক-কমেন্টের ব্যবসা আইপিএলে  © সংগৃহীত

ইন্ডিনিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল) ১৬তম আসরে দুই দল কলকাতা নাইট রাইডার্স ও দিল্লি ক্যাপিটালসের ফেসবুক পেজ দেখলে আপনার মনে হতে পারে, টাইগার ক্রিকেটার লিটন-মোস্তাফিজ দল দুটির সবচেয়ে বড় তারকা। ফ্র্যাঞ্চাইজি দুটির অফিসিয়াল ফেসবুক ঘুরে দেখা যায়, লিটন-মোস্তাফিজের খেলায় যত না বেশি মনোযোগ; তার চেয়ে বেশি মনোযোগ ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর প্রচার-প্রচারণা। লিটন সেভাবে না করলেও মোস্তাফিজকে দিয়ে রীতিমতো দিল্লির সামাজিক মাধ্যমের প্রচারণা চালানো হয়েছে।

আইপিএলের চলমান প্রথম রাউন্ডের খেলায় মোস্তাফিজ দিল্লির হয়ে মাঠে নেমেছেন মোটে দুবার। আর লিটনের তো এখনো অভিষেকই হয়নি। দেশের ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রথম রাউন্ডের খেলা শেষ হতে চললেও লিটনের অভিষেক হওয়া দুঃখজনক। মূলত ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো বাংলাদেশি ক্রিকেটার যে উদ্দেশ্যে দলে ভিড়িয়েছে সে উদ্দেশ্য থেকে সরে গেছে। তারা এখন তাদের বেঞ্চে বসিয়ে নিয়মিত নিজেদের প্রচার-প্রচারণায় কাজে লাগাচ্ছেন। 

এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেম নিয়ে খেলছে আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো? এমনই প্রশ্ন তুলেছেন ভক্ত-সমর্থকরা। কারণ লিটন-মোস্তাফিজদের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা মানেই লাইক-কমেন্ট, আর শেয়ারের বন্যা। যা দিনশেষে পকেট ভারী করছে আইপিএলের দলগুলোর। তাদেরকে দিয়ে (লিটন-মোস্তাফিজ) প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে নিজেদের স্যোশাল মিডিয়ায় বাংলাদেশি ভক্তদের সংযুক্ত করছেন।

অবশ্য আইপিএলে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের সঙ্গে এমন আচরণ নতুন কিছু নয়। এর আগেও মাঠে নয় ফেসবুকেই বেশিরভাগ সময় সীমাবদ্ধ থাকতে হয় এদেশের ক্রিকেটারদের। অতীত অভিজ্ঞতা অন্তত তাই বলে। কারণ সাকিবের মতো বিশ্বসেরা তারকাকেও না খেলিয়ে বসিয়ে রেখেছিল হায়দরাবাদ-কলকাতার মতো ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো।

মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশের হয়ে যখন আয়ারল্যান্ড সিরিজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিল; সে সময় মোস্তাফিজকে উড়িয়ে নিয়ে যায় দিল্লি। তাড়াহুড়ো দেখে মনে হচ্ছিল মোস্তাফিজ দলের পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে যাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবে তা উল্টো। খেলার মাঠে নয় বরং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই মোস্তাফিজকে নিয়ে দিল্লির ফ্র্যাঞ্চাইজির মাতামাতি চলছে।

প্রচারণার ভূমিকায় সোমবার (১৭ এপ্রিল) দিল্লির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে দেখা মিলল মোস্তাফিজের। সেখানে এক ভিডিওতে ফ্র্যাঞ্চাইজিটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের চ্যানেলসমূহ ফলো করার আহ্বান জানাতে দেখা যায় তাকে। সাত সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে মোস্তাফিজকে বাংলায় কথা বলতে দেখা যায়। তিনি বলেন, 'আমাদের যত সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেল আছে–ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, ফেসবুক; আপনারা সবাই ফলো করুন।'

মোস্তাফিজের করা সেই ভিডিওটি এখন ১ দশমিক ৪ মিলিয়নের মাইলফলক ছুঁয়েছে। যা দিল্লির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে এই আসরের সর্বোচ্চ রিচ। সেখানে বাংলাদেশে ক্রীড়া প্রেমীদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তারা মাঠের মোস্তাফিজকে কোনোভাবেই বিজ্ঞাপনের মোস্তাফিজকে দেখতে প্রস্তুত ছিলেন না। দিল্লির ওই পোস্টে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৫৬ হাজার ব্যবহারকারী প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। ১৮ হাজার ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন।

ইমতিয়াজ মেহেদী নামে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘‘এবার পুরোপুরি ক্লিয়ার হলাম। আইপিএলের দলগুলো বাংলাদেশের প্লেয়ার কিনে শুধুমাত্র নিজেদের সামাজিক মাধ্যমগুলোতে লাইক-কমেন্ট-ভিউ বাড়ানোর জন্য। তারা যেন বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের দিয়ে রীতিমতো ব্যবসা করছেন! মোস্তাফিজকে সহজ-সরল পেয়ে ওকে দিয়ে প্রচারণাটা আরও সহজে করে নিল।’’

এদিকে, বাংলাদেশের ক্রিকেটে এই সময়ে অন্যতম বড় তারকা লিটন দাসকে নিয়ে কলকাতা নাইট রাইডার্সে চলছে মাতামাতি। গত ৯ এপ্রিল কলকাতার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান তিনি। একাদশে সুযোগ পাবেন কি না সেটা নিশ্চিত নয়, তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকেও নিয়ে বেশ হাইপ চলছে।

বুধবার (১২ এপ্রিল) কেকেআর তাদের ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও পোস্ট করে। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা, দ্য বাংলাদেশি টাইগার্স নাউ ইন কেকেআর ক্যাম্প! সঙ্গে আগুনের একটা ইমোজি। নাম উল্লেখ না করলেও লিটনকেই যে বাংলার বাঘ বলেছে তারা, তা সহজেই বোঝা গেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত বাংলাদেশের মানুষের লক্ষ্য করেই মোস্তাফিজ ও ‍লিটনকে স্পোর্টিং ইভেন্ট হিসেবে আইপিএলের রয়েছে বিশাল মার্কেট। বাংলাদেশেও অত্যন্ত জনপ্রিয় এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টটি। 

আইপিএলের দলগুলোর এমন কর্মকাণ্ডে হতাশ বাংলাদেশ দলের সাবেক ক্রিকেটার মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। গত বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) প্রিমিয়ার লিগে ম্যাচ শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে নিজের ভাবনা জানান তিনি। 

আইপিএল ইস্যুতে মাশরাফী বলেন, ‘আইপিএলে লিটন খেলতে গেছে এটা খুবই ভালো ব্যাপার। তবে আপনি যদি দেখেন, আমাদের মোস্তাফিজকে চাটার্ড ফ্লাইকে নিয়ে খেলালো না। প্রাধান্য দেওয়ার একটা বিষয় আছে। আমরা অবশ্যই চাইব আমাদের প্লেয়ারদের সেইরকম প্রাধন্য দেওয়া হোক, কারণ আমাদের প্লেয়ারদের সামর্থ্য রয়েছে। তবে তা তো কখনোই হয়না, তাই ওটা (আইপিএল) নিয়ে মাথাব্যাথার কিছু নেই। আমাদের প্রাধান্য তাই বাংলাদেশ দল।’

আইপিএলের দলগুলো কি বাংলাদেশের মানুষের ক্রিকেটের প্রতি আবেগকে কাজে লাগাচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে মাশরাফী বলেন, ‘এখানে অনেক বিষয় আছে সোশ্যাল মিডিয়ার। আর আমরা বিষয়গুলো নিয়ে খুব এক্সসাইটেড হয়ে যাই। বাংলাদেশ ক্রিকেটের একটা ফ্যানবেজ আচে। যেটা হয়তো তারা ব্যবহার করতে পারে।’

অবশ্য লিটন-মোস্তাফিজকে দলে নিলেও খুব বেশি সুযোগ তারা পাবে না, সেই শঙ্কার কথা আগেই জানিয়েছিল বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। সম্প্রতি গণমাধ্যমে পাপন বলেন, ‘আমি একটা কথা বলেছিলাম আপনাদের। খেলাবে তো? না খেলে ওখানে গিয়ে বসে থাকা, এর চেয়ে দেশের জন্য খেলাটা কি ভালো না?’।