আদালতকে পাশ কাটিয়ে ২৪৫ ছাত্রী ভর্তি

ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ
ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ  © ফাইল ফটো

আদালতকে পাশ কাটিয়ে শিক্ষাবর্ষের শেষ দিকে এসে শিক্ষার্থী ভর্তি করার অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে ২৪৫ শিক্ষার্থীকে ভর্তি করেছে। তবে এক্ষেত্রে বোর্ডর চিঠিকে নিজেদের পক্ষে প্রমাণ হিসেবে দাঁড় করাচ্ছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা যায়, মামলার পরিপ্রেক্ষিত এবং উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে ২৯ ফেব্রুয়ারি ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটির। তবে বছরের শেষ দিকে এসে গত দুইদিনে প্রায় আড়াইশ’ ছাত্রীর ভর্তি সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এভাবে ৫৯৯ জনকে ভর্তি করাবেন তারা। এছাড়া নবম শ্রেণিতেও শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে বলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের তালিকায় রয়েছে।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফওজিয়া বলেন, আদালতের নির্দেশনা এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এই ভর্তি করা হচ্ছে। ভর্তি করা না হলে বরং আদালত অবমাননা হয়ে যেত। শনিবার ভর্তি শুরু হয়েছে। রোববার বিকাল ৫টা পর্যন্ত অনলাইনে ২৪৫ জন ভর্তি হয়েছে। ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে ভর্তি।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, এই ভর্তি নিয়ে উচ্চ আদালতে দুটি রিট মামলা আছে। প্রথমটির নিষ্পত্তি হয়নি। কিন্তু দ্বিতীয়টির আলোকে প্রতিষ্ঠানটি এই ভর্তি কার্যক্রম চালাচ্ছে। এ ব্যাপারে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চিঠির নির্দেশনা যথাযথ নয় বলেও দাবি করেন তারা।

এই পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানটির এক অভিভাবক রোববার পরিচালনা পর্ষদের (জিবি) সভাপতিকে চিঠি দিয়েছেন। এতে নজরুল ইসলাম নামের ওই অভিভাবক উল্লেখ করেন, ২১ জানুয়ারির করা রিট মামলার পরিপ্রেক্ষিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ আদালতের দোহাই দিয়ে ভর্তির কার্যক্রম বাতিল করে এবং টাকা ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে ৯ মার্চ আরেকটি রিট করা হয়। আদালত রিট মামলা নিষ্পত্তিতে ঢাকা বোর্ডকে নির্দেশ করেন। তাতে ভর্তির কোনো নির্দেশনা দেননি আদালত। প্রথম রিটের কথা গোপন রেখে দ্বিতীয়টির আলোকে শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশনা দেয়া অনৈতিক ও আদালতের নির্দেশনার পরিপন্থী।

তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশনার সঠিক প্রতিফলন না করার বিষয়টি তারা প্রধান বিচার দফতর, অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরেও লিখিতভাবে অবহিত করেছেন।

তবে ছাত্রী ভর্তির বিষয়ে আদালতের কোনো নির্দেশনা ছিলো না উল্লেখ করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছেন, সেটির আলোকেই তারা স্কুল কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠিয়েছেন। ছাত্রী ভর্তির কথা আদালত বলেননি। তারাও স্কুলকে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে বলেননি। পিটিশনারদের আবেদন নিষ্পত্তির কথা বলেছেন তারা।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৮ অক্টোবর ভিকারুননিসার অধ্যক্ষকে ঢাকা বোর্ড থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ‘... আপনার বিদ্যালয়ে ছাত্রী ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ২৪ জানুয়ারিতে দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে ওই ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়নি এবং কোনো কারণ ছাড়াই ২৯ ফ্রেব্রুয়ারি তারিখে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম বাতিল করা হয়। রিট পিটিশন নং-৩৩২৬/২০২০ এর আদেশ মোতাবেক বেসরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা অনুসরণ করে, ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ফলপ্রকাশসহ বিধি মোতাবেক ভর্তি করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়া হল।’

এদিকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অভিভাবক ফোরাম ভর্তি কার্যক্রমের সমালোচনা করেছে। ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আতিকুর রহমান টুলু বিবৃতিতে বলেন, শিক্ষাবর্ষের শেষে করোনা মহামারিতে যখন সব স্কুল-কলেজ বন্ধ রয়েছে, তখন অক্টোবর শেষে বিভিন্ন শ্রেণিতে ছাত্রী ভর্তি করানো সুস্পষ্টভাবে ভর্তি নীতিমালার লঙ্ঘন।


সর্বশেষ সংবাদ