টাকার জন্য পরীক্ষা অনিশ্চিত, শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে প্রবেশপত্র পেল শিক্ষার্থী
মাত্র ১০ হাজার টাকার জন্য পরীক্ষা অনিশ্চিত হওয়া শিক্ষার্থীকে প্রবেশপত্র প্রদান করে পরীক্ষা নিশ্চিতের নির্দেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি। শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে প্রবেশপত্র পেয়ে জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে বাড্ডা হাইস্কুলের মাতৃহীন অসচ্ছল পরীক্ষার্থী ডানা চিসিম।
শনিবার (০২ নভেম্বর) সকালে সাভার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা চিসিমকে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে তার পরীক্ষা দেয়া নিশ্চিত করেন।
এর আগে টাকা দিতে না পারায় ওই শিক্ষার্থীর প্রবেশপত্র দিচ্ছিলো না স্কুলপ্রশাসন। বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির নজরে আসলে তিনি চিসিমের পরীক্ষা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবুল খায়ের বলেন, মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশে সাভারের উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোছা. কামরুননাহার তার প্রবেশপত্র বুঝিয়ে দিয়ে তার পরীক্ষা দেয়া নিশ্চিত করেন।
এ বিষয়ে সাভারের উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. কামরুন্নাহার বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশ পেয়েছি। শনিবার সকালেই পরীক্ষার্থীকে বাসা থেকে নিয়ে পরীক্ষার হলে দিয়ে এসেছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় যখন ডানা চিসিমের বাবা প্রবেশপত্র না দেয়ার অভিযোগটি নিয়ে ইউএনওর কাছে যান তখনই খবরটা প্রথম জানতে পারি। এরপর স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করি। ইউএনও সাহেবও চেষ্টা করেন। গুড সয়েল কিন্ডার গার্টেনের একজন শিক্ষককে পাই রাত নয়টার দিকে। তাকে যখন চার্জ করি কেন টাকার জন্য প্রবেশপত্র আটকে রেখেছেন? তখন ওই শিক্ষক জানান, ‘টাকার জন্য নয়, ছেলেটি বেয়াদবি করেছিল।’ কি বেয়াদবি করেছে? এবং একটি শিশুকে বেয়াদবির জন্য পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত করবেন?
শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘রাত বারোটার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা টেলিফোনে শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশের কথা জানতে পারি।’
জানা যায়, সাভার পৌরসভা এলাকার বাড্ডা হাইস্কুল থেকে পরীক্ষর জন্য ফরম ফিলাপ করেছে ডানা চিসিম। বাড্ডা স্কুলের কেউ প্রবেশপত্র নিয়ে কথা বলতে রাজী নয়। তারা দায় চাপাচ্ছে গুড সয়েল স্কুলের ওপর।
জানা যায়, দশ হাজার টাকার জন্য ডানা চিসিমের জেএসসি পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র আটকে দেয় স্কুল। এতে তার পরীক্ষায় অংশ নেয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে মাতৃহীন এ পরীক্ষার্থীর। এ অভিযোগ সাভার পৌরসভা এলাকার বাড্ডা হাইস্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। শুক্রবার রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রবেশপত্র দেয়া হয়নি শিশুটিকে। তার অভিভাবকরা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে যোগাযোগ করলেও কোনো লাভ হয়নি। কোনও উপায় না দেখে দৈনিক শিক্ষার কাছে টেলিফোনে অভিযোগ করেন ছাত্রটির অভিভাবক।
তিনি জানান, শনিবার সকাল দশটায় ডানা চিসিমের জেএসসি পরীক্ষা শুরু। উপজাতি হওয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষ আরও অবহেলা করছে ছাত্রটির প্রতি। অথচ এই বাড্ডা হাইস্কুল থেকে এবার এক হাজার ছয়শ ছত্রিশ জন পরীক্ষা দিচ্ছে। সারাদেশ থেকে ছাত্র কুড়িয়ে পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করায় বাড্ডা হাইস্কুল। কোটি কোটি টাকা তাদের। অথচ মাত্র দশ হাজার টাকার জন্য প্রবেশপত্র আটকে দিলো।
অভিভাবক আরও জানান, ডানা চিসিম মূলত গুড সয়েল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল নামের একটি কিন্ডার গার্টেনের শিক্ষার্থী। কিন্তু কিন্ডার গার্টেনের নিবন্ধন না থাকায় সাভারেরই বাড্ডা হাইস্কুল থেকে ফরম ফিলাপ করেছে। গুড সয়েল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ একজন কোরিয়ান নারী। তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও পারা যায়নি। তবে, গুড সয়েলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি জন বাড়ৈ বলেছেন, ‘টাকার জন্য নয়, বেয়াদবি করার অপরাধে প্রবেশপত্র আটকে দেয়া হয়েছে। কি বেয়াদবি করেছে তা বলতে চাননি তিনি। কার সাথে বেয়াদবি করেছে? বেয়াদবির শাস্তি কি পরীক্ষা বন্ধ হতে পারে? এসব প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি বাড়ৈ।
সাভার এলাকার কয়েকজন অভিভাবক জানান, বিশ/ত্রিশ হাজার টাকার বিনিময়ে জেএসসি/এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করার সুযোগ দেয় বাড্ডা হাইস্কুল। গত এসএসসি পরীক্ষায় একজন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ঘুষ দিয়ে এবার একটি শাখা এমপিওভুক্তও করা হয়েছে বাড্ডা স্কুলের। দুটি মাত্র ভবন এই স্কুলের। অথচ পরীক্ষার সময় এত ছাত্র কীভাবে কোথা থেকে আসে সেই প্রশ্ন তোলে না ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।
তবে, শুক্রবার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে বাড্ডা হাইস্কুলের একজন শিক্ষক নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, মাতৃহীন ডানা চিসিম মূলত পিসির কাছে বড় হয়। বাবা আর্থিকভাবে অসচ্ছল।