মরক্কোর ইতিহাস নাকি চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের আরেকবার ফাইনাল
আফ্রিকার হয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টিকারী মরক্কো বিশ্বকাপে তাদের জাদুকরী পারফরমেন্স অব্যাহত রেখেছে। উত্তর আফ্রিকার এ আরব দেশটির সাফল্য অভাবনীয়। যা কেউ কল্পনা করেনি তা করে দেখিয়েছে মরক্কো। অন্যদিকে, চলমান কাতার বিশ্বকাপে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিচ্ছে ফ্রান্সও। বিশ্বকাপ ট্রফি ধরে রাখার পথে দারুণ ছন্দে আছে দেশটি। টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার হাতছানি বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের। আজ মরক্কোর ইতিহাস নাকি চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের আরেকবার ফাইনাল?
বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে আজ বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) আল বাইত স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ১টায়।
কোনো আরব দেশ কিংবা আফ্রিকান দেশ আগে কখনো বিশ্বকাপ সেমিতে ওঠেনি। বিশ্বকাপের ৯২ বছরের ইতিহাসে এটা অন্যতম সেরা গল্প, যার উপসংহার এখনই টানার সময় আসেনি বলে মনে করেন মরক্কোর কোচ ওয়ালিদ রেগরাগুই। তিনি বলেন, আমাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, আমরা বিশ্বকাপ জিততে পারি কিনা? তখন আমার উত্তর, কেন নয়? আমরা স্বপ্ন দেখি, আর স্বপ্ন দেখতে তো আপনার কোনো খরচও হবে না। ইউরোপীয় দলগুলোই সচরাচর বিশ্বকাপ জয় করে। আমরা এরই মধ্যে শীর্ষ দলগুলোর বিপক্ষে খেলেছি। আমাদের পথটা সহজও ছিল না। কিন্তু এখন যেকোনো দলই আমাদের বিপক্ষে খেলতে ভয় পায়।
চোখ ধাঁধানো ধারাবাহিক পারফরমেন্স প্রদর্শন করে চলা এমবাপ্পে, গ্রিজম্যানদের তাই সেমিফাইনালে উঠে আসাটা প্রত্যাশিতই। তবে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে মরক্কো উঠে আসবে এমন ভাবনা হয়তো কারোরই ছিল না।
কিন্তু একের পর এক চমক আর আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান পারফরমেন্স প্রদর্শন করে আফ্রিকান দল সেই অসাধ্য সাধন করেছে। একের পর এক চমক দেখানো আর অঘটনের জন্ম দেয়া মরক্কোর চ্যালেঞ্জ এবার ফাইনালের টিকিট পাওয়া। এই স্বপ্ন সফল করতে হলে হাকিমি, ইউসেফদের আরও একবার খেলতে হবে মুগ্ধতা ছড়ানো ফুটবল।
মরক্কোর মূল শক্তি তাদের রক্ষণের বোঝাপাড়া। তাদের পরিকল্পনা মাঠে কাজে লাগানোর জন্য মানসিক সচ্ছলতা। রক্ষণের চেয়ে অবশ্য ফ্রান্সের মিডফিল্ড নিষ্ক্রিয় করে রাখতে সোফিয়ান আমরাবাতের দিকে তাকিয়ে থাকবে মরক্কো। মুলত গ্রিজমানকে নিষ্ক্রিয় করে রাখতে আরও একদিন আমরাবাতের জ্বলে ওঠার বিকল্প নেই। সেই সাথে গোলকিপার ইয়াসিন বোনোর দুর্দান্ত ফর্মটাও তাদের মানসিকভাবে এগিয়ে রাখবে। মরক্কোর গোলবারের প্রহরীকে ফাঁকি দিতে ফ্রান্সকে হয়তো বহু কাঠখড় পোড়াতে হবে।
ফ্রান্সের মুল শক্তি তাদের আক্রমণভাগ। এমবাপ্পে আর ডেম্বেলেকে সামলাতে যেখানে হিমশিম খাচ্ছে দলগুলো তার মাঝেই দুর্দান্ত ফর্মে আছেন গ্রিজমান ও জিরু। জিরু সাধারণত ফ্রান্স দলে সহযোগী স্ট্রাইকার যেভাবে খেলে সেভাবেই খেলে থাকেন। বয়স হওয়ার কারণে রক্ষণ রেখার পেছন দিয়ে ক্ষিপ্র দৌড় দিয়ে ডিফেন্ডারদের টেনে নিয়ে যাওয়া বা মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটিয়ে রক্ষণের রেখাটা এলোমেলো করে দেওয়ার তেমন চেষ্টা করেন না। তবে কোন ডিফেন্ডারের গায়ে গা লাগিয়ে বলকে আগলে রাখতে এখনও পটু তিনি।
ফ্রান্সের জন্য মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেন হাকিম জিয়েশ ও আশরাফ হাকিমি। দুজনই ডান প্রান্ত দিয়ে হুট করে আক্রমণে যেতে দারুণ পারদর্শী।
আরও পড়ুন: গ্যালারিতে বসে মেসিদের গোল উপভোগ করলেন রোনালদিনহো
দলের মুখোমুখি লড়াইয়েও এগিয়ে আছে ফ্রান্স। সবশেষ সাক্ষাৎ হয়েছে সেই ১৫ বছর আগে ২০০৭ সালে। প্যারিসের ওই প্রীতি ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়েছিল। বিশ্বকাপে আজ রাতেই প্রথম দেখা হচ্ছে তাদের। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত দুই দল সাতবার মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে ফ্রান্সের জয় তিনটিতে। বাকি চার ম্যাচ ড্র হয়। অর্থাৎ একবারও ফরাসিদের হারাতে পারেনি মরক্কো। দুদলের প্রথম অফিসিয়াল দেখা ১৯৮৮ সালে।
ওই ম্যাচে ২-১ গোলে জিতেছিল ফরাসিরা। তবে এই ম্যাচের আগে আরও দুইবার আন-অফিসিয়াল ম্যাচ খেলেছে দুদল। দুটি ম্যাচই থাকে অমীমাংসিত। মরক্কোর বিরুদ্ধে অপরাজিত থাকার ধারাবাহিকতা বিশ্বকাপেও ধরে রাখতে চায় কোচ দিদিয়ের দেশমের দল। ১৯৯৮ সালে ব্রাজিলের পর প্রথম চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে সেমিফাইনালে খেলতে যাচ্ছে ফ্রান্স। ২০০২ সালে ব্রাজিলের পর প্রথম দল হিসেবে টানা দুই আসরে ফাইনালে খেলার হাতছানি তাদের সামনে।
১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালের ব্রাজিলের পর টানা দ্বিতীয় শিরোপার লক্ষ্যে দারুণভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সেমিতে জায়গা করে নেওয়া ফ্রান্স। ফ্রান্সের সাম্প্রতিক বিশ্বকাপ রেকর্ডও অত্যন্ত মজবুত। শেষ ছয়টিতে তারা দুইবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আরও একটি ফাইনালে অপেক্ষায়।
মরক্কোও পিছিয়ে নেই একেবারেই। এখন পর্যন্ত মরক্কোর জালে কোনও প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় বল পাঠাতে পারেনি, যেই একটি গোল মরক্কোর নামের বিপরীতে আছে সেটাও এসেছিল নিজেদের পা থেকে।