মেসি যখন পৃথিবীর আলো দেখেনি, তখন বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা
সেই ১৯৮৬ সালে শেষ বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা। এরপর কেটে গেছে বহু বছর। লিওনেল মেসি যখন এলেন, তখন থেকে আবার শুরু হলো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখা। ২০১৪ বিশ্বকাপে তো খুব কাছে গিয়েও হাতছাড়া হলো শিরোপা। তবে মেসির গল্পটা এখনো শেষ হয়নি।
১৯৮৭ সালের ২৪ জুন আর্জেন্টিনার রোসারিও শহরে হয়েছিল মেসির জন্ম। তার বাবা জর্জে মেসি ছিলেন একজন সাধারণ ফ্যাক্টরির কর্মী ও মাতা সেলিয়া মারিয়া কাচ্চিতিন্ন সাধারণ গৃহিনী। মেসির রয়েছে দুই বড়ো ভাই মাতিয়াস মেসি ও রদ্রিগেস মেসি এবং এক বোন মারিয়া সোল।
মেসির পরিবারে খুব বেশি আর্থিক সচ্ছলতা না থাকলেও তার পিতা চাইতেন তার সন্তানদের জীবন উজ্জ্বল হউক তার জন্য তিনি সবরকম কষ্টের সামনে করেন ও মেসি ও তার ভাইদের ফুটবলের প্রতি উৎসাহিত করতেন। ছোটবেলা থেকেই মেসি তার ভাইদের সাথে ফুটবল খেলতে মাঠে যেতেন।
তবে মেসির দাদি চাইতেন মেসি বড় ফুটবলার হয়ে উঠুক। তার উৎসাহেই মেসির বাবা তাকে ফুটবল খেলার সরঞ্জাম কিনে দেয়। আর মাত্র চার বছর বয়সে মেসিকে ফুটবল ট্রেনিং ক্লাবে ভর্তি করে দেন।
১৯৮৬ সালে মেক্সিকোতে বসেছিল ফুটবল বিশ্বকাপ। মেসি তখন পৃথিবীর আলো দেখেনি। এই আসরে আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করেছিলেন ম্যারাডোনা। তার জাদুকরী পারফরম্যান্সে সেই বিশ্বকাপে যা দেখিয়েছেন বিশ্বকে, সেটা বিস্ময়কর বললে কমই বলা হবে। তখন বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তুলেছিল আর্জেন্টিনা। একক কৃতিত্ব আর নৈপুণ্য দিয়ে একটি দেশকে কেউ বিশ্বকাপ জেতাতে পারেন, সেটা দেখালেন তিনি।
এতো গেল বিংশ শতাব্দী ও ম্যারাডোনার যুগ। বর্তমানে চলছে একবিংশ শতাব্দীর ফুটবলের কথা। এই শতাব্দীতে ফুটবলের কথা বললে লিওনেল মেসির নামটি আসবে বারবার ফিরে। মেসিকে এই সময়ের সেরা এবং সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার হিসেবে গণ্য করে থাকেন।
লিওনেল মেসি রেকর্ড পাঁচবার ব্যালন ডি অর জয় করেছেন, যার মধ্যে চারটি জিতেছেন টানা চার বছরে। পাশাপাশি রেকর্ড পাঁচবার ইউরোপীয় গোল্ডেন শু-ও জিতেছেন।
আর্জেন্টিনার ইতিহাসের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। দীর্ঘ ২৮ বছরের খরা কাটিয়ে দেশকে কোপা আমেরিকার ট্রফি এনে দিলেও আক্ষেপ রয়ে গেছে ৩৬ বছর আগে শেষবার স্বাদ নেয়া বিশ্বকাপ ট্রফির। ২০১৪ সালে স্বপ্নের অতি কাছে গেলেও শেষ পর্যন্ত ছোঁয়া হয়নি ৬.১৭৫ কেজি ওজনের সোনার ট্রফিটি। এরপর রাশিয়া বিশ্বকাপে নিজেদের ঠিকমতো মেলে ধরতে না পারলেও কাতার বিশ্বকাপে আলবিসেলেস্তেরা স্বপ্ন দেখছেন মেসির হাত ধরে তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের। ফুটবলের সাবেক তারকাদেরও অনেকে মনে করেন, এবারের বিশ্বকাপের বড় দাবিদার লিওনেল মেসি ও তার দল আর্জেন্টিনা।
ফুটবল ক্যারিয়ারে মেসির প্রাপ্তি ও সাফল্যের শেষ নেই। অপ্রাপ্তি বলতে শুধু নিজ দেশ আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ শিরোপা জিততে না পারা। একইসঙ্গে দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে শিরোপা বঞ্চিত দেশটি।
ফের দরজায় কড়া নাড়ছে আরেকটি বিশ্বকাপ। এই বিশ্বকাপের আগে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন ৩৫ বছর বয়সি তারকা মেসি। পিএসজির পাশাপাশি আর্জেন্টিনার জার্সিতেও একের পর এক অনবদ্য পারফরম্যান্স করছেন তিনি। জাতীয় দলের হয়ে শেষ তিন ম্যাচে করেছেন ৯ গোল। সাতবারের ব্যালন ডি অর জয়ীর ট্রফি ক্যাবিনেটে কার্যত সমস্ত ট্রফিই রয়েছে। তাই মেসি ভক্তদের আশা দেশের হয়ে শেষ বিশ্বকাপে দেশের হয়ে ট্রফিটা জিতুন এই মহাতারকা। কয়েকমাস আগে ইউরো চ্যাম্পিয়ন দল ইতালিকে হারিয়ে ফিনালিসমাও জিতেছিল মেসির নেতৃত্বাধীন আর্জেন্টিনা।
আরও পড়ুন: আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ দল ঘোষণা
কাতার বিশ্বকাপে ফেভারিট দলগুলির একটি আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দেও আছে দলটি। লিওনেল স্কালোনির কোচিংয়ে টানা ৩৫ ম্যাচ অপরাজিত আছে তারা। গত বছর কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিলকে তাদের মাঠেই হারিয়ে ঘুচে যায় তাদের ২৮ বছরের শিরোপা খরা। পরে ইউরোর চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে হারিয়ে জিতে নেয় ফিনালিস্সিমা ট্রফিও।
আগামী ২০ নভেম্বরে পর্দা উঠছে কাতার বিশ্বকাপের। অন্যান্য আসরের মতো এবারের আসরেও হট ফেভারিট আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে তাদের চূড়ান্ত স্কোয়ার্ড। ২২ নভেম্বর গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের মুখোমুখি হবে মেসিরা।
আর্জেন্টিনার ম্যাচ সূচি:
প্রথম ম্যাচ : আর্জেন্টিনা বনাম সৌদি আরব (২২ নভেম্বর, বিকাল ৪টায়)
দ্বিতীয় ম্যাচ : আর্জেন্টিনা বনাম মেক্সিকো (২৬ নভেম্বর, রাত ১টায়)
শেষ ম্যাচ : আর্জেন্টিনা বনাম পোল্যান্ড (৩০ নভেম্বর, রাত ১টায়)