ইনজুরির পর বাড়ি পাঠিয়ে দেয় বাফুফে, চথুইমা এখন জুতার কারখানার শ্রমিক
গত মাসে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী সদস্য রুপনা চাকমা, ঋতুপর্ণা চাকমা, মনিকা চাকমাদের সতীর্থ ছিলেন রাঙামাটির চথুইমা মারমা। একসাথে মগাছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও পরে জাতীয় পর্যায়ে খেলেছেন। তারা সবাই এখন খেলছেন কিন্তু তিনি দৌড়াতেও পারছেন না।
২০ বছর বয়সী চথুইমার বর্তমান পরিচয় তিনি চট্রগ্রামের কালুরঘাটে একটি জুতা তৈরি কারখানার শ্রমিক। পায়ের ইনজুরির পর শেষ হয়ে যায় ফুটবলের স্বপ্ন। অথচ ২০১৪ সালেও তার পরিচয় ছিল বয়সভিত্তিক পর্যায়ে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের একজন চৌকস স্ট্রাইকার।
চথুইমা ২০১১ সাল থেকে ফুটবল খেলা শুরু করেন। ২০১২ সালে তিনি বঙ্গমাতা গোল্ড কাপ টুর্নামেন্টে গোল্ডেন বুট জিতেছিলেন। ২০১৪ সালে চথুইমা এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বের দলে ছিলেন। একই বছরের শেষদিকে অনুশীলনের সময় তার বাম পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়। এরপর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) তাকে সব ধরনের ফুটবল কার্যক্রম থেকে বাদ দেয়।
চথুইমা গণমাধ্যমকে বলেন, '২০১৪ সালের অক্টোবরে যখন আমি ইনজুরিতে পড়ি, তখন বাফুফে আমাকে দুই বা তিন হাজার টাকা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে বলেছিল এই টাকা দিয়ে যেন ভালো চিকিৎসা করাই কিন্তু সেই সময় চিকিৎসার জন্য আমার লক্ষ লক্ষ টাকার প্রয়োজন ছিল। টাকার অভাবে দীর্ঘ দিন চিকিৎসা করতে পারিনি।'
তিনি আরও বলেন, '২০১৬ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও কিছু সদয় ব্যক্তির কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য পেয়ে পায়ে অস্ত্রোপচার করাই। তবে এখনও আমার পায়ের ইনজুরি সারেনি। এখনও আমি ভালো করে হাঁটতে পারি না। পাহাড়ে উঠতে পারি না। আমার ইনজুরির পর বাফুফের কেউ এক মুহূর্তের জন্যও আমার খোঁজ রাখেনি।'
চথুইমা জানান, '২০১৮ সালে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে একটি জুতার কারখানায় কাজ পাই। প্রথমে অনেক ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করতে হতো। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ যখন জানল যে আমি একজন ফুটবলার ছিলাম, তখন আমার বসার ব্যবস্থা করেন তারা।'
চথুইমাকে নিয়ে সাফ জয়ী বাংলাদেশ নারী জাতীয় দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, 'চথুইমা একজন সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় ছিল। সে অনূর্ধ্ব-১৪ দলে বাংলাদেশের হয়ে খেলেছে। অনূর্ধ্ব-১৬ এএফসি নারী চ্যাম্পিয়ন বাছাইপর্বের দলেও সে ছিল।'
তিনি আরও বলেন, 'চথুইমার ইনজুরি ছিল বাংলাদেশে নারী ফুটবলের শুরুর সময়। তখন আমাদের সেই সুযোগ ছিল না। আমরা সাম্প্রতিক সময়ে ১৬ লাখ টাকা খরচ করে চার জন খেলোয়াড়ের লিগামেন্ট সার্জারি করিয়েছি।'