২৫ আগস্ট ২০২০, ০৮:৫২

কৌশলে টিউশন ফি আদায় স্কুলের, বিপাকে অভিভাবকরা

  © ফাইল ফটো

করোনার কারণে পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর আগে কয়েক দফায় ছুটি বাড়িয়ে তা করা হয়েছে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এই সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও টিউশন ফি আদায়ে নানা কৌশল অবলম্বন করছে রাজধানীর বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।

শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রশ্ন-খাতা, সিলেবাস দেওয়ার নামে স্কুলে ডেকে আনছেন অভিভাবকদের। এরই ছলে এগুলো নিতে হলে টিউশন ফি পরিশোধ করতে হবে বলে জানাচ্ছেন প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। এতে অভিভাবকরা ধার-দেনা করে হলেও টিউশন ফি দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

এদিকে চলতি মাসের শেষেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে মিরপুরের গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউট মাসের শুরুর দিকে এসএমএস পাঠায় অভিভাবকদের। এতে বলা হয়, বাসায় বসেই পরীক্ষা হবে কিন্তু প্রশ্ন ও খাতা সংগ্রহের জন্য যেতে হবে প্রতিষ্ঠানে। তবে এর আগে জুলাই মাস পর্যন্ত বেতন পরিশোধ করতে বলা হয়।

এছাড়াও পরীক্ষার আগে সব রকম বকেয়া ফি পরিশোধ করতে হবে বলেও ওই বার্তায় স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়।

অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের বেতন পরিশোধের পর গত রবিবার আরেকটি এসএমএসে জানানো হয়, ২৪ আগস্ট সোমবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত পরীক্ষার প্রশ্ন দেওয়া হবে। এ জন্য আগস্ট পর্যন্ত সব রকম বকেয়া পরিশোধের রসিদ দেখাতে হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিভাবক বলেন, ‘অনলাইন ক্লাস তেমনভাবে না হলেও পরীক্ষার কথা বলে আমাদের চাপ দিয়ে বেতন আদায় করা হলো। আর পরীক্ষা হবে অনলাইনে কিন্তু প্রশ্ন নিতে আসতে হয়েছে স্কুলে, এটা কোন ধরনের নিয়ম। বর্তমান এই পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের স্কুলে জড়ো করে সবাইকেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলল। এ ছাড়া স্কুল থেকে খাতা দেওয়ার কথা বলা হলেও সেটা শেষ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।’

তবে এ ব্যাপারে গার্লস আইডিয়ালের অধ্যক্ষ নাছরিন নাহারকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি তা ধরেননি। অফিসে ফোন দেওয়া হলেও তাঁরা অধ্যক্ষকে দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এছাড়াও গত ২০ আগস্টের মধ্যে এপ্রিল, মে ও জুন মাসের বেতন পরিশোধের নোটিশ দিয়েছিল রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের বেতন পরিশোধের জন্য বারবার এসএমএস দিচ্ছে। এমনি ভাবেই রাজধানীর অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের টিউশন ফি পরিশোধ করার জন্য এসএমএস, ওয়েবসাইটসহ ক্লাসের গ্রুপে বারবার নোটিশে প্রকাশ করছে।

অভিভাবকরা বলছেন, করোনাকালীন এই সময়ের মধ্যে শিক্ষক-কর্মচারীর বেতনের বাইরে স্কুলগুলোর কোনো খরচ নেই। বিদ্যুৎ, পানির বিলসহ অস্থায়ী যেসব খরচ ছিল সেগুলো হচ্ছে না। এরপর টিউশন ফিতে কোনো প্রকার ছাড় দিচ্ছে না স্কুলগুলো। এমনকি যাঁরা প্রকৃতপক্ষে খুবই সমস্যায় আছেন তাঁদের ক্ষেত্রেও ভাবছে না স্কুল কর্তৃপক্ষ।

এর আগে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে এক আদেশে টিউশন ফি আদায়ে চাপ প্রয়োগ না করার জন্য প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিলে বা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে বকেয়াসহ মাসিক বেতন আদায় করতে বলা হয় আদেশে।

কিন্তু স্কুলগুলো এই নির্দেশনা আমলেই নিচ্ছে না। অনেক স্কুলের ফান্ডে কোটি কোটি টাকা থাকার পরও তারা কোনো ধরনের ছাড় দিচ্ছে না।

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠানই টিউশন ফির জন্য চাপ দিচ্ছে। কেউ কেউ আবার অগ্রিম বেতনও নিচ্ছে। এটা একেবারেই অমানবিক। আমরা চলতি বছরের ছয় মাসের বেতন মওকুফ বা পুরো বছরের ৫০ শতাংশ বেতন কমানোর জন্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু এখনো কোনো সাড়া পাইনি।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেনে এ বিষয়ে জানান, ‘করোনাকালীন পরিস্থিতিতে টিউশন ফি নিয়ে আমরা একটি নির্দেশনা তৈরির কাজ শুরু করেছি। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি রিট আবেদন হওয়ায় সেটা নিষ্পত্তির অপেক্ষা করছি। আদালত যদি কোনো আদেশ দেন সেটা সমন্বয় করেই আমরা শিগগিরই এ ব্যাপারে নির্দেশনা জারি করব।’