স্বপ্ন সড়কেই শেষ দুই এসএসসি পরীক্ষার্থীর
সব সময় একসঙ্গেই করত যেকোনো কাজ। পড়ালেখা থেকে শুরু করে অ্যাসাইনম্যান্ট জমা দেওয়া সবকিছুই। তাই জীবনের শেষমুহূর্তেও ছিলেন একসঙ্গে। বলেছিলাম চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির হাইদচকিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী মিশু আখতার আর নিশা মনির কথা।
বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপজেলার পেলাগাজী দিঘি মোড়ের পশ্চিম পার্শ্বে হাইওয়ে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে একটি ধান ভর্তি জিপ রাস্তায় উল্টে যায়। এতে ঘটনাস্থলে এই দুই শিক্ষার্থী মারা যায়। তাদের মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এমেছে শোকের ছায়া।
মিশু আখতারের স্বপ্ন ছিল এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে সরকারি চাকরি করবে। স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়াবে। স্কুলে যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া দিলে দুই বান্ধবী মিলে হেঁটেই যেত। সেই টাকা দিয়ে বই খাতা কিনত তারা। বাবারও স্বপ্ন ছিল মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করা।
কিন্তু মেয়ের এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না বাবা আবুল বশর। মেয়েকে হারিয়ে হতবাক বাবা কখনো বিলাপ করছেন আবার কখনো অজ্ঞান হচ্ছেন। জ্ঞান ফিরেই খুঁজছেন মেয়েকে। আর কান্নাজনিত কণ্ঠে বলছিলেন, আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দাও। আমি সার্জেন্টকে টাকা দেব। আমার মেয়ের কী দোষ? আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো৷
হাইদচকিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ এবিএম গোলাম নূর বলেন, সরকার ঘোষিত ১৭ সাপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়েছিল শিক্ষার্থীদের। দশমতম অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়ে মিশু আর নিশা একাদশতম অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রতিবেশী মো. মঈন উদ্দীন বলেন, ছোটবেলা থেকেই তারা ভালো বন্ধু ছিল। পড়ালেখা থেকে শুরু করে সবকিছুই তারা একসঙ্গে করত। তাদের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহদাৎ হোসাইন বলেন, গাড়িচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। পরে স্থানীয়রা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে৷ আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেই।