ঝাড়ু নিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে তাড়া
দুর্নীতির অভিযোগে স্কুলের এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঝাড়ু নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এসময় তার নিরাপত্তার জন্য ডাকতে হয়েছে পুলিশ; তবে পুলিশের উপস্থিতিতেই অনেকে তাকে ঝাড়ু নিয়ে তাড়া করেছেন।
আজ বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) কুষ্টিয়ায় সদর উপজেলার বারখাদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনসার আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির এই অভিযোগ করে এলাকাবাসীসহ জনপ্রতিনিধি মানববন্ধন করেন।
তবে বিদ্যালয়ের ওপর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও অন্য প্রভাবশালীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে এই প্রধান শিক্ষককে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
প্রধান শিক্ষক বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে খবর পান তাকে অপদস্থ করার জন্য বিদ্যালয় গেটে এলাকাবাসীর ব্যানারে একদল মানুষকে জড়ো করা হয়েছে।
“আমি নিরাপত্তার জন্য থানায় ফোন করলে পুলিশ আসে। কিন্তু পুলিশ এসে গাড়িতে করে আমাকে বিদ্যালয়ে নিয়ে গেলেও পুলিশের সামনেই লোকজন আমাকে গণহারে জুতা ও ঝাড়ু দিয়ে মারতে থাকে।”
কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান পাখি ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কিমিটির নির্বাচনের লক্ষ্যে ১০টি নমিনেশন পত্র বিক্রি করেন প্রধান শিক্ষক। ১০ জানুয়ারী ভোট গ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে প্রধান শিক্ষক আনছার আলী লাপাত্তা হয়ে যান। কয়েক দিন পর শুনি প্রধান শিক্ষক গোপনে তার পছন্দের লোক নিয়ে পকেট কমিটি করেছেন। পড়ালেখা না জানা ওই কমিটি অভিভাবকদের স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কারণে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের প্রকাশ ঘটেছে সকালে।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক আনসার আলী। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও মনগড়া। এখানে মূল সসম্যার কেন্দ্রবিন্দু হল বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিকে নিয়ে স্থানীয় দুটি পক্ষের মধ্যে বিবদমান দ্বন্দ্ব।
“বর্তমান যে কমিটি করা হয়েছে তা প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিক চাপে পড়ে গোপনে করতে আমি বাধ্য হয়েছি। এখানে আমার কিছু করার নেই। নিরুপায় হয়ে এই ম্যানেজিং কমিটিকে মেনে নিতে হয়েছে।”
বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি তোজাম্মেল হক। তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
বিদ্যালয়টির একজন শিক্ষক অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ নেতা তোজাম্মেল হক ও তার গ্রুপের সঙ্গে পৌর কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান পাখির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে প্রভাব বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ নিয়ে সেই দ্বন্দ্ব প্রকাশে রূপ নেয়। ওই ঘটনারই বলির পাঁঠা হলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনছার আলী।
পুলিশের উপস্থিতিতে প্রধান শিক্ষককে অপদস্থ করার ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছেন কুষ্টিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নিশিকান্ত সরকার। তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে স্থানীয়রা মানববন্ধন করছে এমন খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে আন্দোলনকারীদের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ভূমিকা নেয়। ঘটনাস্থল থেকে প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ।
“পুলিশের উপস্থিতিতে শিক্ষককে লাঞ্ছনার কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ ধরনের কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত করে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।” এদিকে, এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষক বৃহস্পতিবার মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন।