এসএসসিতে অটোপাসের দাবি দুর্ভাগ্যজনক বলছে বিশেষজ্ঞরা
বাংলাদেশে সম্প্রতি মাধ্যমিক স্কুলের কিছু শিক্ষার্থী মানববন্ধন করে দাবি তুলেছে যে, উচ্চ মাধ্যমিক বা এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মতো তাদেরও এসএসসি পরীক্ষা না নিয়ে অটোপাস দিতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের এই দাবিটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে।
শিক্ষাবিদ এবং এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য যদি অটোপাসের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তাহলে সেটি হবে দুর্ভাগ্যজনক।
এর আগে করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এবং এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল করে তার পরিবর্তে অটোপাসের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। অন্য শ্রেণীর শিক্ষার্থীদেরও পরীক্ষা ছাড়াই পরবর্তী শ্রেণীতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এর জের ধরে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থীরাও একই দাবি তুলেছেন। এর আগে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, ২০২১ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা কিছুটা পিছিয়ে জুন মাসে, এবং এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা জুলাই-অগাস্ট মাসে নেয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।
অটোপাসের পক্ষে থাকা শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির স্বপক্ষে যুক্তিতে বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে ১১ মাসেরও বেশি সময় স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনা করতে না পারায় পরীক্ষায় ভাল ফল করা সম্ভব না। সিলেবাস কমিয়ে আনা হলেও সেটি পুরোপুরি শেষ করা সম্ভব হবে না- যার কারণে অটোপাসের দাবি তোলেন তারা।
তবে শিক্ষার্থীদের অনেকের ভিন্নমতও রয়েছে। ঢাকার একটি স্কুলের ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী নাইমা রহমান। তিনি জানান, পরীক্ষা বাতিল নয় বরং পরীক্ষা দিতে চান তিনি।
পিএসসি এবং জেএসসির পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে এসএসসি পরীক্ষার ফল দেয়া হলে সেটি ভাল আসবে না বলে জানান তিনি। ওই দুই পরীক্ষায় তিনি ভাল ফল করতে পারেন নি। আর এ কারণেই এসএসসি পরীক্ষায় ভাল ফল করতে করোনার সময় বাসায় থাকলেও পড়াশোনা চালিয়ে নেয়ার কথা জানান নাইমা রহমান।
নাইমা রহমান বলেন, অবশ্যই পরীক্ষা দিতে চাই। আমি এতো কষ্ট করে পড়ছি, এক বছর দুই বছর ধরে, কোচিংয়ে গেছি এতো দূরে, আমার তো কষ্ট হয়েছে। আমি কষ্ট করছি একটা ভাল রেজাল্ট করার জন্য।
এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মেহনাজ শাহরিয়ার আহমেদ। তিনি বলেন, এসএসসি পরীক্ষার জন্য যদি সিলেবাস কমিয়ে দেয়া হয় তাহলে অটোপাস চান না তিনি। তবে সিলেবাস না কমানো হলে অটোপাস চান বলে মত দিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, যদি সিলেবাসটি একেবারেই কমানো না হয়, তাহলে অটোপাস ঠিক আছে। করোনাভাইরাসের কারণে পুরো এক বছর স্কুল বন্ধ থাকার কারণে ক্লাস করতে না পারেননি তারা।
এসএসসি পরীক্ষা বাতিল করা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে সাথে অভিভাবকদের মধ্যেও রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ অটোপাসের পক্ষে মত দিলেও অনেকে আবার এর বিপক্ষে মত দিয়েছেন। এসএসসি পরীক্ষার্থীর মা মরিয়ম আক্তার মনে করেন অটোপাসের তুলনায় পরীক্ষা হলেই ভাল।
তিনি বলেন, পরীক্ষা হলে মেধার মূল্যায়ন হওয়ার একটা সুযোগ থাকে। কিন্তু অটোপাস হলে সেই সুযোগ বাদ হয়ে যায়। সে কারণেই পরীক্ষা চান তিনি।
জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অটোপাস দেয়া হলেও তারা তাদের পুরো দুই বছরের পড়াশোনা এবং পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিল। শুধু পরীক্ষা নেয়াটা সম্ভব হয়নি। তবে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সেটাও হয়নি। যার কারণে ভবিষ্যতে তারা সমস্যায় পড়তে পারেন বলে মত দিচ্ছেন তারা।
এ বিষয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, আমাদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা যদি এখন অটোপাসের পথ খোঁজে, তাহলে সেটা দেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।
তিনি বলেন, যে দেশ থেকে বিদেশিরা পরামর্শ এবং বিশেষজ্ঞ ফি বাবদ প্রতি বছর ৩৫ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যায়, সে দেশে মানুষ থাকার পরও আমরা কাজ করতে পারি না, আমরা দক্ষ না, আর এর মধ্যে যদি অটোপাসের আবর্তে পরি তাহলে আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ হবে।
অধ্যাপক কায়কোবাদ বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে হলে দক্ষতা অর্জন এবং জ্ঞান অর্জন করাটা জরুরী। সেটা না করে যদি শিক্ষার্থীরা অটোপাসের দিকে ঝুঁকে তার মানে হচ্ছে যে তিনি জ্ঞান অর্জনের সাথে যুক্ত নাই।
একই ধরণের মত দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দা আতিকুন নাহার। তিনি বলেন, অটোপাস আসলে একটা বিশেষ পরিস্থিতির ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয়। চলতি বছর কোভিডের কারণে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি বলে তাদের অটোপাস দেয়া হয়েছে। [সূত্র: বিবিসি বাংলা]