০৭ ডিসেম্বর ২০২২, ২০:০৯

শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে ভারতকে ৫ রানে হারাল বাংলাদেশ

  © সংগৃহীত

মিরপুর শের-ই বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সফরকারী ভারতকে ৫ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস এবং বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। 

ভারতকে নাগালে পেয়েও প্রথম ওয়ানডেতে হারতে বসেছিল বাংলাদেশ। মেহেদি মিরাজের দৃঢ়তায় ওই ম্যাচে ১ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ। এবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সহজ ম্যাচ কঠিন করে জিতল বাংলাদেশ।

হাতে থাকা ম্যাচ ৪৯তম ওভারে দুই ক্যাচ ফেলে হারতে বসেছিল বাংলাদেশ। মাহমুদুল্লাহ দিয়েছিলেন ২০ রান। শেষ ওভারে ভারতের দরকার ছিল ২০ রান। শেষ বলে ছয় রান। মুস্তাফিজ দলকে ৫ রানে জয় এনে দিয়েছেন। ফলে এক ম্যাচ আগেই সিরিজ নিশ্চিত হয়ে গেল প্রথমবার দলকে নেতৃত্ব দেওয়া লিটন দাসের দলের।  

টস জিতে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে আগের ম্যাচের উদ্বোধনী জুটিতে বদল আনে বাংলাদেশ। লিটন দাসের সঙ্গী হন এনামুল হক বিজয়। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল আছেন ছন্দে। ফ্লিক করেছিলেন, খেলেছিলেন দৃষ্টনন্দন কাভার ড্রাইভও। কিন্তু ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে।  

মোহাম্মদ সিরাজের প্রথম দুই বলে বাউন্ডারি হাঁকান তিনি। চতুর্থ বলে স্লিপে বিজয়ের ক্যাচ ছাড়েন রোহিত শর্মা। হাতে চোট নিয়ে মাঠও ছাড়তে হয় তাকে। পঞ্চম বল অফ সাইড থেকে কিছুটা সুইং করে প্যাডে লাগে বিজয়ের। সিরাজের এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিলেও বাঁচতে পারেননি বিজয়। ৯ বলে ১১ রান করে সাজঘরে ফেরত যান তিনি।  

এরপর নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে এগোচ্ছিলেন লিটন দাস। কিন্তু পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগেই সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে।
দশম ওভারে সিরাজের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে লাইন মিস করেন তিনি। বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরত যেতে হয় বাংলাদেশ অধিনায়ককে। ২৩ বলে কেবল ৭ রান করেন লিটন।

নাজমুল হোসেন শান্ত পজিশন বদলেও বড় রান পাননি। ৩ চারে ৩৫ বলে ২১ রান করেন তিনি। উমরান মালিকের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন শান্ত। সাকিব ফিরে যান ওয়াশিংটন সুন্দরের ওভারে। স্লগ সুইপ করতে গিয়ে টপ এজ হয় তার। স্লিপে দাঁড়ানো শেখর ধাওয়ান ক্যাচ ধরেন। ১ চারে ২০ বলে ৮ রান করেন তিনি।  

আফিফ হোসেন ও মুশফিকুর রহিমও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। ২ চারে ২৪ বলে ১২ রান করে শুরুতে মুশফিক সাজঘরে ফেরত যান ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে ধাওয়ানের হাতে ক্যাচ দিয়ে। নিজের মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে একই বোলারের ওভারে বোল্ড হয়ে যান আফিফ।

হুট করে ১৭ রানে তিন উইকেট হারিয়ে বিপদেই পড়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর দলের হাল ধরেন আগের ম্যাচে নায়ক হয়ে ম্যাচ জেতানো মেহেদী হাসান মিরাজ। দারুণ সব শটের সঙ্গে তিনি খেলছিলেন দায়িত্ব নিয়েও। তার সঙ্গে এই ইনিংসের সবচেয়ে বড় হাইলাইট মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের রানে ফেরা।  

ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনেও তার জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বেশ কয়েকবার। এখনও দলে থাকার মতো সক্ষমতা আছে কি না, কথা উঠেছিল এ নিয়েও। সবকিছুর প্রমাণ যেন মাঠেই দিতে চাইলেন রিয়াদ। মিরাজের সঙ্গে তার ১৪৭ রানের জুটি ভাঙে ৪৭তম ওভারে এসে।  

