২১ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:৩৬

৫২ শিক্ষকের বিপরীতে ৩৭টি পদই খালি

বরগুনা সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়  © টিডিসি ফটো

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) হিসাবেই বরিশাল বিভাগের সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের মধ্যে ২২টিতে গড়ে ৩৮ ভাগ শিক্ষকের পদই খালি রয়েছে। মাত্র ৪টি স্কুলে প্রধান শিক্ষক থাকলেও বাকি ১৮টিই চলছে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক দিয়ে। সব মিলিয়ে বরিশালে মাধ্যমিক স্কুলগুলোয় শিক্ষক সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সেই হিসেবে বরগুনা সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চিত্রও ভিন্ন নয়। সেখানেও শিক্ষক সংকট চরমে।

জানা যায়, বরগুনা সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৫২ শিক্ষকের মধ্যে আছেন মাত্র ১৫ জন। ৩৭টি পদই রয়েছে খালি। অন্য দিকে প্রধান শিক্ষক না থাকায় ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকেই চলছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজহারুল হক জানান, ৫২ জন শিক্ষক পদের বিপরীতে মাত্র ১৫ জন শিক্ষক দুই শিফটে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। শিক্ষক সঙ্কটের কারণে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীকে পাঠদান এক রকম অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তবুও আমাদের প্রচেষ্টা থেমে নেই। আশা করছি খুব দ্রুতই এর সমাধান হবে।

এদিকে, সংকট নিরসনে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে শিক্ষক নিয়োগে সার্কুলার জারির পর ইতোমধ্যেই দুই বছরের বেশি পার হয়েছে। কিন্তু নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি। কিছু দিন আগে মাত্র মৌখিক পরীক্ষা শেষ হল। নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে।

কবে নাগাদ এই নিয়োগপক্রিয়া শেষ হবে, তা চূড়ান্ত নয় আজও। তবে ইতোমধ্যে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষক পদে চাকরিপ্রার্থী ৩৭ ও ৩৮তম বিসিএসে ক্যাডার ও নন ক্যাডার পদে নিয়োগ পেয়ে গেছেন।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।

২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন সাত হাজারের বেশি। এর আগে সর্বশেষ শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল ২০১১ সালে। এরপর থেকে বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে স্কুলগুলোয় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছিল। তবে বিষয়ভিত্তিক পর্যাপ্ত শিক্ষক মিলছিল না।

তাছাড়া বিসিএসের নন-ক্যাডার থেকে যারা শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়ে আসছিলেন, তাদের বেশির ভাগই পরে অন্য চাকরিতে চলে যাচ্ছিলেন। ফলে শিক্ষক সংকট চলছিলই।

বরগুনা সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়েই নয় বরং শিক্ষক সঙ্কটে নাজেহাল অবস্থা বিভাগের আর সব স্কুলে একই ধরনের। কোথাও নেই পর্যাপ্ত শিক্ষও, আবার কোথাও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই জোড়াতালির মাধ্যমে চলছে কাজ।

বরগুনা সরকারি বালক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহমুদ চৌধুরী জানান, তার প্রতিষ্ঠানে ৫১ শিক্ষক পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ২২ জন।

শহীদ আরজুমনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র লিয়ন জানায়, তাদের স্কুলে শিক্ষক সংকট চরম। একেকটি বিষয়ে শিক্ষক থাকার কথা ২/৩ জন, শিক্ষক আছেন মাত্র ১ জন করে। যে কোনো মূল্যে শিক্ষার্থীরা এই শিক্ষক সংকট দূর করার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে।

বরিশাল শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পাপিয়া জেসমিন বলেন, শিক্ষক সংকট রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্মিত ৭ স্কুলেই সহকারী প্রধান শিক্ষক দেয়া হয়নি। যার কারণে কাজকর্মে ব্যাপক বেগ পেতে হচ্ছে। এজন্য ডিজি ও ডিডিকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে।

শিক্ষক সংকটের বিষয়ে মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, ‘ভাইবা পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। এই দুই হাজার নিয়োগ দিলে আমাদের কোঠা পূরণ হয়ে যাবে। শুধু লিখিত পরীক্ষা নয়, মৌখিক ও লিখিত পরীক্ষার সমন্বয়ে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আর এতে সংকট কমে যাবে।’

এ ব্যাপারে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) স্কুলের শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, এখন ১৯৯৯ জন নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আর এই সময়ে আরও কিছু পদ খালি হতে পারে। এসব পদে সরকার জনবল দিতে চাইলে বর্তমান নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকেই দেয়া যাবে। আমরা এই করোনাকালেও চ্যালেঞ্জ নিয়ে এই নিয়োগের কাজটি করেছি; যেন শিক্ষক সংকট লাঘব হয় এবং কর্মসংস্থানের সংখ্যা বাড়ে।