ভর্তি ফি নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২০, ০৮:২৬ PM , আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২০, ০৮:২৬ PM
মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপের ফলে প্রায় ১০ মাস ধরে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। এই সময়ের টিউশন ফি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের মধ্যে সৃষ্ট জটিলতা এখনো কাটেনি। এদিকে আর কয়েকদিন পরেই আসছে নতুন বছর। ফলে ভর্তি ফি এখন অভিভাবকদের নতুন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর বলছে, সুনির্দিষ্টভাবে টিউশন ফি ও ভর্তি ফির ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এ ব্যাপারে অভিভাবকদের আরো সচেতন হতে হবে। প্রয়োজনে অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ পাঠাতে অনুরোধ করেছেন কর্মকর্তারা।
আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অনলাইনে ভর্তির আবেদন গ্রহণ শুরু হচ্ছে। এর সঙ্গে মিল রেখেই বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের ভর্তি ফরম বিতরণ শুরু করবে। রাজধানীর অনেক স্কুলই রয়েছে, যেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্ধারিত ভর্তি ফির চেয়ে কয়েক গুণ বেশি টাকা আদায় করা হয়। এই করোনাকালে ভর্তি ফি এবং এইসব বাড়তি টাকার কী হবে, সেটা নিয়েই উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা।
রাজধানীতে ৩২১টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে নামি-দামি স্কুল রয়েছে ২০ থেকে ২৫টি। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আগ্রহ ওই সব স্কুল ঘিরে। বাকি স্কুলগুলোতে আসন খালি থাকলেও অভিভাবকদের আগ্রহ খুব একটা নেই। প্রতিবারের মতো এবারও ভর্তি ফি’র পাশাপাশি এই সুযোগে নামি-দামি স্কুল কর্তৃপক্ষ আদায় করবে।
মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে পুনর্ভর্তি ফি না নেওয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা জারি করেছি। ভর্তিসংক্রান্ত আমাদের একটি কমিটি রয়েছে। তারা বিষয়টি দেখভাল করছে। তবে এখন পর্যন্ত আমরা এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
চলতি শিক্ষাবর্ষে সেশন ফিসহ ভর্তি হতে সর্বসাকুল্যে মফস্বল এলাকায় ৫০০ টাকা, পৌর (উপজেলা) এলাকায় এক হাজার, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় দুই হাজার, ঢাকা ছাড়া অন্যান্য মহানগর এলাকায় তিন হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর এলাকায় এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার টাকার অতিরিক্ত নিতে পারবে না। আর আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং এমপিও বহির্ভূত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থী ভর্তির সময় মাসিক বেতন, সেশন ও উন্নয়ন ফিসহ বাংলা মাধ্যমে সর্বোচ্চ আট হাজার টাকা এবং ইংরেজি মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা নিতে পারবে। আগামী শিক্ষাবর্ষেও নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য সেটাই রাখা হচ্ছে।
তবে যেসব শিক্ষার্থী একই স্কুলে শুধু পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীত হয়, তাদেরও আগের বছরগুলোতে একই ফি নেওয়া হতো। কিন্তু মাউশি অধিদপ্তর আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য আপাতত পুনর্ভর্তি ফি নিতে নিষেধ করেছে। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ এখনো বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ভর্তি ফির বিষয়টি পরিষ্কার করেনি। ফলে অভিভাবকদের মধ্যে দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে।
করোনার কারণে চলতি শিক্ষাবর্ষের প্রায় পুরো সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও টিউশন ফি নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে টিউশন ফি ছাড়া অন্য কোনো খাতে টাকা নিতে পারবে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। যেমন—পুনর্ভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ফির মতো অনুষঙ্গিক ফি আদায় করতে পারবে না। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো প্রতিষ্ঠান এসব ফি আদায় করে থাকলে তা ফেরত দিতে হবে বা টিউশন ফির সঙ্গে তা সমন্বয় করতে হবে। অন্যদিকে কোনো অভিভাবক চরম আর্থিক সংকটে থাকলে তাঁর সন্তানের টিউশন ফির ব্যাপারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে বিশেষ বিবেচনা করতে হবে।
রাজধানীর মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমি অক্টোবর পর্যন্ত টিউশন ফি পরিশোধ করেছি। এখন অন্যান্য ফি যদি মওকুফ করা হয়, তাহলে আমার সন্তানের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের বেতন না দিয়ে সমন্বয় করলেই চলে। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ তা এখনো করেনি। এ ছাড়া আগামী বছরের ভর্তি ফির কী হবে, সেটাও এখনো স্কুল থেকে জানানো হয়নি।’
করোনাকালে আয় কমেছে অনেক অভিভাবকের। আবার অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীই পথে বসেছেন। ফলে অনেক অভিভাবকই চলতি শিক্ষাবর্ষের টিউশন ফি এখন পর্যন্ত পরিশোধ করতে পারেননি। এমনকি যেসব অভিভাবক এখন পর্যন্ত পুরো টিউশন ফিসহ অন্যান্য ফি পরিশোধ করেছেন, তাঁদের দেওয়া অতিরিক্ত টাকাও সমন্বয় করেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ। ফলে টিউশন ফি নিয়ে জটিলতার নিরসন এখনো হয়নি। মহামারি করোনার কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় ছুটি বাড়িয়ে সর্বশেষ ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।