উমরান মালিকের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৭ চারে ৯৬ বলে ৭৭ রান করেন রিয়াদ। তিনি সাজঘরে ফেরার পরও দলকে টেনে নেন মিরাজ। উইকেটের সামনে, পেছনে; বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারিতে পেয়ে যান শতকের দেখা। নিজের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি হাঁকানোর পথে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২ হাজার রান ও দুইশ উইকেটের মাইলফলকও ছুঁয়ে ফেলেন এই অলরাউন্ডার।  

মিরাজের অসাধারণ ইনিংসটি শেষ পর্যন্ত থেকেছে অপরাজিতই। ৮ চার ও ৪ ছক্কার ইনিংসে ৮৩ বলে ১০০ রান করেন মিরাজ। রোমাঞ্চকর অপেক্ষা শেষে ইনিংসের শেষ বলে গিয়ে পূর্ণ করেন শতক। শেষ পাঁচ ওভারে দলের রান হয় ৬৮। বাংলাদেশ পায় ২৭১ রানের সংগ্রহ। ওয়াশিংটন সুন্দর তিন ও উমরান মালিক- মোহাম্মদ সিরাজ নেন দুই উইকেট করে।

জবাব দিতে নামা ভারতের হয়ে ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পাওয়া রোহিত শর্মার বদলে এদিন ইনিংস উদ্বোধনে আসেন লোকেশ রাহুল ও বিরাট কোহলি। প্রথম বলেই চার হাঁকান কোহলি। দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে এসে তাকে সাজঘরে ফেরত পাঠান এবাদত হোসেন।  

পুল করতে গিয়ে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হয়ে যান কোহলি। আউট করেই ছুটতে শুরু করেন এবাদত। দৌড়ে যান ড্রেসিং রুমের কাছে। স্যালুট জানান ড্রেসিং রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পেস বোলিং কোচ গুরু অ্যানাল্ড ডোনাল্ডকে। ৬ বলে ১ চারে ৫ রান করেন কোহলি।

পরের ওভারে বাংলাদেশ আরও এক উইকেট নেয়। এবার মোস্তাফিজ ফেরান শেখার ধাওয়ানকে। পয়েন্টে দাঁড়ানো মিরাজের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। পরে লোকেশ রাহুল ও ওয়াশিংটন সুন্দর ফিরলে ৬৫ রানেই চার উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত।  

সেখান থেকে দলকে ঘুরে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন শ্রেয়াস আয়ার ও অক্ষর প্যাটেল। দুজনেই পেয়ে যান হাফ সেঞ্চুরির দেখাও। দুজন মিলে গড়েন ১০৭ রানের জুটি। এবারও বাংলাদেশের ভরসার আলো হন মেহেদী হাসান মিরাজ।  

তাকে আকাশে ভাসিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন আয়ার। কিন্তু তিনি মিরাজের বলে ধরা পড়েন ডিপ মিডউইকেটে দাঁড়ানো আফিফ হোসেনের হাতে। দ্বিধাদ্বন্দ্ব বলে ঠিকঠাক ক্যাচটা নেন আফিফ। ১০২ বলে ৮২ রান করেন আয়ার।  

খানিক বাদেই সাজঘরে ফেরত যান অক্ষর প্যাটেলও, এবার সেই এবাদত বোলিংয়ে এসে নেন উইকেট। ৫৬ বলে ৫৬ রান করা অক্ষর ক্যাচ দেন সাকিব আল হাসানের হাতে। চোট পাওয়া রোহিত শর্মা ব্যাটিংয়ে নামেন ৯ নম্বর ব্যাটার হিসেবে। এবাদত হোসেন ৪৯তম ওভারে ক্যাচ ফেলে দেন।  

এরপর টানা দুই ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ জমিয়ে ফেলেন রোহিত। ৩ চার ও ৫ ছক্কায় ২৮ বলে ৫১ রান করলেও দলকে জেতাতে পারেননি ভারতীয় অধিনায়ক। তবে ম্যাচ নিয়ে যান শেষ বল অবধি।