বাবার কোলে চড়ে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে ফারজানা
ফারজানা আক্তার মনির বয়স ১৫ বছর ৩ মাস হলেও বাবা-মায়ের কাছে এখনো শিশু। শারীরিক প্রতিবন্ধিতার কারণে একা চলতে কষ্ট হয় তার। তবে তা এগিয়ে চলার জন্য তার সামনে বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারেনি।
ফারজানার পরীক্ষাকেন্দ্র নাগেশ্বরী আদর্শ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় তাদের বাড়ি থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে। আর উত্তর পনতাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফরমান আলী। শিক্ষকতার ফাঁকে মেয়েকে কোলে করে নিয়ে যান পরীক্ষার হলে।
ফারজানা বলে, ‘আমি উচ্চশিক্ষা লাভ করতে চাই। পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করতে চাই। সবাই, বিশেষ করে বাবা-মা ও সহপাঠী-শিক্ষকরা যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। কষ্ট হয়, তবে কষ্ট না করলে জীবনের সফলতা কীভাবে আসবে!’
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার গাগলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ফারজানা এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। তার স্বপ্ন উচ্চশিক্ষা নিয়ে চাকরি করা। একই স্বপ্ন তার স্কুলশিক্ষক বাবা ফরমান আলী ও মা রাবেয়া বেগম।
ফরমান আলী বলেন, ‘একটাই মেয়ে আমাদের, অনেক আদরের। মেয়েটা সবার মতো স্বাভাবিক না। উচ্চতা ৩৩ ইঞ্চি, চলতেও কষ্ট হয়।শিশুর মতো করেই লালন-পালন করতে হয়। গোসল করিয়ে দিতে হয়, খাবার তুলে খাওয়াতে হয়।’
তিনি জানান, ফারজানার সব কাজ ওর মা করে দেয়। একা একা ভালো করে হাঁটতেও পারে না। প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও পড়ালেখার ইচ্ছাটা প্রবল। জেএসসিতে ‘এ’ গ্রেড পেয়ে পাস করে। পড়ালেখায় ওর যে আগ্রহ, তাতে যতদিন চাইবে পড়াশুনা করবে।
মা রাবেয়া বেগম বলেন, ‘ওর প্রতি আদর-ভালোবাসার কমতি নেই। ওর যত্ন করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কোনো কাজ করে দিতে না পারলে খারাপ লাগে। মা হিসেবে দুশ্চিন্তাতো থাকেই!
নাগেশ্বরী আদর্শ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও এসএসসি কেন্দ্রসচিব মোশারফ হোসেন বলেন, ‘যতবার হল পরিদর্শনে গিয়েছি ততবারই দেখেছি মেয়েটি মনোযোগের সঙ্গে পরীক্ষা দিচ্ছে। সে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করবে, এটা আমাদের বিশ্বাস।’