বাংলাদেশে ফুটবল উন্মাদনা তৈরির অন্যতম কারিগর ম্যারাডোনার বিদায়ের দু’বছর
বাংলাদেশীরা সারা বছর ত্রিকেটে আগ্রহী হলেও এই লাল-সবুজের দেশে ফুটবল উন্মাদনা শুরু হয় ফুটবল বিশ্বকাপ এলেই। আর ফুটবল নামটি মুখে আসতেই যে নামটি সর্বপ্রথম মস্তিষ্কে হানা দেয় তা হচ্ছে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ডিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনার।
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ পুরো বিশ্বের কাছেই ফুটবল শব্দটা কানে এলে স্মৃতির মানস পটে প্রথম ভেসে ওঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করা ম্যারাডোনার সেই গোল। ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপে মাত্র ১১ সেকেন্ডের ঝড়ে ঠিক ১১ টাচে তিন জন ইংলিশ ফুটবলারকে বোকা বানিয়ে শতাব্দীর সেরা গোলটি করেছিলেন ম্যারাডোনা।
আজ শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনার চলে যাওয়ার দুইবছর। ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৬০ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন এ ফুটবল জাদুকর। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বুয়েনোস আইরেসের হার্দিন বেসা ভিস্তায় ভক্তদের ফুলের ভালোবাসায় ছেয়ে গেছে তার সৌধ।
২৫ নভেম্বর দিনটি যেন আর্জেন্টিনীয়দের জন্য এক অলিখিত শোক-দিবস। সর্বত্রই দেখা যায় কান্নায় ভেঙে পড়া তার কোটি কোটি ভক্তদের। তবে ম্যারাডোনার আর নেই এটি বিশ্বাস করেন না আর্জেন্টিনীয়রা। তারা মনে করেন, ফুটবলের রাজপুত্র নিশ্চয়ই বিশ্বকাপে লিয়োনেল মেসিদের সাফল্য কামনায় প্রার্থনা করছেন।
মাত্র ৮ বছর বয়সে ক্লাব পর্যায়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন ম্যারাডোনা। ১৯৭৫ সালে যোগ দেন আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স ক্লাবে। টানা ৬ বছর এই ক্লাবের হয়ে খেলেছেন তিনি। ১৯৭৬ সালের ২০শে অক্টোবর তারিখে, তার ১৬তম জন্মদিনের মাত্র ১০ দিন পূর্বে, ম্যারাডোনা আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্সের হয়ে তায়েরাস দে কর্দোবার বিরুদ্ধে ম্যাচে অভিষেক করেন। এর মাঝে ১৯৭৭-৭৯ সাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনা আন্ডার টুয়েন্টি দলের হয়ে জাতীয় পর্যায়ে খেলেছেন তিনি।
১৯৮৪ সালে ২৪ বছর বয়সের ম্যারাডোনা যোগ দেন দক্ষিণ ইতালির সাদামাটা দল নাপোলিতে। ক্লাব ফুটবলের উজ্জ্বল নক্ষত্র ম্যারাডোনা, তার একক নৈপুণ্যে অখ্যাত নাপোলি ঘরে তুলেন ইউরোপ দ্বিতীয় সেরা ট্রফি ইউরোপা লিগ এবং সেই সঙ্গে দুই দুইবার জয় করেন ইতালীয় 'সিরি আ' ট্রফিও। জাতীয় দলের হয়ে ফিফা বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার চারটি আসরে অংশ নেন তিনি। ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার এই খেলোয়াড়ের নেতৃত্বেই ১৯৮৬ সালে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ পায় আর্জেন্টিনা।
২০০৮ সালের নভেম্বরে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পান ডিয়াগো। ২০১০ বিশ্বকাপের পর ১৮ মাসের চুক্তি শেষ হওয়ায় দায়িত্ব ছাড়েন তিনি।
তবে এত শর্ত ভালো রেকর্ডের মধ্যেও ম্যারাডোনাকে ক্রীড়া জগতের সবচেয়ে বিতর্কিত ব্যক্তিবর্গের অন্যতম হিসেবে মনে করা হয়। ১৯৯১ সালে ইতালিতে ড্রাগ টেস্টে কোকেইন পরীক্ষায় ইতিবাচক ফল পাওয়ায় ১৫ মাসের জন্য ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ হন তিনি। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ইফিড্রিন টেস্টে আবারও ইতিবাচক ফলাফলের জন্য প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেওয়া হয় তাকে।
এমনকি বিতর্ক রয়েছে তার মৃত্যু নিয়েও। বিশ্ব ফুটবলের এই কিংবদন্তির মৃত্যুর পরও নানা প্রশ্ন ও বিতর্ক জন্ম দিয়েছে। সর্বশেষ তথ্য হৃৎপিণ্ড ছাড়াই তাকে কবর দেওয়া হয়েছিল।
চলছে কাতার বিশ্বকাপ। ম্যারাডোনাকে ছাড়া ফুটবল বিশ্বের এটি প্রথম বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের আমেজে হয়তো অনেকেই ভুলে যাবে ম্যারাডোনার চলে যাওয়ার দিনটিকে। তবে আর্জেন্টাইন ফুটবলারদের কাছে দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আজকের এই দিনে আর্জেন্টিনা দলের জন্য না থেকেও আছেন ম্যারাডোনা।