জেএসসি-জেডিসির প্রভাব এসএসসিতে, বুক ভেঙেছে অনেকের
মহামারী করোনার কারণে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ও নির্বাচিত বিষয়ের পরীক্ষার কারণে এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় রেকর্ডসংখ্যক পরীক্ষার্থী পাস করেছেন। তবে জেএসসি-জেডিসির ফল বিবেচনা করে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিং’ পদ্ধতিতে করা ফলাফল গণনায় বুক ভেঙেছে অনেক শিক্ষার্থীর।
এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের তিনটি করে নির্বাচিত বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে। বাকি আবশ্যিক বিষয়গুলোর মূল্যায়নে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে পরীক্ষার্থীদের জেএসসি-জেডিসির ফলাফল, যেটাকে বলা হচ্ছে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিং। সব মিলিয়েই এবারের পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাবার লাশ রেখে পরীক্ষা দেওয়া সেই সিনথিয়া পেল ৪.৯৪
বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) সাবজেক্টে ম্যাপিংয়ের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, যেগুলো নৈর্বাচনিক বিষয়, সেগুলোর তো পরীক্ষা হয়েছে। যেগুলো আবশ্যিক বিষয়, যেমন ধরুন বাংলা বা ইংরেজিতে সরাসরি জেএসসি-জেডেসিতে যে নম্বরগুলো পেয়েছে, সেগুলো নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেছেন, চতুর্থ বিষয়ের ক্ষেত্রে, যে তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে, সেগুলো ছাড়া চতুর্থ বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ জেএসসি বা জেডিসি পর্যায়ের আবশ্যিক বিষয় থেকে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ফেল করায় রাজশাহী ও কুষ্টিয়ায় দুই ছাত্রীর আত্মহত্যা
মন্ত্রী আরও বলেন, যেমন ধরুন, যার চতুর্থ বিষয় উচ্চতর গণিত ছিল, তারতো জেএসসি-জেডিসিতে উচ্চতর গণিত বলে কিছু ছিল না। সে জেএসসি-জেডিসিতে গণিতে যা পেয়েছে সেই নম্বরটি থেকে আমরা এখানে নম্বর নিয়ে এসেছি। আবার, যে চতুর্থ বিষয় জীববিজ্ঞান, তার জেএসসি-জেডিসির বিজ্ঞানের নম্বরটি সেটাকে আমরা নিয়ে এসেছি। সাবজেক্ট ম্যাপিংটা এভাবে হয়েছে।
সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের এই ধাঁধায় পড়ে অনেক শিক্ষার্থী নির্বাচিত তিন বিষয়ের পরীক্ষায় বেশ ভালো করলেও প্রত্যাশিত জিপিএ-৫ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
অনেক ক্ষেত্রে কৃষি শিক্ষায় জেএসসিতে এ প্লাস পেলেও এসএসসিতে এসে তা হয়ে গেছে এ গ্রেড; কারণ সাবজেক্ট ম্যাপিং পদ্ধতিতে জেএসসির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় এবং কৃষি শিক্ষার ফলের গড়ের ফল হয়েছে এসএসসির কৃষি শিক্ষায়।
আরও পড়ুন: বাবার লাশ রেখে পরীক্ষা দেওয়া সেই সিনথিয়া পেল ৪.৯৪
সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের এই ফল পরিবর্তন করার একমাত্র উপায় মানোন্নয়ন বলেই জানিয়েছেন সিলেট বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুণ চন্দ্র পাল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের কারণে কেউ খারাপ করে থাকলে সেটা পুনঃনিরীক্ষণের কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, যে বিষয়গুলোতে পরীক্ষা হয়েছে, সেগুলো রিভিউ করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। বাকি বিষয়গুলো রিভিউ করা যাবে না। তবে সে বিষয়গুলোর মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ রয়েছে। অন্যদিকে মহামারী পরিস্থিতির কারণে এ বছরের মতো শুধু নির্বাচিত বিষয়ে পরীক্ষা হলে সেই সুযোগও থাকবে না শিক্ষার্থীদের সামনে।
পরীক্ষার দিন অসুস্থতার কারণে জেএসসিতে ভালো ফল পায়নি লক্ষ্মীপুরের সিদরাতুল মুনতাহা এশা, এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল মূল্যায়নে সেই ফল বিবেচনায় নেওয়ায় এবারও অন্য সব বিষয়ে ভালো করেও শুধু গণিতের কারণেই সে এ প্লাস পায়নি। গণিতে ডি গ্রেড পাওয়ায় দুইবছর আগে জিপিএ ৪ দশমিক ২৯ নিয়ে নিম্ন মাধ্যমিক শেষ করেছিল লক্ষ্মীপুরের পৌর শহীদ স্মৃতি একাডেমির এ ছাত্রী। এসএসসিতে যে তিন বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল, তার সব কটিতে পূর্ণ গ্রেড পয়েন্ট পেলেও ওই ফল তাকে পিছিয়ে দিয়েছে।
জেএসসিতে গণিতে ডি গ্রেডের ফেরে এসএসসিতে এসে গণিত ও উচ্চতর গণিতে ডি গ্রেড হয়ে গেছে এশার; বাকি বিষয়ে এ প্লাস পেলেও তার ফল এসেছে জিপিএ ৪ দশমিক ৪৪।
ভালো কলেজে ভর্তির সুযোগ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকা এশার ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক এই সদস্য তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ভাগ্য সহায় হয়নি আমার বোনের। রেজাল্ট হওয়ার পর থেকে অনবরত কান্নাকাটি করছে, আমরা কোনোভাবেই থামাতে পারছি না।
আরও পড়ুন: জিপিএ-৫ ছাড়াও প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায়
ভাগ্য সহায় না হওয়ার কথা উল্লেখ করে এই শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, জেএসসিতে গণিতে তার ফলাফল প্রত্যাশিত মাত্রায় ছিল না। হঠাৎ করে একটা মিসিং হয়ে গিয়েছিল। ওখান একটু পিছিয়ে পড়ার কারণে তাকে এখানেও পিছিয়ে পড়তে হল।
রাজধানীর কুর্মিটোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সৈয়দ সাদমান নবী আগের চেয়ে ভালো জিপিএ নিয়ে মাধ্যমিক শেষ করলেও তার দুঃখ জেএসসির ফলাফল নিয়ে। নির্বাচিত তিন বিষয়ে ভালো পরীক্ষা দিয়ে তার ফলও পেয়েছে সে, তিনটির একটিতে এ প্লাস এবং দুটিতে এ গ্রেড পেয়েছে সে।