দুবাই গেলেও অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী মঞ্চে উঠেননি সাকিব
দুবাইয়ের আলোচিত আরাভ জুয়েলার্স উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। তবে দুবাই গেলেও অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী মঞ্চে উঠেননি সাকিব। মঞ্চে না উঠেই ১০ মিনিটের মাথায় অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে চলে যান তিনি। গতকাল ছিল ওই প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। অপেক্ষায় থাকা হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশি এ ঘটনায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন।
বুধবার (১৫ মার্চ) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে একটি রেঞ্জ রোভার গাড়িতে করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের দেরা বাজারে আসেন সাকিব। এ সময় তার সঙ্গে গাড়িতে ছিলেন প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আরাভ খান।
এর আগে, অনুষ্ঠানস্থলে যান উপস্থাপক দেবাশীষ বিশ্বাস, সঙ্গীত শিল্পী বেলাল খানসহ প্রমুখ। স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির উদ্বোধনী আয়োজন শুরু হয়। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রধান ক্রেতাদের সাকিবের সই করা জার্সি ও ব্যাট উপহার দেওয়ার ঘোষণা দেন আরাভ খান।
জানা গেছে, সাকিব ছাড়াও একঝাঁক তারকা উপস্থিত ছিলেন সেই অনুষ্ঠানে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র পরিচালক দেবাশীষ বিশ্বাস, গায়ক নোবেল, রুবেল খন্দকার, বেলাল খান, জাহেদ পারভেজ পাভেলের মতো আরো অনেকে।
এদিকে ঢাকায় পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) স্কুল অব ইন্টেলিজেন্স পরিদর্শক মামুন ইমরান খানকে (৩৪) পুড়িয়ে হত্যা মামলার ৬ নম্বর পলাতক আসামি আরাভ খান। আরাভ নিজেকে বাঁচাতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অর্থের বিনিময়ে আরেকজনকে আদালতে আত্মসমর্পণ করিয়েছিলেন। কিন্তু জেলে থাকা সেই তরুণ এক পর্যায়ে সত্য প্রকাশ করে দেয়। এরপর আদালত বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিতে বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি)।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ৮ জুলাই রাতে নিখোঁজ হন এসবির পরিদর্শক মামুন ইমরান খাঁন। পরিবারের সদস্যরা তার খোঁজ না পেয়ে পরদিন সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। সেই জিডির তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের খিলগাঁও জোনাল টিম জানতে পারে, রহমত নামে এক বন্ধুর সঙ্গে মামুন ইমরান বনানীর একটি বাসায় আফরিন নামে এক কথিত মডেলের জন্মদিনের পার্টিতে গিয়েছিলেন। সেখানে আফরিনের সহযোগীরা তাকে ব্লাকমেইল করে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে করা হয়। সেই মরদেহ উদ্ধার করা হয় গাজীপুরের একটি বাঁশঝাড় থেকে।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ পুলিশ রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয় ওরফে হৃদিসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। এ সময় রবিউল ইসলাম ওরফে আপন পলাতক ছিলেন। আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর রবিউল ইসলাম ওরফে আপন নামে ওই ব্যক্তি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
সূত্র জানায়, পুলিশ পরিদর্শক মামুন ইমরান খাঁন হত্যাকাণ্ডে অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আপনের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার আশুতিয়ায়। তার বাবার নাম মতিউর রহমান মোল্লা। আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর আপন নিজেকে বাঁচানোর জন্য ফন্দি আঁটেন। কৌশলে চাঁদপুরের কচুয়া থানাধীন সিংআড্ডা এলাকার নুরুজ্জামানের ছেলে আবু ইউসুফকে অর্থের প্রলোভনে তার বদলে আদালতে আত্মসমর্পণ করাতে রাজি করেন।
অর্থের লোভে আবু ইউসুফ নিজেকে রবিউল ইসলাম ওরফে আপন পরিচয় দিয়ে আত্মসমপর্ণ করেন। আদালত আবু ইউসুফকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। পরে আপন তার পরিবারকে অর্থ দেয়া বন্ধ করে দিলে ইউসুফ বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষকে জানান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মহানগর দায়রা জজ ফয়সল আতিক বিন কাদির ২০২১ সালের ২ মার্চ বিষয়টি তদন্ত করার জন্য মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে আদেশ দেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে রবিউল ইসলাম ওরফে আপনের নামে আবু ইউসুফের কারাবন্দি থাকার বিষয়টির প্রমাণ পায়।
সূত্র জানায়, নিজের বদলে আবু ইউসুফকে কারাগারে পাঠানোর আগেই আপন ভারতে পালিয়ে যায়। ২০২০ সালের ২৮ জুলাই তিনি পশ্চিমবঙ্গের নরেন্দ্রপুর উদয় সংঘ ক্লাব এলাকার বাসিন্দা হিসেবে একটি ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেন। জালিয়াতি করে বানানো ওই পাসপোর্টে তার বাবার নাম হিসেবে ব্যবহার করেন জাকির খান, মায়ের নাম দেন রেহানা বিবি খান এবং স্ত্রীর নাম সাজিমা নাসরিন। তার ভারতীয় পাসপোর্ট নম্বার ইউ ৪৯৮৫৩৮৯। ভারতীয় পাসপোর্ট সংগ্রহ করে আপন আরাভ নাম নিয়ে দুবাই যাতায়াত শুরু করেন। তার পাসপোর্টে শেনজেন ভিসাও রয়েছে।
ডিবির অনুসন্ধানেও নিজের বদলে অন্যকে আসামি বানিয়ে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি প্রমাণিত হয়। পরে সেই ব্যক্তি পালিয়ে চলে যান ভারতে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভারত থেকে বানিয়ে নেন একটি পাসপোর্ট। ভারতীয় নাগরিক পরিচয়েই বসবাস শুরু করেন দুবাইতে। সেখানে আরাভ নামে একটি জুয়েলারি নেন। সেই দোকানের উদ্বোধন করতেই দুবাই গেলেন ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান।