৩০ নভেম্বর ২০২২, ২১:২৯

আজ রাতেই বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ খেলছেন মেসি?

লিওনেল মেসি  © সংগৃহীত

সর্বকালের সেরা ফুটবলার কে? মেসির আবির্ভাবের পূর্বে এর উত্তরে পাওয়া যেত দুজনের নাম। সমর্থকদের মধ্যে একদলের দাবি ছিল সর্বকালের সেরা আর্জেন্টাইন যাদুকরম্যারাডোনা। আরেকদল সর্বকালের সেরা হিসাবে এগিয়ে রাখতেন ব্রাজিল ফুটবলের প্রাণ পুরুষ পেলেকে। পেলে ও ম্যারাডোনা উভয়ই তাদের সময়ের সেরা খেলোয়াড়। দুজনই একক নৈপুন্যে দেশকে উপহার দিয়েছেন বিশ্বকাপের শিরোপা।

কিন্তু, কয়েকবছর আগে থেকে সর্বকালের সেরা ইস্যুতে যুক্ত হয়েছে আরও দুটি নাম। আর্জেন্টিনার ক্ষুদে যাদুকর খ্যাত লিওনেল মেসি  ও পর্তুগালের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় ক্রিশ্চিয়ানো রোনালডো প্রায় দেড় যুগ ধরে শাসন করছেন ফুটবল সম্রাজ্য। একসঙ্গে এমন দুই তারকার লড়াই আগের প্রজন্ম হয়তো দেখেনি কখনও।মেসি ও রোনালডো গোল সংখ্যায় অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছেন পেলে-ম্যারাডোনাকে।

এই মূহুর্তে আন্তর্জাতিক গোল সংখ্যায় অতীতের সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন সিআর সেভেন খ্যাত পর্তুগাল সুপার স্টার। ৫ বার ব্যালন ডি অর জেতা রোনালডো ক্লাব ফুটবলেও সর্বোচ্চ গোলের মালিক। এবার কাতার বিশ্বকাপসহ মোট ৫ টি বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে প্রত্যেকটিতে গোল করার অদ্বিতীয় রেকর্ড গড়লেও বিশ্বকাপের ট্রফি ছুতে পারেননি সর্বকালের সেরা ফুটবলারের দাবিদার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালডো। বয়সটা চল্লিশের কোটায়। হয়তো শেষবারের মতো বিশ্বকাপ খেলছেন বিশ্বকাপ জয়ের নেশায়। এখনও শিরোপা জয়ের দৌড়ে ভালোই এগিয়ে আছে তার দল।

গোল সংখ্যায় ঠিক যেন রোনালডোর ঘাড়ে নিঃশ্বসাস ফেলছেন আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ ৯৩ গোল করা লিওনেল মেসি। ক্লাব ফুটবলেরি গত দেড় যুগে সবচেয়ে সফল খেলোয়াড় মেসি। বিশ্বের একমাত্র খেলোয়াড় হিসাবে জিতেছেন ৭ টি ব্যালন ডিঅর। ২০১৪ বিশ্বকাপে দলকে বিশ্বকাপের ফাইনালে তুললেও শিরোপার স্বাদ অপূর্ণই থেকেছে কোটি ভক্তের প্রিয় ফুটবলার মেসির। ক্লাব ফুটবলের রাজার হাতে ছিল না কোনো বৈশ্বিক ট্রফি। এই সময়ের মধ্যে দলকে একাধিকবার কোপার ফাইনালে তুললেও দুঃভাগ্য ছাড়েনি তাকে। সর্বশেষ ২০২১ সালে ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় আন্তর্জাতিক শিরোপা জয় করেন মেসি। তার নেতৃত্বে ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপার শিরোপা পুনরুদ্ধার করে আর্জেন্টিনা।

আরও পড়ুন: রাতে মুখোমুখি আর্জেন্টিনা-পোল্যান্ড, মেসিকে নিয়ে আক্ষেপ ঘুচবে লেভানডফস্কির

লিওনেল মেসি এবার বিশ্বকাপ শুরু করেছিলেন ফুরফুরে মেজাজে। টানা ৩৬ ম্যাচে অপরাজিত দল তার। সেই সঙ্গে কোপা জয় এবং ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে হারানোর টাটকা স্মৃতি। কাতার বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে প্রতিপক্ষ তুলনামূল দূর্বল। সবমিলিয়ে আর্জেন্টিনা এবারের বিশ্বকাপে উড়ন্ত সূচনা করবে এই প্রত্যাশা ছিল ভক্ত-সমর্থকদের।

কিন্তু প্রথম ম্যাচে যেন সেই পুরনো দুঃর্ভাগ্য পেয়ে বসল আর্জেন্টিনাকে। দারুণ খেলেও হারতে হলো সৌদি আরবের কাছে ২-১ গোলের ব্যবধানে। সেই ম্যাচেও গোল পেয়েছিলেন মেসি। প্রথম ম্যাচে হারার পর গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায়ের আশঙ্কা দেখা দেয় আর্জেন্টিনার।

তবে দ্বিতীয় ম্যাচে মেকিসোকে হারিয়ে লড়াইয়ে টিকে থাকে লিওনেল স্কোলেনির দল। এ ম্যাচেও গোল করেন ম্যাচে। এতে বেশ কয়েকটি নতুন রেকর্ড হয়ে যায় তার। বিশ্বকাপের শেষ চার ম্যাচের প্রত্যেকটিতে গোল পেলেন মেসি। এদিকে আন্তর্জাতিক ফুটবলে একাধারে ৬ ম্যাচেও গোল করার রেকর্ড হল। যদিও ২০১১ সালেও একই রেকর্ড গড়েছিলেন মেসি। আর্জেন্টিনার হয়ে এর আগে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোল ছিল ম্যারাডোনার ৮ টি। মেক্সিকোর বিরুদ্ধে এক গোল করে ম্যারাডোনার রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন মেসি। আজ গোল পেলেই একাধারে বিশ্বকাপের ৫ ম্যাচে, পরপর আন্তর্জাতিক ৭ ম্যাচে গোল, এবং আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোল করার বিরল রেকর্ড হবে তার।

কিন্তু, এমন পরিসংখ্যানের সামনে দাড়িয়েও এক অজানা আশঙ্কায় মেসি ভক্তরা। আজকের ম্যাচ জিততেই হবে মেসিদের। ড্র হলেও বাজতে পারে বিদায়ের ঘন্টা। তখন তাকিয়ে থাকতে হবে সৌদি আরব-মেক্সিকোর ম্যাচের দিকে। আর কোনোভাবে পোল্যান্ড জিতে গেলে বাদ পড়বে আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপ ছোয়ার স্বপ্ন তখন অপূর্ণই থাকবে বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা প্রতিভা লিওনেল মেসির।  আজ রাত একটায় জানা যাবে কী আছে মেসির ভাগ্যে। সমর্থকরা খুব করে চাইবে আজকের ম্যাচে আর্জেন্টিনা জয়লাভ করুক। মেসির পা থেকে আসুক একাধিক গোল। আরও সব বিরল কীর্তি গড়ুক আর্জেন্টিনার প্রাণ ভোমড়া। মেসির অতৃপ্তি সে তো বিশ্বকাপের জন্য, ফুটবলের জন্যই অপূর্ণতা।